তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা হাসপাতালে ৪জন ডাক্তার! রোগীরা দুর্ভোগে
এস কে দোয়েলঃ
প্রায় ২ লাখ মানুষের ৫০ শয্যার মডেল হাসপাতালে মাত্র ৪ জন ডাক্তার! ডাক্তার সংকটে চরম দুর্র্ভোগে ভোগছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে গেলেও দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া সদরে অবস্থিত সাতটি ইউনিয়নের একমাত্র প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র আধুুনিক সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম হতে চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটে আসে অগণিত রোগী। কিন্তু এসেই ডাক্তার সংকটে পড়ে যান বিরম্ভবনায়। দীর্ঘ সময় লাইন ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন ডাক্তারের। কখনো সুযোগ পান আবার কখনো দূর্ভোগ নিয়েই ঘরে ফিরেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় চিকিৎসা নিতে আসা বহির্বিভাগে ভীড় জমানো অগণিত রোগ। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে বসে অপেক্ষা করছেন ডাক্তার কখন বসে। এদের বেশির ভাগই ছিল মা ও শিশু। মা ও শিশু রোগী দেখেন ডা.নজরুল ইসলাম। পাশে দায়িত্ব পালন করছেন দন্ত চিকিৎসক আনোয়ার হোসাইন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে ২৮ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৪ জন।
৯ জন কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই কর্মরত। দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে মেডিকেল অফিসারের ১২টি পদ। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২১ জনের স্থলে হাসপাতালে কর্র্মরত আছেন ১৪ জন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। কিন্তু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের কারণে তার পক্ষে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে ঠিক মতো রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া উপসহকারী কমিউনিট মেডিকেল অফিসার ২ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ডেন্টাল ১ জন এবং ১ জন ফিজিওথেরাপিস্টসহ মোট ৪ জন যৌথভাবে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২০০-২৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তবে উপসহকারী এক কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বহির্বিভাগে রোগীদের সরকারি টিকিটে পূণরুুপে চিকিৎসা পরামর্শপত্র না দিয়ে পৃথকভাবে সীলমোহরযুক্ত প্যাডে বাজার থেকে ওষুধ কেনার জন্য বেশিভাগ পরামর্শপত্র দিতে দেখা গেছে। আর রোগীদের সাথে অসদচরণও লক্ষ্য করা গেছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগীদের বেশির ভাগ বাইরে থেকেই কিনতে হয় ওষুধপত্র। সরকারি কোনো ওষুধ সরবরাহ পান না তারা।
এদিকে ডাক্তার শূন্যতায় যেমন রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তেমনি ইসিজি মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকার পরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণসেবা থেকে। সবচেবে বড় সমস্যায় পড়ছেন প্রসূতিরা। প্রসবকালীন হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও গাইনি চিকিৎসক না থাকায় তাদের স্থানান্তর করা হয় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। এছাড়া প্রায় ২ বছর যাবৎ অকেজো রয়েছে এক্সরে মেশিনটি। ফলে রেফার্ড করতে হয় বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়। আর এর সাথে রয়েছে রিপ্রেজেনটেটিভদের চরম উৎপাত। ডাক্তারের চেয়ে এদের সংখ্যা বেশি ও চরম উৎপাত থাকায় রোগীরা এসেই বিরম্বনায় পড়েন।
সবচেবে বড় সমস্যা প্রসূতিদের। প্রসবকালীন হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও গাইনি চিকিৎসক না থাকায় তাদের স্থানান্তর করা হয় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগীদের বাইরে থেকেই ওষুধপত্র আনতে হয়। সরকারি কোনো ওষুধ সরবরাহ পান না তারা। রিপ্রেজেনটেটিভদের উৎপাতও বেশি। সাধারণ রোগীদেরও দায়িত্ব¡ নিতে চান না চিকিৎসকরা। রেফার্ড করেন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়। সেখান থেকেও তারা পান আর্থিক সুবিধা।
এদিকে বহির্বিভাগে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে অনেক রোগীই ওষুধ এবং ডাক্তার না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক রোগী পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজেসহ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সঠিক চিকিৎসার জন্য গিয়ে মানসিক ও অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।
অন্যদিকে উপজেলাটি সীমান্তবর্তী বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় অনেক রোগী পাসপোর্ট ভিসা করে এ বন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই ও কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করে আসছেন। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের গুণগতমান ও দক্ষ চিকিৎসক থাকার পরও শুধু হাতের নাগালে না পেয়ে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মানুষ দিন দিন দেশের চিকিৎসাসেবা গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের দেশের চিকিৎসাসেবার মান অক্ষুণœ রাখতে চিকিৎসক ও ওষুধ শিল্পের প্রতি আরো সুদৃষ্টি রেখে শহরের মতো গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন চন্দ্র রায় জানান, প্রতিদিন শত শত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। ডাক্তার সংকটের পরও আমরা যথার্থ সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নের জন্য জরুরিভিত্তিতে ডাক্তার পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে সংকটাপন্ন জনবল নিয়ে যথাযথ সেবা প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডাক্তার সংকট থাকায় তিনিও বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।