একটিও ভালো রাস্তা নেই রাজশাহীতে!
রাজশাহী নগরীতে ছোট-বড় সব মিলিয়ে আড়াইশ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর বেশিরভাগ সড়কই খানাখন্দে ভরা, কোথাও কোথাও পিচ সরে গিয়ে খোয়া বের হয়ে গেছে। রাস্তাগুলো এতটাই ভাঙাচোরা যে হাঁটাও দায়। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। নগরীতে ভালো রাস্তা নেই বললেই চলে।
নগরবাসীর ভাষ্য, এসব সড়কে দিয়ে যাতায়াতের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এজন্য রিকশা-অটোরিকশায় স্থির হয়ে বসে থাকা যায় না। ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। খানাখন্দের কারণে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর শুকনো মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি ওড়ে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর তালাইমারী মোড়ের রাস্তা ভেঙে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তালাইমারী-ভদ্রা সড়কেরও একই অবস্থা। এ সড়কের বেশিরভাগ অংশের পিচ উঠে গেছে। ভদ্রা মোড় থেকে শিরোইলে যাওয়ার রাস্তাও গর্তে ভরা। ভদ্রার মোড় থেকে পদ্মা আবাসিক এলাকা এবং পদ্মা আবাসিক এলাকা থেকে নওদাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ। এর বাইরে রেলওয়ে কোয়ার্টার এলাকার রাস্তার প্রায় ১০০ গজের মধ্যে ৮-১০ জায়গায় বড় গর্ত দেখা গেছে। এ রাস্তা দিয়ে একটি ট্রাক বা বাস গেলে ছোট যানবাহনকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নগরীর খরখড়ি-বাইপাস সড়কেরও বেহাল দশা।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাগুলোর এমন বেহাল অবস্থা অনেক আগে থেকেই। বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী সড়ক পরিবহনের নেতাকর্মীরা ভদ্রার রেলওয়ে কোয়ার্টারের পেছনের সড়কে মাটি ও ভাঙা ইট ফেলেন। কয়েকদিন আগেও এখানে খোয়াও ফেলা হয়। কিন্তু সেই মাটি ও ইট আবার দেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, কয়েকদিন আগে শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়কের সংস্কারের কাজ শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। রাসিকের একটি গাড়ি দিয়ে রাস্তার কার্পেটিং তুলে ফেলা হয়। কিন্তু এরপর আর কোনও কাজ করা হয়নি। এতে এ সড়কে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে, যানবাহন চলাচল দূরে থাক, হাঁটাচলাই কষ্টকর। এ সড়ক দিয়ে যেসব যান চলতো, তা এখন অন্য পাশ দিয়ে চলাচল করে। এতে এ সড়কে তীব্র যানজট লেগেই থাকে।
বাসচালক আলী হোসেন বলেন, ‘উপায় না থাকায় এসব সড়ক দিয়েই গাড়ি চালাতে হয়। সড়কগুলোর সংস্কার হচ্ছে হচ্ছে করেই কেটে গেছে কয়েক বছর। রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতেও কেটেছে কয়েক মাস। এরপর একসময় রাস্তার পাশের ঘরবাড়ি ভাঙা হলেও রাস্তার কাজ আর শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ।’
অটো-রিকশাচালক সোহান বলেন, ‘রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। অটো চালাতে অনেক কষ্ট হয়।’
নগরীর দেবীশিংপাড়ার আরিফ হোসেন বলেন, ‘সড়কগুলোর অবস্থা খারাপ হওয়ার পরও সিটি করপোরেশন সংস্কার করে না। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে এখন ধুলাবালি খেতে হয়। আর বৃষ্টির দিনগুলোতে কাদা-পানি মাখতে হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে মেহেরচণ্ডি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনের রাস্তাটির সংস্কারের কাজ থমকে আছে। পাকা করার কথা থাকলেও রাস্তাটিতে কেবল ইটের খোয়া ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। তাও প্রায় চার বছর আগে। আর এরই মধ্যে এ রাস্তার দুই পাশের ৫-৬ জায়গা ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নেওয়ার জন্য রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লা আল তারিক বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের মাঝ থেকে এ রাস্তার কাজ শুরু করা হবে, যা শেষ হবে খরখড়ির বাইপাসে গিয়ে। পুরো রাস্তা চার লেনের হবে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’
রাসিক ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, ‘কোথাও কোথাও সংস্কার কাজ শুরু হলেও থেমে আছে। কিন্তু কেন থেমে আছে, তা আমার জানা নাই। আপাতত আমার ওয়ার্ডে কোনও কাজ হচ্ছে না। আমরা চাহিদাপত্র পঠিয়েছি।’
রাসিকের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আনোয়ারুল আমিন আজব বলেন, ‘সপ্তাহে দু’দিন ইট ও বালু ফেলতে হয় তালাইমারী থেকে শুভ পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত সড়কে। টেন্ডার হচ্ছে না, রাস্তাটির সংস্কারও হচ্ছে না।’
রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৫০ কিলোমিটারের সংস্কারের কাজের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে। আবার অনেক রাস্তার সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়নি, তবে তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংস্কারের জন্য একক প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এছাড়া সিটি করপোরেশেনের নিজস্ব বরাদ্দের আওতায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লার রাস্তার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, কাজ ঠিকমতো হয়ে গেলে নগরবাসীকে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’