ডেটলাইন: মাদকে ভাসছে জায়লস্কর ইউনিয়ন অনুসন্ধানে ছদ্মবেশে পুলিশ প্রশাসন ।
বিভাগীয় প্রতিনিধি : সম্প্রতি ফেনীর একটি দৈনিক প্রধান শিরোনামে খবর প্রকাশ করে, মাদকে ভাসছে জায়লস্কর ইউনিয়ন, দেখার কেউ নেই, প্রশাসন নির্বিকার। প্রকাশিত খবরের বিষয়টি সরেজমিন অনুসন্ধান, মাদক ব্যবসায়ীদের ছবি ও নাম ঠিকানা, মাদক বিক্রির স্পট গুলো চিহৃিত করার দায়ীত্ব প্রাপ্ত হয়ে অনুসদ্ধানে গিয়ে যা দেখা গেলো খবরের সহিত প্রকাশ করা ছবিটাকে স্থানীয়রা জায়লস্করে বিজিবির মাদক নির্মুলের পূর্ব মুহুর্তে স্তুপ আকারে রাখা বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের ছবি বলে মত দিয়ে জানান, যে প্রকাশিত ছবি কেউ দেখলে মনে করবে জায়লস্কর ইউনিয়নে মাদক বিক্রির হাট বসে, যা ইউনিয়নের বর্তমান সময়ের সাথে যায়না। জায়লস্কর ইউনিয়ন একাধারে ছয়বার ফেনী জেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়নের খেতাব অর্জন করেছে।
জায়লস্কর একমাত্র ইউনিয়ন যেখানে অবস্থান গত কারণে ফেনী সদর থানা ও দাগনভূঞা থানার পুলিশের নিয়মিত উপস্থিতি বলা চলে। জায়লস্কর একমাত্র ইউনিয়ন যেখানে আন্তঃজেলা সড়ক ও স্থানীয় প্রতিনিধি নেতৃত্বে চৌকি পাহারা বসিয়ে, প্রশাসনের সহযোগীতায় রাস্তায় ড়াকাতি ও হাইজ্যাক নির্মুলের সফলতার দাবীদার।
এক সময় আন্তঃজেলা সড়কের জায়লস্কর অংশ ও পাছগাছিয়া ইউনিয়নের তেমুহানি অংশে রোড়-ড়াকাতি ও হাইজ্যাক হতো নিত্যদিন। আর দুর্নাম হতো জায়লস্কর ইউনিয়ন বাসীর। অথচ নিরিহ জায়লস্কর ইউনিয়ন বাসীর এসব দুস্কৃতিকারীদের ব্যপারে কিছুই জানাই ছিলো না। এর নির্মুলে জায়লস্কর ইউনিয়ন বাসীর সহযোগীতায় প্রশাসন যখন হাইজ্যাকার ও ড়াকাতদের ধরা আরম্ভ করলো, দেখা গেলো দুস্কৃতিকারীদের কারোই বাড়ি জায়লস্কর তো নয়ই, এমনি কি দাগনভূঞা উপজেলাতে নয়।
তদ্রুপ মাদক নিয়েও মিথ্যা অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এক নাগাড়ে কথা গুলো বললেন, জায়লস্করের নুরুল্যাপুরের হাজী মোঃ আমিনুল হক। কথা বলা অবস্থায় সেখানে দেখা গেল ছদ্মবেশী রুপে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে। ছদ্মরূপ থাকায় জনতার সামনে কথা বলা যাচ্ছিল না। কারণ ইশারায় কথা বলতে বারণ করে দিলেন।
তবে সাংবাদিক দেখে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে নিরিহ মানুষ জনের সহিত অনেক্ষন কথা বলে সিএনজি যোগে তিনি সঙ্গী নিয়ে ইউনিয়নের অন্য গ্রামের দিকে রওয়ানা হন। স্বীকৃত যে পুলিশ সুপারের তথ্য সংগ্রহ ও সরেজমিন তদন্তে মুন্সিয়ানা প্রশংসার দাবীকৃত।
ফেনীতে পদায়ন কালীন সময় থেকে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রভূত পরিশ্রম করে চলেছেন।
একটা মানুষ কতটা পরিশ্রম করতে পারে? সহজ জবাব তাঁর সামর্থ্যানুযায়ী। অথচ সামর্থ্যকে পদদলিত করে ইচ্ছার পূজারী এমন এই পুলিশ সুপার যে কিনা নির্দিষ্ট সময়ের বেশী নিজের কার্যালয়ে হাজির থাকে। কার্যালয়ে বসে দর্শনার্থীদের সুখ-দুঃখ সহ অনেক বড় চাপ সামাল দিয়ে সবার নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্যের মাধ্যমে সকল মহলকে শান্ত রাখতে হয়। কখনো স্বরুপে তো কখনো ছদ্মবেশে, কখনো একা তো কখনো নিজেদের সদস্যদের নিয়ে, কখনো ভোরে, কখনো সকাল তো কখনো সন্ধ্যায় চষে বেড়ায় এমন কিছু জায়গাতে যা নিজ চোখে না দেখলে গল্পের মত শুনাবে। মঙ্গলবার ৩টা হতে রাতবিরাত হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত