লালমনিরহাটের ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে দুস্থ নারীদের বিক্ষোভ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সেলাই প্রশিক্ষণের নামে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দুস্থ বেকার নারীরা।
মঙ্গলবার(৭ আগষ্ট) বিকেলে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার দাবিতে উপজেলা পরিষদ ভাইচ চেয়ারম্যান ও নারী ফোরামের সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন ৮ নারী।
বিক্ষুব্ধ নারীরা হলেন, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের রাশেদা বেগম, সীমানা বেগম, সুমনা খাতুন, রশিদা বেগম, মিশরী খাতুন,শেফালি ও স্বপ্না বেগম।
নারীরা জানান, দুস্থ বেকার এসব নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে নিজের স্বালম্বী করার জন্য আদিতমারী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার বরাবরে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আবেদনকারী ৮ নারী সমাজ কল্যান প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের ডিও লেটার সংগ্রহ করেন।
এরপর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নুরেলা আক্তারের কাছে গেলে তিনি জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে তারা জনপ্রতি দেড় হাজার হারে টাকা দেন। বাকী টাকা দিতে না পারায় ৫ মাসেও তাদের নাম অন্তভুক্ত করা হয়নি। ঘুষের সেই টাকা ফেরতের দাবি করলেও আজ কাল বলে তাদের কালক্ষেপন করেন।
অবশেষে মঙ্গলবার(৭ আগষ্ট) তারা আবারো টাকা ফেরত চাইতে গেলে অফিস থেকে উঠে যান পল্লী উন্নয়ন অফিসার নুরেলা আক্তার।
বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ওই ৮ নারী উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান রোজিনা আক্তার সম্পার সহযোগিতা কামনা করলে তার পরামর্শে নারীরা টাকা আদায়ের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিকে ওই পল্লী উন্নয়ন অফিসারের বিরুদ্ধে অর্থ আতœসাতের আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন একই প্রকল্পের ১২ তম ব্যাচের গ্রামীন ইলেকট্রিশিয়ান ট্রেডের প্রশিক্ষনার্থী আতিয়ার রহমান। ওই প্রশিক্ষণে তিনি অনুপস্থিত না থেকেও ৬০ দিনের মধ্যে প্রায় ২৩ দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে তার ভাতার ৫ হাজার ৭৫০ টাকা কেটে নিয়ে পল্লী উন্নয়ন অফিসার নুরেলা আক্তার আতœসাৎ করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
একই অভিযোগ ওই ব্যাচের ইলিয়াছ আলী ও আব্দুর রশিদের। তাদেরকেও অহেতুক অনুপস্থিত দেখিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে।
১২ তম ব্যাচের প্রশিক্ষনার্থী আতিয়ার রহমান জানান, জনপ্রতি ২/৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে প্রশিক্ষণে নাম অন্তভুক্ত করেন। শুধু তারই নয় সকল ট্রেডের সকলকেই ৬০ দিনের ৬/৮ দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে ভাতার টাকা কেটে নিয়ে আতœসাৎ করেন নুরেলা আক্তার। প্রতিবাদ করলে প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়ার হুমকী দেয়।
প্রশিক্ষনার্থী মনিরুজ্জামান নয়ন জানান, ইলেকট্রিশিয়ান ট্রেডে সমাপনি দিনে ট্রেডের যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ জনপ্রতি ৫/৮ শত টাকা অতিরিক্ত কেটে নেন নুরেলা আক্তার।
আমিনা বেগম ও রশিদা বেগম জানান, প্রশিক্ষন দিতে মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে গেলেও ওই অফিসার ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না হলে মন্ত্রীর টেলিফোন দিয়েও না কি কোন কাজ নেই। তাই তারা দেড় হাজার হারে টাকা দিয়েছেন। বাকী টাকা না দেয়ায় তাদের নাম অন্তভুক্ত করা হয়নি।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, গ্রামীন দুস্থ ও বেকার জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে সরকার উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করন প্রকল্প চালু করে। সেলাই, শতরঞ্জি, এম্বুডারী ও পুরুষদের জন্য গ্রামীন ইলেকট্রিশিয়ান মোট ৪টি ট্রেডে ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রতিটি ব্যাচের ৩৬ জন নারী ও ১২জন পুরুষ প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। প্রশিক্ষনার্থীদের যাতায়তের জন্য জনপ্রতি ২৫০ টাকা হারে দৈনিক ভাতা প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত ১২টি ব্যাচ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক পল্লী উন্নয়ন অফিসের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না তাদের অফিসার নুরেলা আক্তার। তার মুখের ভাষা অশোভন। প্রতিবাদ করলে বিভাগিয় ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী দেন।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নুরেলা আক্তার প্রশিক্ষনার্থীদের হাজিরা খাতা দেখাতে অপরাগতা প্রকাশ করে জানান, প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে অভিযোগ দিয়ে লাভ কি। নাম অন্তভুক্ত করতে কোন টাকা দিতে হয় না বলেও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান উপজেলা নারী ফোরামের সভাপতি রোজিনা আক্তার সম্পা জানান, এসব নারী প্রশিক্ষনের জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলেন। মন্ত্রী মহোদয় তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তাদের নাম অন্তভুক্ত হয়নি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, ওই ৮ নারী স্বাক্ষাত করেও বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটার উপেক্ষিতসহ তাদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।