সারিয়াকান্দিতে বন্যার অবনতি
তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি (বগুড়া)
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঈদুল আজহা থেকে আজ অবদি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার কর্ণিবাড়ী, চন্দনবাইশা, সদর, হাটশেরপুর, চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ত্রিশটি গ্রাম এবং একই সাথে পানি বন্দি হয়ে পরেছে ৫শতাধিক পরিবার। তলিয়ে গেছে কমিনিউটি ক্লিনিক, ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট ও পয়নিস্কাশন সমস্যা। দীর্ঘ সময়ের বন্যায় এসব এলাকার লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমাড়ি গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়িতে দুই-আড়াই মাস যাবৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বাল বাচ্চা নিয়ে কুতুবপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছি। কুতুবপুর ইউনিয়নের আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকেই জানান, এবারের বন্যায় আমাদের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রোজগারের পথ।
পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের জীবনযাপন করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। একই গ্রামের রুবেল মন্ডল নামের এক যুবক অভিযোগ তুলে বলেন, বন্যার সময় সরকার বন্যা কবলিতাদের যথেষ্ট সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। কিন্তু মেম্বার-চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের স্বজনপ্রতির কারণে সুষ্ঠুভাবে বন্টন হয়না।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল আলম বলেন, ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের আওতায় থাকা কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের নিজাম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জি¦ত হলেও বিমানবন্দর এলাকায় নিজস্ব নতুন ভবনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদুজ্জামান জানানের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ইতিমধ্যে চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার জন কৃষকের ৩৭০ হেক্টর রোপা আমন, ৫০ হেক্টর বীজতলা, ১০০ হেক্টর মাসকালাই, ২৫ হেক্টর মরিচের ক্ষতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ৭০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী সদর ইউনিয়নের নিজবাটিয়া, কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া, চকরতিনাথ, নয়াপাড়া সহ বিভিন্ন চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব চরে থাকা বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ফসলের ক্ষতি আরে বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। অপরদিকে চন্দনবাইশা ইউপি চেয়ারম্যন শাহাদত হোসেন দুলাল এবং চালুয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যন শওকত আলী এক সাক্ষাৎকারে জানান, বন্যা কবলিত পরিবারগুলো বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রসাশক মহোদয় বন্যা কবলিত এলাকা পরির্দশন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন। বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।