কুমিল্লার বরুড়ায় তাবিজ বিক্রির নামে মসজিদের ইমামের বিরোদ্ধে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
সাকিব আল হেলাল(কুমিল্লা)
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ৩ নং খোশবাস ইউনিয়নের বগাবাড়িয়া দক্ষিন পাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমামের বিরোদ্ধে তাবিজ বিক্রির নামে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, সে গত এপ্রিল মাসে বগাবাড়িয়া দক্ষিন পাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগদান করেন।মসজিদ কতৃপক্ষ তাহার ঠিকানা জানতে চাইলে সে জানায় তাহার নাম হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ।তার বাড়ি বরিশালের ঝাঁলকাঠি বলে জানান।
মসজিদ কতৃপক্ষ তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে বললে সে বিভিন্ন বাহানা করে পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেয়নি।এভাবে সে অনেক দিন উক্ত মসজিদে ইমামতি করেন।
এভাবে দুই মাস কেটে যায় কিন্তু সে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় না।সে গ্রামের বিভিন্ন অসহায় মানুষদের খোঁজে বের করে শুরু করে তাবিজের নামে প্রতারনা।গ্রামের সহজ সরল মহিলারাও কোন কিছু জানতে না চেয়ে তাহার থেকে চড়া দামে তাবিজ ক্রয় করে।যা মসজিদ কমিটি জানে না।এভাবে গ্রামের প্রতিটি ভুক্তভোগী পরিবার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত রমজান মাসে নিজেকে অসহায় গরিব বলে মসজিদ কমিটি থেকেও মোটা অংকের টাকা নেন এই ইমাম সাহেব।মসজিদ কমিটি বিভিন্নবাবদ তাকে দেন নগদ ৪০,০০০ টাকা।
প্রতারনার শিকার ভোক্তভোগীরা দৈনিক আজকের কুমিল্লাকে বলেন,আমাদের পরিবারের দুর্বলতা জেনে বাড়িতে ঢুকে তিনি বলেন তিনি অনেক বড় কবিরাজ ওনার তাবিজে কাজ হয় তাই আমাদের থেকে নগদ টাকা নিয়ে যায় এবং বলে পরে তাবিজ দিচ্ছি।
এভাবে তিনি প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক(১,৫০,০০০) টাকা হাতিয়ে নিয়ে রমজানের ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে ফিরে আসেন নি।
তাবিজের নামে বগাবাড়িয়া গ্রামের ভোক্তভোগী বলেন ,আমরা জানতাম না তিনি তাবিজ দেন।তিনি নিজেই বাড়িতে এসে আমাদের সব সমস্যা সমধান করে দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।আমরা বিশ্বাস করে তাকে টাকা দেই।কিন্তু তার তাবিজের কোন ফল পাই নাই।পরে শুনি তিনি তাবিজের নামে গ্রামের অনেকের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে”।
মসজিদের ইমামের প্রতারনার শিকার ব্যাক্তিরা হলেন,মোঃ আব্দুল খালেক,আবুল হাশেম,আলীআজ্জম,হাকিম,মতিন কবিরাজ,ইসমাঈল,জাফরের স্ত্রী,তফাজ্জলের স্ত্রী,কামরুলের মা,আবুল কালাম,আব্দুর রশিদ ,রবিউল্লাহ,দুলাল,ছফিউল্লাহ,আলী মিয়া,সাদেক মিয়া,ফজলুল হকসহ অসংখ্যে মানুষ থেকে তাবিজ বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কারোর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি করে টাকা নিয়েছে।কারো কারো কাছ থেকে বিশ হাজার টাকার বেশিও নিয়েছে বলে ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
হাফেজ মাসুম বিল্লাহর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দৈনিক আজকের কুমিল্লাকে বলেন,আমি আগে তাবিজ বিক্রি করতাম তবে বর্তমানে তা আর করি না ।আমি বর্তমানে ঢাকার গাবতলীতে ব্যাবসায় করি।কৌশলে গাবতলীর কোথায় ব্যাবসায় করেন জানলে চাইলে প্রতিবেদককে জানান গাবতলীর শাহী মসজিদের সাথে আছেন বলে জানান”।
পাশ্ববর্তী প্রতিবেশি মসজিদের ইমাম মাওলানা হেলাল বলেন,সে একজন প্রতারক,সে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম ধারন করে প্রতারনা করেছেন বলে আমরা শুনেছি।প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার ব্যাবসা।এ নিয়ে সতেরটি মসজিদে ইমামতি করেছে বলে শুনেছি।আমার জানা মতে তার নাম গুলো হলো,হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ,হাফেজ আব্দুল্লাহ,হাফেজ হেলাল উদ্দিনসহ আরো অনেক নাম ব্যাবহারসহ একাধিক মোবাইল ব্যাবহার করে মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছেন”।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি হাজী আব্দুর ছাত্তার বলেন,আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি না রেখে ।আল্লাহর কাছে শোকরিয়া এ ইমাম সাহেব বড় কোন দুঘটনা ঘটায় নি।তবে আমি সকলের উদ্দেশ্য একটা কথা বলবো আমাদের মত এ ধরনের ভুল যাতে কেউ না করে।যাকে আপনি মসজিদ কিংবা বাসায় রাখেন কমপক্ষে তার পরিচয় জেনে রাখবেন। তা না হলে বড় কোন বিপদের সম্মূখিন হতে হবে।আমি আমাদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই”।