নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের ধান সু-সংবাদ নিয়ে এসেছে
শাহ মো: জিয়াউর রহমান,নীলফামারী
গত বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের ধান কাটাই মাড়াইয়ে সু-সংবাদ নিয়ে এসেছে । চলছে উৎসব মুখর পরিবেশে এই ধান কাটা মাড়াই। উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদখানা গ্রামে ধানের আনুষ্ঠানিক কাটা মাড়াইয়ের মাঠ দিবস পালন করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
মাঠ দিবসের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) আব্দুল হান্নান, রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ্ আলম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কেরামত আলী, কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামূল হক। জেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ধান কাটাই মাড়াই যেন এলাকার কৃষক কুলকে আনন্দে আত্মহারা করে ফেলেছে। কৃষি বিভাগ সুত্র মতে, এই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এতে চাল পাওয়া যাবে ৬০ হাজার মেট্রিকটন।
এর আগে ওই গ্রামে ঘুরে আগাম জাতের ধান উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। কৃষকের সাথে ব্যস্ততা দেখা গেছে কৃষি শ্রমিকদের। কৃষকরা বলছেন, ‘চালের বাজারে দুঃসময়ে আগাম ধান উঠাতে পেরে আমরা আনন্দিত। পাশাপাশি আগাম ধান উঠায় ওই জমিতে আলুসহ ভুট্টা আবাদ করা সম্ভব হবে।’
শুধু উত্তর চাঁদখানা গ্রাম নয় ওই উপজেলার সদর ইউনিয়ন, পুটিমারী, বাহাগিলী, নিতাইসহ অন্যান্য ইউনিয়নে দেখা গেছে বিস্তির্ণ এলাকার কৃষি জমিতে আগাম জাতের আমন ধানের আবাদ।
উত্তর চাঁদখানা গ্রামের কৃষক আকবর আলী (৪৫) জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছি । ধান লাগানোর ৯০ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার শুরু করেছেন ওই ধানের কাটা মাড়াই। গত চার বছর ধরে ওই তিন বিঘা জমিতে আগাম ধান আবাদের পর আগাম আলু, এরপর ভুট্টা অথবা গমের আবাদ করে অনেক লাভবান হয়েছেন ।
তিনি বলেন,‘আলু লাগেবার আগোত ধান ওঠে। ধান কাটি এলা জমিত আগাম আলু লাগাইম, পড়িথাকা জমির চাইতে ধানের জমিত আলু বেশী হয়। আলু অটেয়া ভুট্টা লাগাইম। আগাম আলুর আবাদোত বেশী লাভ হয়।’
তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমিতে ওই জাতের ধানের আবাদে খরচ হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, ফলন পাচ্ছি অন্তত ১৫ মন করে। বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধানের দাম প্রায় সাড়ে ৭’শ টাকা। এরপর গরুর খাদ্য হিসাবে ধানের খড় বিক্রি হবে প্রতি আটি দুই টাকার উর্দ্ধে। এতেও আয় আসবে প্রায় তিন হাজার টাকা।
একই গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন (৩৫) ধান আবাদ করেছেন তিন বিঘা ধমিতে। তিনিও শুরু করেছেন কাটা মাড়াই।
কৃষকরা বলেন,‘আগাম ধানের আবাদে আমাদের ভাগ্য খুলেছে। ধান চাষের পর একই জমিতে আগাম আলুর আবাদ করতে পারছি। সেখানেও লাভ হচ্ছে, এরপর আরো একটি ফসল ফলাতে পারছি ।”
উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন জানান, এবার ২২ শতক জমিতে আগাম জাতের ধানের আবাদ করেছি । ৯০ দিনপর ধান পাকায় ১০ দিন আগে কাটা এবং মাড়াই করে বিঘাপ্রতি ১৬ মন ধান পেয়েছি।’
একইভাবে ওই এলাকার কৃষক আবির হোসেন (৪৫), ফুল হক (৪০)সহ অনেকে ওই আগাম জাতের ধান ইতিমধ্যে কাট-মাড়াই করেছেন। সে জমিতে এখন তারা আলু আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষি শ্রমিক ফরহাদ হোসেন (৪০) বলেন,‘আগোত আশ্বিন মাসোত কাম (কাজ) ছিল না । এলা আগুরি (আগাম) ধান, এরপর আলুর আবাদ আসিয়া হামরা কাম পাছি। ২৫০ টাকা দিন মজুরীত কাম করেছি। ওমরাও (কৃষক) ভালো আছে, হামরাও কাম করি বাঁচি আছি।’
অপর কৃষি শ্রমিক পলিন চন্দ্র রায় (৪৫) বলেন,‘আগুর ধান, আলুর আবাদ আসিয়া কামলার (কৃষি শ্রমিক) ঘরোত একনা অভাব দুর হইছে। আগোত এইলা দিন খুব অভাবোত গেইছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এবার উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের চায়না ও উচ্চ ফলনশীল সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে। গত চার সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭মন পর্যন্ত। ধান কাটার পর এসব জমি আগাম আলু আবাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন আবাদ উঠতে শুরু করেছে। ওই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিকটন। চালে ওই পরিমান দাড়াবে ৬০ হাজার মেট্রিকটনে। যা চালের উর্দ্ধমুখির বাজারে একটি বড় প্রভাব ফেলবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) আব্দুল হান্নান জানান আমি বন্যা পরবর্তী সময় উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে এসে অবাক হয়ে গেছি। এ অঞ্চলের কৃষক আজ অনেক এগিয়ে। তারা আগাম ধান উৎপাদন করে দেশে মাইলফলক স্থাপন করছে। যা এই সময়ে উর্ধ্বমুখি চালের বাজারকে নামিয়ে দিতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
তিনি জানান সারা দেশে এবার ৫৩ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা পুনরায় নতুন করে ধান রোপন করেছে। এতে চালের উৎপাদনে কোন ঘাটতি হবেনা। বরং উৎপাদন বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।