পাগল হত্যা মামলায় যুবদল নেতা কারাগারে।পুলিশী নির্যাতনের ভয়ংকর অভিযোগ।
এম.ইউ মাহিম, জেলা প্রতিনিধি ভোলা Channel 4TV : দ্বীপজেলা ভোলার লালমোহন উপজেলা যুবদলের প্রভাবশালী নেতা উপজেলা যুবদল আহবায়ক ও জেলা যুবদলের অন্যতম সদস্য শাহিনুল ইসলাম কবির হাওলাদারকে ঈদ উল ফিতরের পরের দিন ২৭-০৬-১৭ ইং তারিখ সকাল ১০:০০ টার সময় লালমোহন উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র এনায়েত কবীরের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময়ে লালমোহন থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করার পর এক পাগল হত্যা মামলার অজ্ঞাত আসামী হিসেবে শারীরিক নির্যাতন করে ভোলা কারাগারে প্রেরন করেছে লালমোহন থানা পুলিশ। সুনির্দিস্ট কোন মামলার আসামী কিংবা কোন মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা,
ওয়ারেন্ট না থাকলেও আকস্মিক পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে যুবদল নেতা শাহিনুল ইসলাম কবির হাওলাদারকে ভোলা কারাগারে প্রেরন করায় তাহার পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপি,যুবদল অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
জানা যায় কবির হাওলাদারের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত যে সব মামলা রয়েছে সব কটিতেই তিনি জামিনে রয়েছেন।কয়েক মাস পুর্বেও লালমোহন থানা পুলিশ একবার তাকে আটক করে আবার ছেড়ে দেয়। যুবদল নেতা কবির হাং গত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় নিয়মিত অবস্থান করলেও মাঝে মধ্য নিজ পারিবারিক প্রয়োজন ও ঈদে নিজ পরিবারের সান্নিধ্য বাড়ীতে আসেন। এ বছর ঈদেও যথারীতি নিজ বাড়ীতে আসলে ঈদের আনন্দ পরিনত হয়েছিল তাহার পরিবারের জন্য বিষাদে। গ্রেফতার করে কবির হাং কে থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর পরিবারের কাউকে থানায় প্রবেশ করতে না দেয়া, ও গ্রেফতার পরবর্তী কবির হাং কে পুলিশ কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন, সংবাদ কর্মীদের থানায় প্রবেশে বাধাঁ দেয়ার অভিযোগ করেছেন তাহার পরিবারের সদস্য কবির হাং এর স্ত্রী, সাংবাদিক, কবির হাংকে কারাগারে দেখতে যাওয়া দর্শনার্থীগন,জেলা যুবদলের শীর্ষ নেতাসহ সাবেক মন্ত্রী সাংসদ ভোলা-৩ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ বীরবিক্রম।কবির হাং এর স্ত্রী তাহার স্বামীর সাথে থানায় সাক্ষাতে পরিবারের কাউকে যেতে না দেয়াসহ নির্যাতনের গা শিউরে ওঠা অভিযোগ করেন। কবির হাং এর স্ত্রীর ভাষ্যমতে নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ননা।
ওকে এ্যারেস্ট করার পর আমার পরিবারের কাউকেই লালমোহন থানায় প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।
গভীর রাত ২:৩০ মিনিট।অস্থায়ী থানা (মহিলা কলেজ)এর সামনের রাস্তার এক পাশে আমি আমার ছেলে ও ননদের ছেলেসহ আরও কয়েকজন।
ওরে চোখ বেধেঁ হাত বেধেঁ ওসির রুমে নেওয়া হয়।প্রায় ৩০ মিনিটের মত ওসির রুমে ছিল।আমার ধারনা ঐ সময়ই ওরে পুলিশ শারীরিক নির্যাতন করে। এরপর ওরে ওসির রুম হতে নামিয়ে চোখ বাধাঁ সহ এনে নতুন থানা ভবনে নেয়া হয়। আমাকে বলা হয় আপনি চলে যান।এর কিছুক্ষন পর ওরে গাড়ি করে চোখ বাধাঁ অবস্থায় মেঘনা নদীর পাড়ের দিকে নেয়া হয়। পিছু পিছু আমাদের কয়েকজন মটর সাইকেলে করে যায়। আল্লাহর মেহেরবানী আমরা যদি না থাকতাম থানার সামনে আর মটর সাইকেলে করে আমাদের কয়েকজন গাড়ির পিছু না যেতাম তাহলে কি হত ওর?? সকালে পুলিশ ওরে(কবির হাং) কে কোর্টে নেয়ার সময় আমি ওর হাত ধরি। ওর গায়ে প্রচন্ড জ্বর অনুভব করি। ওর পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে, আর আমায় বলে আমারে যাহারা এমন অমানুষিক নির্যাতন করেছে আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন। আল্লাহ কে বল।
যুবদল নেতা কবির হাং কে নির্মম নির্যাতনের আরও বর্ননা দেন ভোলা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব কবির হোসেন। তিনি বলেন আমি কোর্টে ওরে দেখতে গিয়েছিলাম ও পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ৫ সেকেন্ডের রাস্তা মনে হয় ১০ মিনিট লেগেছে আমার নিকটবর্তী আসতে। কবির হাং এর পায়ে নির্যাতন দৃশ্যমান হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।কবির হাংকে কারাগারে দেখতে যাওয়া দর্শনার্থীরা ও তাহাকে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিবেদককে জানান।
