যশোরের খেজুরের রস সংগ্রহে গাছিদের কর্মব্যাস্ততা শুরু
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ এসে গেছে। সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করেই ‘প্রকৃতির ঘোমটা’ কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ে মেঠোপথ। আর এর মধ্যেই শীতের উপাদেয় খাবার খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে গেছেন গাছিরা। যশোরের যশ, খেজুরের রস এই খ্যাতি দীর্ঘ দিনের। তাই কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ ছেঁটে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন এ এলাকার কৃষকরা। যশোর জেলা বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের গাছিরা এখন খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন । যশোরের ঝিকরগাছা,গদখালী, শার্শা,বেনাপোল,নাভারন,বাগআঁচড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরলে এখন খেজুর গাছ ছাঁটার দৃশ্য চোখে পড়ে মত। আগাম গুড় ও পাটালি উঠলে লাভও বেশ ভালোই হয়। সেই আশাতেই চলতি বছরও গুড় তৈরির দিকে ঝুঁকছে গাছিরা। শার্শা উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়নের বাগআঁচড়া গ্রামের কৃষক আঃ রহমান জানান, তিনি অনেক বছর থেকেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। এ রস থেকে তিনি গুড় ও পাটালি তৈরি করে বেনাপোল ও যশোর নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। আগাম গুড় ও পাটালির দাম ভাল পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ১০ কেজি ওজনের এক ভাড় গুড় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। টেংরা গ্রামের খেজুর গাছি অমেদ আলী জানান, চলতি বছর তিনি ৫০টি খেজুর গাছ কেটেছেন। আশা করছেন আগামী এক সপ্তাহ পর থেকেই প্রতিটি গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। গত বছর তিনি খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লাভ করেন। চলতি বছর আরও বেশি দামে গুড় বিক্রির আশা করছেন। যশোরে আনুমানিক প্রায় ৪ লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই রয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি।
শার্শা উপজেলার কৃষকরা শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে প্রায় তিন লাখ কেজি গুড় উৎপাদন করে থাকেন। একই এলাকার খেজুর গাছি আঃ রহিম জানান, গত বছর ১০ কেজি ওজনের এক কলস গুড় উৎপাদন করতে খরচ হয়েছিল ৫০০ টাকা। আর বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকায়। তবে জ্বালানির দামসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর খরচ আরও কিছু বেশি হতে পারে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক গুড় তৈরির সরঞ্জাম এমনকি জ্বালানিও সংগ্রহ করে ফেলেছেন। আব্দুল মালেক জানান, খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির কাজ শুরু করতে প্রাথমিক সরঞ্জাম ভাড় ও জ্বালানি সংগ্রহ হয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে শার্শা উপজেলার শার্শা ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ন ও তার আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ব্যস্ত গাছিরা দা, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির ভাড় নিয়ে ছুটে চলেছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। গাছিদের প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের গুড়, পাটালি বা রস দিয়েই কয়েকদিন পরেই মুখরোচক পিঠা, পুলি, পায়েস তৈরির ধুম পড়বে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে। শুধু কি তাই? খেজুরের গুড় বা রস দিয়ে তৈরি মুড়ি, চিড়ার মোয়া লেপমুড়ি দেওয়া শীতের সকালে খাওয়ার মজা তো উপভোগ করেন আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই। বৃহত্তর যশোর জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় খেজুর গাছের চারা রোপন করা হয়। এখন সেসব গাছ থেকেও রস উৎপাদন করছেন খেজুর। ইদানিং অন্যান্য চাষের পাশাপাশি কৃষকরা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেজুর গাছের কিছু চারা রোপন করেছেন।