তিনি সঙ্গীদের নিয়ে ছদ্মবেশে কখনো সিএনজিতে কখনো পায়ে হেটে চষে বেড়িয়েছেন দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নে। ফুটপাত, বাজার হয়ে গ্রামের গলিপথ। কথা বলেছেন ছোট বড় অনেকের সাথে। বাদ যায়নি রিক্সা চালক থেকে খেটেঁ খাওয়া মানুষ ও। নুরুল্যাপুর রাস্তার মাথা হয়ে বারাহিগোবিন্দ গ্রামে, তথা হতে কলইয়া পুকুর পাড়, সেখান থেকে বোর্ড অফিস এলাকা চেক করে আমিরগাঁও দিয়ে লালপুর প্রাইমারী প্রাঙ্গণ শেষে মোস্তানের দোকানের সামনে দিয়ে আবার সিলোনীয়া মূখী হয়ে আলামপুর রোড়ে দিয়ে ব্যুরোর সাবেক অফিস সংলগ্ন বাস্তা দিয়ে মসজিদ রোড়ে গিয়ে দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে আলাম পুর খাজা প্রাইমারী ও বটতলা দিয়ে আফছার মেম্বারের বাড়ির দিকে দেখে পাশের রাস্তা দক্ষিণ জায়লস্কর প্রাইমারী ও পূর্বে নদীর পাড় পর্যন্ত। সেখান থেকে সিলোনীয়া বাজারের পুরাতন ব্রীজ হয়ে নেয়াজপুর প্রাইমারীর সামনে দিয়ে বারিক কোম্পানির মেইল এলাকা চেক করে ওমরপুর দীঘির পাড়, বাধের গোড়া দিয়ে রামচন্দ্রপুর মজুমদার বাড়ির দরজা দিয়ে ইয়ারপুর দোকান গুলোর সামনে হয়ে আবার জায়লস্কর গ্রামের কমলাপুকুর দেখে পাচপীরের মাজারের রাস্তায় জায়লস্কর হাইস্কুলের রাস্তা ধরে স্হানীয় জায়লস্কর বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে পূর্ব দিকে বারাহিগোবিন্দ গ্রামের দিকে চেক করার উদ্দেশ্যে চলে যান।
বারাহিগোবিন্দ মাজার এলাকায় এ প্রতিবেদক ফেনীর পুলিস সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার এর নিকট অনুসন্ধানে রিপোর্ট কি পেয়েছেন জানতে চাইলে, তিনি বলেন, আমাদের অনুসন্ধান এখানেই শেষ নয়। আমাদের ধারাবাহিক অনুসন্ধান শেষে বিষদভাবে পর্যালোচনা করে আপনাদেরকে জানানো হবে ।
অনুসন্ধান কালীন সময়ে কথা হয়, জায়লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলনের সহিত। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘ সাত বৎসর তিলে তিলে গড়ে নেওয়া আমার জায়লস্কর ইউপি ও জায়লস্কর ইউনিয়ন এর মানুষ গুলো অত্যান্ত ভাল মনের অধিকারী অথচ কি কালিমাটাই না ছিটাতে অচেনা লোকেরা ওঠে পড়ে লাগলো। তিনি আরো জানান, জায়লস্কর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসাতো দূরে থাক মাদকসেবী ও আজকাল সচারচর খুঁজে পাবেন না। অতীতে কি ছিলো? তা বলার দরকার নেই, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল এই ইউনিয়নকে জুয়া ও মাদক মুক্তকরনে কাজ করা। জুয়া অল্প সময়ে বন্ধ করা সম্ভব হলেও মাদক নিয়ন্ত্রনে কিছুটা সময় লেগেছিল। তখনও কেউ বিক্রি নয়, সেবনকারী দেখা যেত। যাদের অনেককে আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েছি, ক্ষেত্র বিশেষ পুলিশে দিয়েছি। তাও ৫/৬ বছর আগের কথা। যা এখন স¤পুর্ন অতীত। অথচ দল, প্রশাসন ও জায়লস্কর বাসীর গৌরবময় অর্জন গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মানসে কাহারো মিথ্যা তথ্যের উপর বা কোন গোষ্ঠীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা জানান, জায়লস্কর ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল ও আমাদের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আছে যেমনি সত্য, তেমনি সত্য হলো খবরে প্রকাশিত তথ্যের মত কোন মাদকের কারবার নেই। সিলোনীয়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান জানান, জায়লস্কর ইউনিয়নে কেউ মাদক বিক্রি করে তা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ মিলন চেয়ারম্যানের ভয়ে নিত্য মাদকসেবীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, সেখানে কেউ মাদক ব্যবসা করবে কল্পনাই করা যায় না।
