দালালরা সক্রিয় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তি!
টি.আই সানি,গাজীপুর:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে অনিয়ম ও জনবল সংকটে। হাসপাতালে আসা রোগীদের অভিযোগ- হাসপাতালে প্রবেশ মাত্রই বিভিন্ন দালালরা তাদের নিয়োগকৃত ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানা হেচরা শুরু করে। হাতে কাগজ দেখলেই ডাক্তার প্রদত্ত নির্দেশনা পত্র মনে করে। এছাড়াও কতিপয় ডাক্তার বিভিন্ন ক্লিনিকের নাম উল্লেখ করে সেখানে চিকিৎসা নিতে বলে। হাসপালে আসা ৬০বছর বয়সী ফিরোজা খাতুন জানান, টিকেট কেটে ১১নাম্বার রোমে ডাক্তার যে ব্যবস্থা পত্র দিয়েছে তন্মধ্যে প্যারাসিটামল ও এন্টাসিট ট্যাবলেট ছাড়া বাকী সব ঔষধ বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে বলছে।
এব্যাপারে হাসপাতালের একজন ডাক্তার বলেন, ৬ জন চিকিৎসক ও ১১ জন নার্স দিয়ে কোনোমতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের চরম ভোগান্তির কথা তিনি স্বীকার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এই হাসপাতালে অন্তত ৫০০ রোগী আসে। শিল্প এলাকা হওয়ায় রোগীর সংখ্যা মাঝে মাঝে ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। একটি পূর্ণাঙ্গ ৫০ শয্যার হাসপাতালে কমপক্ষে ২১ জন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। অথচ এখানে আছেন মাত্র ৬ জন। তা ছাড়া বর্তমানে গাইনি বিভাগে একজন ও সার্জারি বিভাগে আরেকজন কনসালট্যান্ট দিয়ে কাজ চলছে।
গত ৯জুলাই সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে রোগীদের প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়। হাসপাতালে আসা কয়য়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের নিজস্ব বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে রোগীদের ভোগান্তি চরম আকারে পৌচেছে। মাঝে মধ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ চলানো হয়। নিজস্ব বিকল্প বিদ্যুৎব্যবস্থা নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আরএমও মামুনুর রশিদ বলেন, একটি জেনারেটর আছে। তবে তা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অধিদপ্তরে জেনারেটর মেরামতের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে জেনারেটর ঠিক করা হবে।
জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, এখানে রোগীর প্রচন্ড ভিড় হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সারা দিন চলে যায়। এত বড় একটি উপজেলার জন্য মাত্র কয়েকজন ডাক্তার দিয়ে সেবা দেওয়া কী করে সম্ভব! অন্যান্য রোগীরা বলেন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি বিভাগ আছে, কিন্তু এখানে সিজার হয় না। ৫০ শয্যার কথা বলা হলেও শুধু সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া এখানে বড় কোনো অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেই। শ্রীপুরের শাহিন আলম, তাঁর শিশুর জ্বও হয়েছিল। এখানে এসে তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালে শিশুরোগ বিভাগে কেউ নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এফ এম মাহমুদুল হক বলেন, শ্রীপুর এলাকাটি দ্রুত শিল্পায়ন হওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কিন্তু হাসপাতালে এখনো ৫০ শয্যার সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। এখনো জুনিয়র কনসালট্যান্ট ছয়টি, মেডিকেল অফিসার পাঁচটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পাঁচটি, প্রধান সহকারী একটি, হেলথ এডুকেটর একটি, কার্ডিওগ্রাফার একটি, কম্পিউটার অপারেটর একটি, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর একটি, ওটি (অপারেশন থিয়েটার) বয় একটি, ইমার্জেন্সি অ্যাটেনডেন্ট একটি, স্ট্রেচার বেয়ারার একটি, ওয়ার্ড বয় তিনটি, আয়া একটি, বাবুর্চি একটি, নিরাপত্তা প্রহরী একটি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর একটি পদ শূন্য আছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে তা চালু করা যায়নি।
গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন সৈয়দ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক জানান, শিগগিরই সারা দেশে দুই পর্বে ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে সরকার। নিয়োগ হলেই শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট থাকবে না। এ ছাড়াও হাসপাতালটির অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।