কিশোরগঞ্জে গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়
শাহ মো: জিয়াউর রহমান,নীলফামারী :
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে কোন নিয়ম ছাড়াই গলাকাটা ট্যাক্স আদায় করেছে ইউনিয়ন পরিষদ।
সরকারের কোন নীতি নিয়মের তোয়াক্কা না করে গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ তাহিরুল ইসলাম,প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ হাছিনা বেগম ও কয়েকজন ইউপি সদস্য মিলে রেজুলেশনের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেন।
এ নিয়ে ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভের বিরাজ করছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে যে, কোন বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কর,ট্যাক্স হোল্ডিং এ্যাসেসমেন্ট ও নাম্বার প্লেট প্রদানের কোন সুযোগ নেই।
তারপরও গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর প্রান্তিক এ্যাসেসর নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোন এ্যাসেসমেন্ট ছাড়াই গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দোলাপাড়া থেকে কোন নোটিশ বা মাইকিং ছাড়াই গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে প্রান্তিক এ্যাসেসরের আবু রায়হান ইউনিয়ন পরিষদের রশিদ দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেছে।
ওই এলাকার সাধারণ মানুষ “ নতুন সময টিভি”কে জানায়, এখনো এই এলাকায় বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে ভয় দেখিয়ে ট্যাক্স আদায়ের বিষয়টি গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে হতাশার বানী হয়ে দাড়িয়েছে।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে নোটিশ ও মাইকিংয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায় আমরা কিছু জানি না। হঠাৎ গ্রাম পুলিশ নিমাই চন্দ্র ও প্রান্তিক এ্যাসেসরের আবু রায়হান এসে ট্যাক্সের টাকার জন্য নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ট্যাক্স উত্তোলন করেন।
যাহা স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের পরিপন্থি। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে বলা হয়, যে সমস্ত এলাকায় ট্যাক্স উত্তোলন করা হবে সে এলাকার মানুষকে ট্যাক্স উত্তোলনের পূর্বেই তাদেরকে নোটিশ দিয়ে ট্যাক্সের টাকার পরিমান নিশ্চিত করতে হবে এবং কিসের উপরে ট্যাক্স আদায় হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে।
এতে ট্যাক্স প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোন অভিযোগ বা আপত্তি থাকলে তা ইউনিয়ন পরিষদের নিস্পত্তির পর তার ট্যাক্সের টাকা উত্তোলন করতে হবে।
কিন্ত ইউনিয়ন পরিষদের গলাকাটা সিদ্ধান্তে কোন নোটিশ ছাড়াই অনুমান করে প্রান্তিক এ্যাসেসর এনজিওর মাধ্যমে ট্যাক্স উত্তোলন করা হয়।
গাড়াগ্রাম দোলাপাড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে সামসুজ্জামান জামান,আফছার আলীর ছেলে আবদার আলী ও ছালামুদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম ও আব্দুস সামাদ জানান,আমাদের কাছে নোটিশ ছাড়াই ট্যাক্সের টাকা নিয়ে গেছে।
কারও শুধু ঘর আছে তার ১৪০ টাকা। আর কারও পাকা বাড়ী তার ১২০ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ ট্যাক্সের আদায় যেন গলাকাটা। আমরা এ বিষয়ে কোন কিছু জানিনা।
হঠাৎ গ্রাম পুলিশ নিমাই চন্দ্র কয়েকজন লোককে নিয়ে এসে আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে ট্যাক্সের টাকা নিয়ে গেছে। তারা জানায় আমরা নাকি ট্যাক্সের টাকা না দিলে আমাদের নাকি গরু বাছুর নিয়ে যাবে।
এর কারণে সাধারণ মানুষ ভয়ে ট্যাক্সের টাকা দিয়েছে। আবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানায় বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব টাকা উত্তোলন করে পকেট ভর্তি করার চেষ্টায় ব্যস্ত।
এ ব্যাপারে গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তাহিরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,পরিষদ থেকে ট্যাক্স আদায় না করলে এবং পরিষদের এ্যাকাউন্টে আয় না দেখালে সামনে কোন বরাদ্দ আসবে না। তাই নিয়ম মেনেই প্রান্তিক এ্যাসেসর সৈয়দপুর একটি এ্যাসেসর দিয়ে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে এবং তাদের সাথে আমাদের পরিষদের চুক্তি করা হয়েছে।
গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাসিনা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,এটা আমার না জানা শর্তে ভূল হয়েছে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেনে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করবো।
প্রান্তিক এ্যাসেসর সৈয়দপুরের পরিচালক আবু রায়হানের মুঠো ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমি গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে ট্যাক্স আদায় করতে নিষেধ করেছি।
তবে তারা পরিষদের মাধ্যমে এ্যাসেমেন্ট করতে পারেন কিন্তু কোন এনজিও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ট্যাক্স আদায় করতে পারবে না। তিনি ট্যাক্স আদায়ের বিষয়টি জানেন না। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।