যশোর নার্সিং ইনষ্টিটিউটের এ যাবত দূর্নীতির সাক্ষী সব খবর ফাঁস!
ডি এইচ দিলসান :
যশোর নার্সিং ইনস্টিটিউটের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ মোছাঃ সেলিনা ইয়াসমিন তার মসনদ ঠিক রাখতে ও তদন্ত কমিটির চোখকে ফাঁকি দিতে নতুন করে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নার্সিং ইনস্টিটিউটে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে যোগদান বিগত ১১ সাল থেকে যে সব রেজিষ্ট্রার রয়েছে সেগুলি নতুন করে করা হয়েছে।
দূর্নীতির কালের সাক্ষী পুরাতন খাতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যাতে পুনঃভর্তি ও ভর্তি জালিয়াতিসহ অসংখ্য দূর্নীতির প্রমান ছিল। গত এক সপ্তাহ যাবত ইনস্টিটিউটের দূর্নীতির সহযোগী সম্প্রতি প্রেষনে আসা উচ্চমান সহকারী আ ক মোঃ গোলাম কাদের,অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম,এমএলএসএস আবু বক্কার বিগত ১১ সাল থেকে এ যাবত নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মাষ্টারোল রেজিষ্ট্রারসহ সকল রেজিষ্ট্রার নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।
তদন্ত কমিটির সামনে আর দূর্নীতির প্রমান থাকা রেজিষ্ট্রার উপস্থাপন করা হচ্ছেনা। এ তথ্য খোদ নার্সিং ইনস্টিটিউটের একাধিক সূত্রের।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের একাধিক সূত্রগুলো জানিয়েছেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঢাকা মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) তন্দ্রা শিকদারের নির্দেশে গত ১৫ মে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হচ্ছেন,নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঢাকা পরিচালক (শিক্ষা) জাহেরা খাতুন ও সদস্য নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঢাকা নার্সিং অফিসার ও ডিপিএম, মোঃ খোরশেদ আলম। যশোর নার্সিং ইনস্টিটিউটের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ মোছাঃ সেলিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে যশোর নার্সিং ইনষ্টিটিউটের ভর্তি জালিয়াতি,পূনঃ ভর্তি জালিয়াতি,অনিয়মসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রেরিত অভিযোগ সমূহ সরেজমিনে তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটিকে আগামী আদেশের ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগটি তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। মোছাঃ সেলিনা ইয়াসমিন তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির তদন্ত শুনে তিনি ছুটে যান ঢাকায়। একদিনের জন্য বিমানের প্রথম ফ্লাইটে গিয়ে দ্বিতীয় ফ্লাইটে ফিরে আসেন কর্মস্থলে। ফিরে এসে তিনি ইনচার্জ হিসেবে বিগত ১১ সাল থেকে যে রেজিষ্ট্রার গুলিতে তার দূর্নীতির প্রমান রয়েছে সেই রেজিষ্ট্রারসহ সকল রেজিষ্ট্রার নতুন করে সৃষ্টির নির্দেশ দেন তার অধীনস্থ অফিস সহকারীদের।
তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ও নির্দেশে ২০১৯ সালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারী ১ম বর্ষের ৭৯ জন ছাত্রীদের ষ্টুডেন্ট রেজিষ্ট্রেশনের ফরম ও ফি প্রেরণের যে তালিকা বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারী কাউন্সিল বরাবর পাঠানো হয়েছিল সেই তালিকার মধ্যে থেকে ৪জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি জালিয়াতি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভর্তি করেছেন তাদেরকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তারা হচ্ছে, ভর্তি রোল নং ৪৩২১৪৩ প্রেরণকৃত সিরিয়াল নং ৩৯ মনিরা খাতুন গ্রেড স্কোর ২৫, পিতা মোঃ জয়নাল মোল্লা মাতা মোছাঃ কমলা খাতুন । ভর্তি রোল নং ৪৩০১০৫ সিরিয়াল নং ৬১ আফসানা মিমি লিমা গ্রেড স্কোর ৩৮,পিতা সানোয়ার হোসেন,মাতা ফিরোজা খাতুন। ভর্তি রোল নং ৪১০২১৮ সিরিয়াল নং ৭০ শারমিন আক্তার গ্রেড স্কোর ৪৩,পিতা মনসুর আলী,মাতা ঝরনা খাতুন ও ভর্তি রোল নং ৪৩২৩০৫ সিরিয়াল নং ৭৬ ফাতেমা খাতুন গ্রেড স্কোর ৪৯,পিতা মোঃ মনিরুজ্জামান ও মাতা মোছাঃ রেহেনা বেগম।
