মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল নতুন ভবন কাক্সিখত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা সারে চার বছরেও চালু করা যায়নি
রুবেল মাদবর মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনটি চিকিৎসা সেবার জন্য চালু করা যাচ্ছেনা। এ দিকে পুরাতন ভবনেও কাক্সিখত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। রোগীদের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি রোগীদের সীটের সংখ্যা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই ফ্লোরে চিকিংসা সেবা নিচ্ছে। কবে নাগাদ নতুন হাসপাতালটি চালু করা হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা-ও স্পষ্ট করে বলতে পারছেনা।গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন হাসপাতালে সীট না পেয়ে অনেকে ফ্লোরীং বিছনা করে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। ঠিক তাদের একজন সেবা নিতে আশা রহিমা খাতুন জানান, অ¯^াস্থ্যকর পরিবেশে আজ তিনদিন হলো মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসলাম। সীট না পেয়ে নিচেই ফ্লোরীং করে থাকতে গিয়ে আমি নিজে অসুস্থ্য হয়েছি। অন্যদিকে মুন্নী নামের একজনের সাথে কথা হয়। সে বলেন, আমার মা বাধ্যকজনিত রোগে আক্রান্ত। তাকে সেলাইন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সীট না পেয়ে নিচে ফ্লোরীং করাতে আমার মা আরো বেশি অসুস্থ্য হয়েগেছে। ভাবছি এখান থেকে ভর্তির নাম কেটে অন্যত্রে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিব।এদিকে পুরাতন হাসপাতালের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ শহরের মানিকপুর এলাকায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবন ঘেঁষে নতুনহাসপাতালের পাঁচতলা ভবনটি মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চার পাশ দেয়াল ঘেরা ভবনটির। প্রতিটি তলার কক্ষ, দরজা-জানালার কাজ শেষ হয়েছে। তবে কোনকক্ষে বাতি ও পাখা লাগানো হয়নি। লিফটের জায়গাও ফাঁকা। প্রতিটি ফ্লোর ওকক্ষে ধুলাবালির আস্তর জমে আছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় থাকেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুইজন তত্ববধায়ক।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরানী এন্টার প্রাইজ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ডিসে¤^রের শেষের দিকে ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩শ’৩৩ টাকা ব্যয়ে ধরে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন ভবনটির কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর ২বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসে¤^রে আমাদের কাজ শেষ হয়। আড়াই বছর আগে কাজ শেষ হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তর আমাদের থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেনা। তবে এখনও ভবনে, পানি, গ্যাস, ইলেকট্রিক ও লিফটের কাজ করা হয়নি। এগুলো আমাদের কাজ নয়।স্থানীয় লোকজন বলেন, গত এক বছর ধরেই শুনছি নতুন হাসপাতাল সামনের মাসে চালু করা হবে। সামনের মাস যে কবে সেটা বুঝে উঠতে পারছিনা। কবে এই নতুনহাসপাতাল থেকে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে, তা কেউ জানেনা। হাপাতাল কর্তৃপক্ষও স্পষ্ট করে কিছু বলছেনা। তাদরে দাবি অবিল¤ে^ নতুন হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করতে হবে।এদিকে, প্রায় ১৫ লাখ জন সংখ্যার এইজেলার ১শ’ শয্যার মুন্সীগঞ্জ জেনারেলহাসপাতালটি রোগিদের ঠিক মত সেবা দিতে পারছে না। ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টে¤^র হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যা থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নিতি করা হয়। এহাসপাতালটি ১শ’ শয্যার হলেও তা এখনো চলছে ৫০শয্যার লোকবল দিয়ে।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এখানে গড়ে ৮/৯শ’ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। মাত্র ২০-২২জন ডাক্তার দিয়ে চালানো হচ্ছে হাসপাতালটি। দিন যত যাচ্ছে রোগির চাপও এখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বলে যানায় তাঁরা।