গাংনীতে কৌশলে যুবককে অপহরণ করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নগদ টাকা ও মটরসাইকেল হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : কৌশলে ডেকে নিয়ে অভিনব কায়দায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা পশ্চিম পাড়ার এক যুবককে অপহরন করে তার মটর সাইকেল ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তোভুগি যুবক মৃত আজিজুল হকের ছেলে নাসির। ঘটনাটি ঘটে ২০ নভেম্বর সোমবার সকালে উপজেলার হিন্দা পলাশী পাড়া গ্রামের মাঠের মধ্যে। এ সময় যুবকের কাছে থাকা নগদ ১১শ’ টাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান অপহৃত যুবক নাসির। 

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সোমবার সকালে সহড়াতলা গ্রামের জবেদের ছেলে হাবিব ওরফে মিন্টু ফোন করে তাকে তার সাথে নঙপাড়া বাজারে যেতে অনুরোধ করে। কিন্তু অপহৃত যুবক রাজি না হলে সে বারবার তাকে অনুরোধ করতে থাকলে সে যেতে পারবেনা বলে হাবিব ওরফে মিন্টু কে মটরসাইকেল নিয়ে যেতে বলে। হাবিব ওরফে মিন্টুর সাথে যুবক নাসিরের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি। 

এতো কিছুর পরও যখন সে বারবার তাকে সাথে যেতে বলে তখন সে তার বন্ধু হাবিব ওরফে মিন্টুর কাছে জানতে চায় দেরি হলে যেতে পারবেনা। তখন সে ৫ মিনিটের কাজ বলে ডেকে নেয়। পরে নাসির মটর সাইকেল নিয়ে হাবিব ওরফে মিন্টুর বাড়ি সহড়াতলা বর্ডার পাড়ায় যায়। সেখান থেকে হাবিব ওরফে মিন্টু মটরসাইকেল নিয়ে নওপাড়া বাজারে আসে এবং ৫ মিনিট মতো অপেক্ষা করে এবং কোন এক জায়গায় ফোন করে। এর পর হাবিব ওরফে মিন্টু নাসিরকে দ্রুত মটরসাইকেলে উঠতে বলে এ সময় নাসির সিঙ্গাড়া খাচ্ছিলো সে একটু অপেক্ষা করতে বলে কিন্তু তাতে হাবিব ওরফে মিন্টু অধর্য্য হয়ে বিচলিত হতে থাকে বলে নাসির বুঝতে পারে। তখন সে খাওয়া শেষ করে মটর সাইকেলে উঠে পড়ে।

ভুক্তোভুগি নাসির আরো জানান, নওপাড়া বাজার থেকে দ্রুত সে কুলবাড়িয়া, হিজলবাড়িয়া হয়ে হিন্দা গ্রামের দিকে আসতে থাকে এ সময় নাসির তাকে ধলা মাইলমারি হয়ে যেতে বলে কিন্তু হাবিব ওরফে মিন্টু তার কথা না শুনে হিন্দা গ্রামের মেম্বরের সাথে দরকারি কথা আছে বলে সে তাকে অভয় দিতে থাকে। বলে “তোমার ভয় নাই।” এভাবে সরল বিশ্বাসে নাসির তার সাথে আসতে থাকে হিন্দা ক্যাম্প রোডে পৌছলে হাবিব ওরফে মিন্টু  মোবাইল ফোনে জনৈক এক ব্যাক্তিকে ঠিকানা দিয়ে দ্রুত আসতে বলে। পরে মটরসাইকেল চালিয়ে হিন্দা ও পলাশি গ্রামের ফাকা মাঠে পৌছলে থেমে থাকা একটি মাইক্রো গাড়ি থেকে তিন জনের মতো লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে ঐ গাড়িতে তুলে ফেলে মারধর করতে করতে চোখ মুখ বেধে ফেলে এবং আবারো মারতে থাকে। ভুক্তোভুগি যুবক নাসির আরো জানান, গোপাল নগর লুৎফন্নেসা স্কুলে পৌছলে তারা গাড়ি থামিয়ে ইসমাইল নামের একজন কে ফোন দেয় তারা তার কথা মতো সাদা স্টৗাস্পের উপর জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। যারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে আসে তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউছার  আকবর ও আহম্মদ  নামে তিন জনের নাম উল্লেখ করে। উল্লেখিত তিন জনের বাড়ি গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামে।

সাদা স্ট্যাস্পে স্বাক্ষর করার পর থেকে চলতে থাকে তার উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এর পর আরো তিনটি স্ট্যাম্পের উপর তারা জোর করে স্বাক্ষর করে নেয় বলে জানায় ভুক্তোভুগি নাসির উদ্দিন।

শুধু তাই নয় তাকে গোপালনগর গ্রামের আকবর নামের একজনের বাড়িতে আটকিয়ে রেখে এক লাখ টাকা মুক্তিপন চাই বলে জানান অপহৃত নাসির উদ্দিন। এখবর পেয়ে নাসিরের শশুর ও তার স্ত্রী তার মুক্তিপন বাবদ একলাখ টাকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বলে জানান নাসির উদ্দিন। তিনি আরো জানান আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সময় তারা আবারো একটি সাদা স্ট্যাস্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তিনি জানান ঘটনার পরের দিন মটরসাইকেল চাইতে গেলে তারা আবারো ২০ হাজার টাকা চায় এবং বলে ২০ হাজার টাকা না দিলে মটর সাইকেল দেওয়া হবেনা। নাসির উদ্দিন তাদের কথা মতো টাকা দিলেও আজও মটরসাইকেল দেয়নি বলে জানান নাসির উদ্দিন। ছিনিয়ে নেওয়া মটরসাইকেল হলো ডিস্কভারি ১৩৫ সিসি লাল রঙের গাড়ি যার নং কুষ্টিয়া ল-১১-০৫২১।

এদিকে গাড়ির বিষয়ে হাবিবকে নাসির জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছুই জানেন না বলে পুরো ঘটনা এড়িয়ে চলেন। কি›তু চাপাপাপি করলে হাবিব ওরফে মিন্টু জানান গাড়িটি গোপাল নগর গ্রামের আকবরের ছেলে কাউছারের কাছে আছে। 

 এদিকে হাবিব ওরফে মিন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা দুজনে নওপাড়া গ্রামে গিয়েছিলাম কথা সত্য কিন্তু পরে ফেরার পথে আমাদের পথরোধ করে মাইক্রো থেকে তিনজন লোক গাড়িটি ছিনিয়ে নেয় এবং আমার সাথে থাকা নাসিরকে অপহরন করে নিয়ে যায়। এলাকাবাসির মধ্যে রহস্য দেখা দিয়েছে হাবিব ওরফে মিন্টু কে কোন প্রকার মারধর করা ছাড়া মটরসাইকেল নিয়ে গেল, তাছাড়া হাবিব ওরফে মিন্টু তাদেরকে কোন প্রকার বাধাও দেয়নি এমনকি চিৎকার চেচামেচিও করেনি। এলাকাবাসি ও ভুক্তোভুগিরা মনে করেন এ কাজে হাবিব ওরফে মিন্টু সহযোগিতা রয়েছে। তাছাড়া হাবিব এলাকায় আদম দালাল বলে ব্যপক পরিচিতি রয়েছে। এমনকি একটি এনজিওতে ঋনখেলাপি হয়ে তার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তোভুগি নাসিরের বড় ভাই সমিরুদ্দিন বাদি হয়ে গাংনী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।

গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তভার পিরতলা ক্যাম্প ইনচার্জ আলি রেজাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।