মোসাঃ সেলিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চলতি বছরের বিগত ১০ ফেব্রæয়ারী কাউন্সিল বরাবর ডিডি নং-ডিডি এ ৩১২৭৮৬৩/০২ দড়াটানা সড়ক শাখা যশোর থেকে প্রেরণ কৃত ৭৯জন শিক্ষার্থীর ষ্টুডেন্ট রেজিষ্ট্রেশনের ফরম ও ফি খতিয়ে দেখলে বেরিয়ে আসবে তার জারিজুরি।
এভাবে বিগত ১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে সব ভর্তি জালিয়াতি করেছেন সেগুলি রেজিষ্ট্রার তিনি নতুন করেছেন দূর্নীতির সহযোগীদের মাধ্যমে। পুরাতন রেজিষ্ট্রার এক নজরে দেখলে বোঝা যায়। পুরাতন বছরের রেজিষ্ট্রার নতুন করলে তদন্ত কমিটির চোখে ধরা পড়বেতো এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ নার্সিং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। রাতারাতি নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিগত ১১ সাল থেকে এ যাবত মাষ্টার রোল কল,পুরাতন হাজিরা রেজিষ্ট্রার খাতা,ভর্তি হাজিরা রেজিষ্ট্রার,রেজিষ্টেশন বিতরণ রেজিষ্ট্রারসহ সকল রেজিষ্ট্রার ব্যবহৃত গায়েব করে নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে।
তাছাড়া,বিগত ১৪ সালের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব শিক্ষার্থী উর্ত্তীণ হয়েছেন। তাদেরকে যে মার্কশীট প্রদান করেছেন তাতে সকলকে এ গ্রেড দিয়েছেন। অথচ মূল রেজাল্ট শীটে রয়েছে বি,সি,ডি গ্রেডসহ প্রাপ্ত গ্রেড। নিজ ক্ষমতাবলে মাথাপিছু কখনও ১০ হাজার আবার কখনও ৮ হাজার টাকা নিয়ে গোলাম কাদের এর সহযোগীতায় এ গ্রেড প্রাপ্ত মার্কশীট তৈরী করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির আগমন উপলক্ষে সেলিনা ইয়াসমিন তার দূর্নীতি কর্মকান্ড তার দূর্নীতির সাক্ষী সহযোগীদের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলে সম্পূর্ন প্রস্তুত অবস্থা সৃষ্টি করেছেন।
তাছাড়া, তিনি ইনস্টিটিউটে থাকা শিক্ষার্থীদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন,তদন্ত কমিটির সামনে তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে তিনি হয়তো দুই এক মাসের জন্য অন্যত্র বদলী হবেন। সেখান থেকে পুনরায় এখানে আসলে কি অবস্থা করা হবে এমনভাবে হুমকী ধামকী দিচ্ছেন।
তাই অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীদের তিনি তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য হুমকী ধামকী দিচ্ছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছেন।সূত্রগুলো আরো জানিয়েছেন,বুধবার ২৯ মে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে যশোর নার্সিং ইনস্টিটিউটে আসছেন এমন খবর নিশ্চিত জেনে দূর্নীতির সকল পুরাতন রেজিষ্ট্রার সরিয়ে ফেলে নতুন রেজিষ্ট্রার সৃষ্টি করা হয়েছে যা তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থাপনের নাটক করা হতে পারে বলে সূত্রগুলো আশংকা প্রকাশ করেছেন।
তাই অবিলম্বে সেলিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরকারের অন্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করালে বিগত ১১ সাল থেকে তিনি দূর্নীতির মাধ্যমে যে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন তা বেরিয়ে আসবে। তাতে সরকারের দূর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থা সুদৃঢ হবে বলে নার্সিং সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।