গাইবান্ধায় উৎপাদন খরচ না পেয়ে হতাশ, ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক!
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলার হাটবাজার গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ধান বিক্রি করে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। আবার বেশি ক্ষতি গ্রস্থ’ হচ্ছে বর্গা চাষিরা। তারা জমির মালিককে জমি বর্গার টাকা ও ধান পরিশোধ করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অনেক বর্গা চাষি জমির মালিককে জমি ফেরত দিচ্ছেন।
আগ্রহ হারাচ্ছে ধান চাষ করতে। ধান চাষ বাদ দিয়ে তারা চায়ের দোকান, ইজি বাইক চালাচ্ছে। কিন্তু এত লোকসান খেতে চাচ্ছে না। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ বলছে, এ জেলায় ২০১৯’সালে আবাদ করা হয় ৬৪’হাজার ৮’শ ৯২হেক্টর জমিতে। বর্তমানে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। তাতে করে কৃষকরা নাকি ধান বিক্রিতে ভাল দাম পাচ্ছে না। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আজিবার বলেন, কয়েক বছর ৬০’শতক জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে আসছি।
যে পরিমাান ধান উৎপাদন হয়, জমির মালিকের টাকা পরিশোধ করার পর যা থাকে তা খাওয়া চলে। কয়েক মৌসুমে ধান চাষ করে মালিককে লিজের টাকা দেয়ার পর উৎপাদন খরচই ওঠেনি। বাধ্য হয়ে লিজের জমি ফেরত দিয়ে অন্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাকপালা গ্রামের কৃষক আনাস উদ্দিন জানান, এক মণ ধান উৎপাদন করতে আমদের প্রায় ৮০০ টাকা খরচ হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০/৬৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি মণ ধানে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১৫০/২০০ টাকা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হাতিয়াদহ গ্রামের কৃষক ছামসু মিয়া বলেন,এক মণ ধান বিক্রি করে আজকাল এক কেজি মাংসও কেনা যায় না গত সোমবার সকালে এক মণ বোরো ধান ৫৫০ টাকায় বিক্রি করে বালুয়া বাজারে গিয়ে দেখি এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। বাধ্য হয়ে মাংস না নিয়ে খালি হাতেই বাড়িতে ফিরে আসি।
গাইবান্ধা জেলা ৭ উপজেলা বিভিন্ন হাট বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সদ্য সংগৃহীত নতুন ধান কেনা-বেচা হচ্ছে দেখতে পাওয়া যায়। নতুন বোরো হাইব্রিড মোটা ধান প্রতি মণ ৫০০ টাকা , ব্রি ২৯ ধান ৫০০/৫৫০ টাকা ও ব্রি ২৮ ধান ৫৫০/৬০০টাকার মধ্যে বেচা-কেনা হচ্ছে।
একদিকে ইটের ভাটার ধোয়ায় ধানে চিটা ও পোকার আক্রমণে ধানের ফলন কম অন্যদিকে বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকদের বুকে চাপা কান্না। তারা রীতিমতো হতাশ। বর্তমানে বর্গা চাষিরা ধানের আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারার কারণে তারা আর ধান চাষ করবে না।
যেহেতু খরচের তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কম। জমির মালিক কে চুক্তির টাকা বা ধান দিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচের টাকা ও থাকছে না তাদের। যে কারণে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। সাধারন কৃষকরা ও ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা বলছে এ লোকসান দিয়ে ধানচাষ করা সম্ভব না।
ফলে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এ বিষয়ে গাইবান্ধার সচেতন মহল বলছে ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনালি আঁশ পাটের মতো ধান চাষও কমে যাবে, দেশ হয়ে পড়বে আমদানি নির্ভর। তখন জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।