চিকিৎসক দেখিয়েছেন এমন কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানাযায়, ২-৩ ঘন্টা লাইনে থেকে চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকতে পারলেও ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এক মিনিটে এক সাথে দেখা হচ্ছে চার-পাঁচজন রোগী। এরপর দায়সারাভাবে দেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থাপত্র। হাসপাতাল থেকে তেমন কোন ঔষধও দেওয়া হচ্ছে না।গত বোধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, হাসপাতালের প্রত্যেক চিকিৎসকের কক্ষের সামনে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। পা ফেলার যায়গাটিও নেই কোথাও। ভর্তি রোগীদের শয্যার চেয়ে হাসপাতালের বারান্দা ও কক্ষের মেঝেতে অ¯^াস্থ্যকর পরিবেশে বেশি থাকতে দেখাগেছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত সিলিং ফ্যান নেই। যে গুলো আছে সে গুলোও ঠিকমত চলছেনা। হাসপাতালের শৌচাগাড় সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপোযোগি। ভিতরে পানির ব্যবস্থা নেই, রোগীদের ব্যবহৃত জিনিস পত্রের ময়লা,স্তুপ আকারে জমা হয়ে আছে।ফাতেমা বেগম নামে একজন বলেন, আমার মেয়েকে অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি থাকতে বলে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডে তাকে নিয়ে আসলে দেখি, হাসপাতালের ভিতরের কক্ষে অনেক রোগী। আফসসের ব্যাপার হচ্ছে আগে যেখানে কয়েকটা বেড ছিল এখনতাও নেই।ভিতরের পরিবেশ টাও খুব খারাপ। তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। বারন্দায়ও থাকার যায়গা নেই। তাই অনেকে ভর্তি হওয়া সত্বেও যায়গানা থাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। হাসপাতালের এমন দূর অবস্থায় আমাদের মতরোগীদের কথা চিন্তা করে যত তারা তারি সম্ভব নতুন ভবনটি চাপলু করা উচিৎ।এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল ভবন মেরামত না করায় এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের তিনটি এ্যা¤^ুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। দুটি সচল থাকলেও কিছু দিন পরপর মেরামত করতে হচ্ছে।মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (আর এমও) ডা. এসএম মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নতুন হাসপাতাল কবে চালু হবে, কি ভাবে হবে আমার এ ব্যপারে কিছু জানা নেই। আমাদের (পুরোনো) হাসপাতাল টি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল ছাড়া কোন রকমে চলছে। নতুন ভবন চালু করতে হলে, নতুন জনবল নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে হবে। তাই যে সব যন্ত্রপাতি দরকার সে গুলো নিয়ে ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার পরই নতুন ভবন চালু করা উচিৎ হবে।গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহি প্রকৌশলি মো. মশিউর রহমান বলেন, আমি মাত্রকয়েকদিন হয় মুন্সীগঞ্জে এসেছি। এ ব্যপারে আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ ছাড়াও লিফট ও ইলেকট্রিকাল কাজ, পানির সংযোগও এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তাই আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বুজে নিতে পারছিনা। তিনি আরো বলেন, এই কাজটা জ্যাইকার প্রজেক্টের আওতায়। জ্যাইকার অর্থায়নে ভবনের কাজ করা হচ্ছিল। এখন ফান্ডে টাকা না থাকায় কাজ গুলো সম্পূর্ণ করা যাচ্ছেনা। তবে আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই কাজ সমাপ্ত করে হাসপাতালকর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে।সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, পুরাতন হাসপাতালে মানুষের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। নতুন ভবনটির কাজ আরো আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ কেন এখনো শেষ করা যায়নি এ ব্যপারেটি নিয়ে খুব শিঘ্রই গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে বসবো।তিনি আরো বলেন, ভবনের কাজ শেষ না হলে জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি কোনটার ব্যবস্থাই করা যাবে না। নতুন হাসপাতালটি কবে থেকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে এ বিষয়টি জানতে চাইলে, তিনিও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।