শার্শায় দুইটি নদী থেকে অবৈধ বাধ উচ্ছেদে চাষিদের সুদিন ফিরল
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।
যশোরের শার্শা উপজেলার দুইটি নদী থেকে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদের পর অন্তত পনেরোটি বিলের হাজার হাজার হেক্টর জমির চাষে সুদিন ফিরেছে।এ বছর এসব বিলে দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে।
উপজেলার উপর দিয়ে বেতনা ও কোদলা নদী প্রবাহিত। আর ইছামতি নদী প্রবাহিত হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হয়ে।
কৃষকরা বলছে, প্রতিবছর অগাস্ট মাসে ইছামতি নদী দিয়ে ভারত থেকে উজানের পানি আসে। ওই পানি বেতনা ও কোদলা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বেতনা ও কোদলা নদীতে আড়াআড়ি মাটির বাঁধ ও বাঁশের তৈরি পাটা দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন।
এর ফলে বেতনা ও কোদলা নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায় এবং ইছামতি হয়ে আসা উজানের পানিতে প্রতিবছর প্লাবিত হচ্ছিল সোনামুখী বিল, নটাদিঘা, হরিণাপোতা, নেঙ্গুড়, গয়ড়া, মাকড়া, বল্লী, ডিহি, গোকর্ণ, রুয়ের বিল, খইরির বিল, পটকামারি বিল, চাত্রের বিল, লাউতাড়ার বিল, হেল্লার বিল ও ছাইয়ের বিল।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে বেতনা ও কোদলা নদীর অবৈধ মাটির বাঁধ ও বাঁশের তৈরি পাটা উচ্ছেদ শুরু হয়। এতে এবার পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকায় ওই সকল বিলে ব্যাপক ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, গত বছর উপজেলায় ১৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি; কিন্তু চাষ হয়েছে ২০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার ২হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে।
হিরক বলেন, বেতনা ও কোদলা নদী থেকে বাঁধ উচ্ছেদ হওয়ায় এবার উপজেলার উত্তরাঞ্চলের ১৫টি বিলে জলাবদ্ধতা হয়নি। ওইসব বিলে এবার দুই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার কৃষক উপকৃত হচ্ছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন বিল এলাকা ঘুরে
দেখান যায় বিল জুড়ে শুধু ধান আর ধান। চারদিকে সবুজের সমারোহ। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধানগাছ থেকে শিস বের হচ্ছে। অনেক ক্ষেতে শিস বেরিয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেতে ধান পাকতে শুরু করেছে। সবুজ আর হলুদের রং ক্ষেতজুড়ে।
শোলাকুড়া বিলের এক চাষী নজরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, “এবার বিলি সুনা ফলেছে। খুব ভাল ধান হয়েছে। দুটো খেয়ে পরে এবার বাঁচতি পারব।”
কুলপালা গ্রামের জবের আলী(৪৮) বলেন, “জলাবদ্ধ থাকায় তিন বছর ওই জমিতে ধানের আবাদ করতে পারিনি। এবার পানি সরে গেছে। ৮ বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধান লাগায়ছি। খুব ভালো ধান হয়েছে।”
উপজেলার সুবর্ণখালি গ্রামের আবু সিদ্দিক (৪৬) বলেন, “বিলে আমার পাঁচ বিঘা জমি আছে। তিন চার বছর বিলে কাঁচি নিয়ে যাতি পারিনি। এবার সেখেনে সোনা ফলেছে। ধান দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। পনেরো দিন পর ধান কাটতি পারব।”
কুলপালা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, “বেতনা ও কোদলা নদীর বাঁধ ও পাটা তুলে ফেলায় এবার বিলি পানি দাঁড়ায়নি। বারো বিঘা জমিতি ধান লাগায়ছি। খুব ভালো ধান হয়েছে। ফলনও খুব ভালো পাব বলে আশা করছি।”
শার্শা উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও পুলক কুমার মন্ডল বলেন, “নদী উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী বেতনা ও কোদলা নদী এবং বিভিন্ন খাল থেকে সকল বাঁধ ও পাটা উচ্ছেদ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
“এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সাধারণ মানুষও এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন।”