দাগনভূঞা উপজেলা যুব মহিলীলীগ সভাপতির বাড়িটি অত্র ইউনিয়নে হেতু, মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান, কে কি লিখলো বা বললো তা চিন্তা করতে চাই না, যে চেয়ারম্যান রাত ভর পাহারা দিয়ে এই ইউনিয়নকে জুয়া, ড়াকাতি ও মাদকমুক্ত করে উন্নয়নের রোল-মড়েলে রুপান্তরিত করলো, এটা লোকটার (চেয়ারম্যান) প্রতি ও ইউনিয়ন বাসীর প্রতি সু-বিচার করা হলো না। তিনি ফেনীর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ডিসি, এসপি ও এডিএমদের সততার প্রশংসা করে বলেন যে, ফেনীর কোথায়ও অনিয়ম করে এখন কেউ বাচাঁর সুযোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান
দিদারুল কবীর রতন ও ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনের উপজেলায় অনিয়ম বা অপরাধ করার সাহস কেউ দেখাবে কল্পনাও করা যায় না। তিনি আরো বলেন জায়লস্কর ইউপির কোন সদস্য এখন বিড়ি-সিগারেট ও খায়না।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় সিলোনীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেবের সহিত, তিনি জানান চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যের অনুকূল্য পাবে তাও কোন মাদক ব্যবসায়ী, প্রশ্নই আসেনা। তিনি জানান যে, জায়লস্কর ইউনিয়নে শত ভাগ বিদ্যুতায়নে মিলন চেয়ারম্যান কোন ব্যক্তি থেকে এক পয়সাও নেননি তার উপর সিলোনীয়াতে মাইক্রো, সিএনজি, অটোরিকশা স্ট্যান্ড গুলো হতে এক পয়সা ও চাদাঁবাজী হয়না, এই সত্য টুকু যে স্বীকার করতেই হবে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা দাউদুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান নিজ অর্থায়নে ইউনিয়নের সকল মসজিদে বয়স্কদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার যে প্রকল্প নিয়েছেন, তা বানচালের অংশ হিসাবে এ সকল মিথ্যা পরিবেশনা কিনা, চিন্তা হচ্ছে।
মামুন নামের ফেনী কলেজে পডুয়া স্থানীয় এক ছাত্র জানায়, জায়লস্কর এমন ইউনিয়ন যেখানে ঘর বাড়ী তৈরী করতে কোন কর দিতে হয় না, কোন সনদ নিতে ও ইউনিয়ন পরিষদকে কর দিতে হয় না, সেই ইউনিয়নকে নিয়ে এমন অভিযোগ হাস্যকর। তবে চেয়ারম্যান ইউনিয়নের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহিত দক্ষ নেতৃত্ব তৈরীতে ব্যর্থতার ফসল এমন তথ্য বিভ্রাট বলে মত দেন।
প্রতিবেদক খবরটি প্রকাশিত দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক তমিজ উদ্দিনের বাড়ী জায়লস্কর ইউনিয়নে জানতে পেরে অনুসন্ধান কালীন সময়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকাশিত খবরকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, মায়ের অসুস্থতা জনিত কারণে ওই দিন তিনি ছিলেন না, আর সংবাদের বিষয়ে তিনি নিজেও সরেজমিন অনুসন্ধান করে উল্লেখ করার মত কোন সত্যতা পাননি ফলে সংশ্লিষ্ট দৈনিকে ১৯ অক্টোবর বিশেষ প্রতিবেদনে আরেকটা প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকে বহিস্কার করা হয়েছে এবং যে মাদক নির্মুলে প্রশাসন, স্থানীয় চেয়ারম্যান এর ভূমিকা প্রশংসনীয় এবং বর্তমান পুলিশ প্রশাসনের ধারাবাহিক টহলের ও তিনি প্রশংসা করে বলেন কোন ইউপি সদস্যের জড়িত থাকার ঘটনাও সত্য নয়।