১০৭টি বাল্য বিয়ে রোধের দাবীদার কিশোরী সাজেদাকে ব্যবহার করে এনজিওর প্রতারণা
Rvwn`yj Bmjvg †g‡n`x,বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় সেচ্ছাসেবী সংস্থা সাউথ এশিয়ান পার্টনারশীপ (স্যাপ বাংলাদেশ ) এর অধীনস্থ সূর্য্যের আলো যুব ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোসাঃ সাজেদার বিরুদ্ধে ভুয়া বাল্যবিয়ে রোধের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৩ অক্টোবর ২০১৭ দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটিয় “১০৭ বাল্য বিবাহ রোধ করেছে যে কিশোরী” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
উক্ত সংবাদের ফলোয়াপ প্রতিবেদনে সরোজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে সাংবাদিকরা দেখেন, সেচ্চাসেবী এনজিও সাউথ এশিয়ান পার্টনারশীপ স্যাপ বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা গ্রামে সূর্য্যেরআলো যুব ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ১০৭টি বাল্য বিয়ে রোধের দাবীদার মোসাঃ সাজেদা (১৬) বরগুনার মাইঠা গ্রামের রিক্সা চালক মোঃ সানাউল্লাহ সানুর মেয়ে যিনি ১০৭টি বাল্য বিয়ে রোধ করেননি।
এ ঘটনার এক অনুসন্ধানীতে জানা যায়, এনজিও স্যাপ বাংলাদেশ সাজেদাকে পূঁজি করে বাল্য বিয়ে রোধের গুজব সৃষ্টি করে বিদেশী দাতা সংস্থাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং ঘটনার সাথে স্যাপ বাংলাদেশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জরিত রয়েছে। সাংবাদিক মান্নু জানান, ১০৭ টি বাল্য বিয়ে রোধের কথিত তালিকার ৬৯ নম্বরের নাম রয়েছে চড়কগাছিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে মোসাঃ সালমা।
সরোজমিনে সালমার বাড়িতে গিয়ে জানা যায় এই বাল্য বিয়ে বন্ধের ঘটনা সম্পুর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট। সালমার বাবা আব্দুস সালাম বলেন, “আমার মেয়ে অনার্সে পড়ে এবং সে লেখা পড়া করে বড় হবে আমি সচেতন বাবা হিসেবে মেয়েকে বাল্য বিয়ে দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমার মেয়ে স্যাপের কিশোরি ক্লাবের সদস্য তার কিভাবে বাল্য বিয়ে দিবো? এসব এনজিওর কারসাজি”।
এ বিষয়ে সালমা জানান,“এ তালিকা সত্য না, সাজেদাকে পুঁজি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে যার বলি আমাদের বানাচ্ছে। আমার মত অনেক মেয়ের নাম রয়েছে ওই তালিকাতে যারা জানেই না তাদের বাল্য বিয়ে রোধ সম্পর্কে”। এ সময় আব্দুস সালাম স্যাপ বাংলাদেশের ফিল্ড অর্গানাইজার দিপংকরকে ফোন দিলে দিপংঙ্কর সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা কথা বলার অনুরোধ করেন। একই গ্রামের হেমায়েত হোসেনের মেয়ে সোনিয়ার (২১) নাম রয়েছে ৯৯ নম্বরে। সোনিয়ার বাবা বলেন, “আমার মেয়েরতো কোন বিয়ের কথাই হয়নি। আমি সচেতন বাবা হিসেবে মেয়েকে বাল্য বিয়ে দেয়ার মত অসচেতন কাজ কথনোই করিনাই তাহলে এনজিও কর্মী ও সাজেদা বাল্য বিয়ে বন্ধ করলো কবে?”। এরকম ৮২ নাম্বারে সোনাখালী গ্রামের সুমনা, পিতা রুহুল আমিন। চড়কগাছিয়া গ্রামের তালিকার ৭০ নাম্বারে তানজিলা, পিতা সোবহান। ৮৭ নাম্বারে শিমুল, পিতা: মাসুম। ৮৯ নাম্বারে সুমি, পিতা: করিম, ৯১ নাম্বারে লিপি, পিতা: আব্দুর রহমান। ৯৭ নাম্বারে মনি, পিতা: সুলতান ঘরামি। ৯৮ নাম্বারে লাবুনী, পিতা: সেলিম। ৯৯ নাম্বারে খাদিজা, পিতা: সত্তারসহ এরকম অসংখ্যা ভূয়া বাল্য বিয়ে রোধে নাম রয়েছে।
এসব অবিভাবকরা স্যাপ ও খাদিজার কর্মকান্ড নিয়ে হতবাক। এ বিষয়ে সাজেদার কাছে জানতে চাওয়া হলে সাজেদা সাংবাদিকদের বলেন,“স্যাপ বাংলাদেশ ও যুব ক্লাবের সহযোগীতায় ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নে ১০৭ টি বাল্য বিয়ে রোধ করেছি ”। ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমার আমলে ইউনিয়নে কোন বাল্য বিয়ে হওয়ার ঘটনা ঘটেনা। আর সাজেদা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। সূর্য্যরে আলো যুব ক্লাবের সভাপতি মহারাজ কাজি সাংবাদিকদের জানান, ১০৭টি বাল্য বিয়ে রোধে খবরটি সত্য না। এখানে আমরা সবাই মিলে কিছু বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু ১০৭ টি বিয়ে রোধের দাবী করা হয়েছে যা সঠিক না এবং আমি এরকম কিছু শুনিনি ,এখানে আমাদের সবার সহযোগিতা ছিল ।
এ বিষয়ে বরগুনায় কর্মরত স্যাপ বাংলাদেশে প্রধান কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল ফারাহ্ সাংবাদিকদের বলেন, “সাজেদা বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের যে দাবী করেছে সে বিষয়টি সম্পূর্ন সাজেদার এবং এই তালিকাটি স্যাপ বাংলাদেশ করেনি। তালিকাটি সঠিক কিনা তা আমি জানিনা। তবে শুনেছি যে ১০৭ টি বাল্য বিয়ে রোধ হয়েছে। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেরুন নাহার মুন্নী সাংবাদিকদের বলেন, অন্যান্য জেলা থেকে বরগুনাতে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতনের হার তুলনামূলক অনেক কম। সাজেদা যদি সত্যি ১০৭টি বাল্য বিয়ে রোধ করে থাকে তাহলে অবশ্যই পুরুস্কার পাওযার দাবীদার আর যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে থাকে তাহলে এর সাথে কারা কারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিত।
বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাজেদার বাল্য বিয়ের তালিকাটি আমরা যাচাই বাছাই করবো। যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই পুরুস্কার পাবে আর যদি মিথ্যা প্রমানিত হয় তাহলে যে বা যারা সাজেদাকে প্রোমট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে একটি ইউনিয়নে ১০৭ টি বাল্য বিবাহ রোধ হয়েছে এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় কেননা এরূপ হলে বরগুনায় কয়েক হাজার বল্য বিবাহ সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, এমন তো হয়নি।