কবির হাং কে পুলিশ কর্তৃক ভয়ংকর নির্যাতনের বর্ননা ও সংবাদ কর্মীসহ কাউকে থানায় যেতে না দেয়ার বর্ননা দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জাতীয় দৈনিক "সংবাদ" এর ও একজন সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার।ভোলা-৩ এর ছয়বার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ ও মন্ত্রী বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবঃ হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ বীরবিক্রম কবির হাংকে গ্রেফতার করে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগ করে একে একটি নজির বিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন লালমোহন থানার পুলিশের মত এমন পুলিশ বাংলাদেশের আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নাই। আমার দলের শত শত নেতা কর্মীদের এরা মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছারা করেছে।এরা আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের চাইতেও বেশি তৎপর।
লালমোহনে একজন পাগল মরলেও বিএনপি কর্মীরা অজ্ঞাত আসামী হয়।
এদিকে এই পাগল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের নিকট কবির হাং কে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন কোন নির্যাতন করা হয়নি। তিনি বলেন কবির হাং কে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে চালান করা হয়েছে।এ পর্যন্ত কতজন এ পাগল হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামী চালান দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন চারজন। বিভিন্নভাবে জানা যায় এরা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা কর্মী। লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) হুমায়ুন কবীরের নিকট কবির হাং কে গ্রেফতার করে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আপনাদের ক্ষমতা আছে, আপনারা তদন্ত করে দেখুন।এক সাংবাদিক নির্যাতন বিষয়ে লিখেছে এ কথা বললে তিনি বলেন তথ্য পেলে আপনিও লিখুন। এ বিষয়ে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোকতার হোসেন কে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অভিযোগ টি শোনানোর পর তাহার বক্তব্য জানতে চাইলে লাইনটি কেটে যায়। এরপর আবার ফোন করলে তিনি আর রিসিভ করেন নি।পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন করতে পারে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ "সুপ্রীম কোর্টের" আইনজিবী এ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ গ্রেফতার পরবর্তী কোন আসামীকে শারীরিক নির্যাতন,ভয়ভীতি দেখাতে পারেনা। এটি একটি পেনাল কোডের অপরাধ ও সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ ও ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৩(১) সুস্পস্ট লঙ্গন।ভিকটিম, সংশ্লিস্ট পুলিশ ডিপার্টমেন্ট,ও কোর্টে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
উল্লেখ্য লালমোহন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের পুকুরটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি স্কুলটি সরকারী হওয়ার পুর্বে অবৈধভাবে লিজ দিয়ে দখল করাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকার সুধী সমাজের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল" প্রানের শিক্ষাঙ্গন লালমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাচাঁও।অনলাইন ভিত্তিক এ স্কুল রক্ষার আন্দোলনের মধ্যই দখলকৃত পুকুরের মাচাঁর উপর হঠাৎ এক রাতে মানসিক বিকারগ্রস্ত এক পাগলের লাশ পাওয়া যায়।পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ইলেকট্রিক শক দ্বারা মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেলে ঐ মামলার অজ্ঞাত আসামী হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রিপন, যুবদল নেতা ইলিয়াছ কে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে চালান করা হয়।একই মামলায় বর্তমানে কবির হাওলাদারকেও আসামী হিসেবে ভোলা কারাগারে প্রেরন করে পুলিশ।আরও দুটি ডাকাতি,ছিনতাইয়ের মামলাও কবির হাং এর বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।