বদলগাছীতে দুই বছরেও রাস্তা পাকাকরণ না করেই কাজের বিল উত্তোলন
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলাধীন বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BMDA) কৃষিপণ্য বাজারজাত করণের গ্রামীণ যোগাযোগ প্রকল্পের আওতাধীন নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার সাগরপুর থেকে সন্ন্যাসতলী পর্যন্ত একটি সড়ক পাকাকরণ কাজের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ গেছে।
উক্ত রাস্তার পাকাকরণ কাজ না করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কে বিল দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর আগে রাস্তাটির পাকাকরণ করার কাজ শুরু হলেও আজও সেই সেই রাস্তা পাকাকরণ না হওয়ায় কৃষিনির্ভরশীল এলাকার লোকজনের চলাচল চরম দূর্ভোগে পরেছে।
এমন একটি অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ পেয়ে অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক সহ (চ্যানেল ফোর টিভি) ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে রাস্তাটির পাশে একটি হলুদ রঙ্গের সাইনর্বোড লাগানো রয়েছে যে সাইনর্বোডে লেখা রয়েছে প্রকল্পের নামঃ কৃষিপণ্য বাজারজাত করণে গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প।
সাগরপুর পাকা রাস্তা হতে সন্ন্যাসতলী পর্যন্ত। সড়কের দৈর্ঘ্যঃ পরিমাণ মুছে ফেলা হয়েছে। বোর্ডে নির্মাণ সাল দেয়া আছে (২০১৫-২০১৬) এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানঃ এস,এস বিল্ডাস হাতেম খাঁ, রাজশাহী। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নাম: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সাইনর্বোডের পিছন থেকে পুরো রাস্তাটিই এখনো মাটির কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তাটি এতটায় খারাপ যে যাত্রীবাহী যানবাহন তো দূরের কথা মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়ে।
সাগরপুর গ্রামের বেশ জন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায় যে উক্ত রাস্তার কাজের জন্য প্রায় দুই বছর আগে এই সাইনর্বোডটি লাগানো হয়েছে। এরপর সেই সময় ঠিকাদারের লোকজন এসে রাস্তাটির পাশে কয়েকটি ইটের খোয়া স্তুপ করে রাখেন। পরে তারা রাস্তার কিছু জায়গায় খোয়া ফেলে যান। এরপর থেকে এই রাস্তার কাজের জন্য আর কেউ আসেনি। এখন রাস্তা টি শুধুই সাইনর্বোড সবর্স্ব ছাড়া আর কিছুই নেই।
দীর্ঘদিন পাকাকরণের কাজ না হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ধুলা-বালুতে পায়ে হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে আর বর্ষার মৌসুমে কাঁদা-মাটিতে একাকার হয়ে যায় থইথই। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে পাকাকরণ না হওয়ায় লোকজন চলাচলের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সাগরপুর গ্রামবাসী অভিযোগ তুলে বলেন এ কেমন নিয়মে যে রাস্তাটি আজও পাকাকরণ করা হয়নি। শুধু রাস্তার পাকাকরণের সাইনর্বোড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি বলে সাগরপুরের বাসিন্দারা দুঃখের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বদলগাছী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাগরপুর-সন্ন্যাসতলী পর্যন্ত সড়ক পাকাকরণ কাজ শুরু হয়েছিলো। কিন্তু এখনো কাজটি শেষ করতে পারেন নি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল তারা শিঘ্রই রাস্তা টি পাকাকরণের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার কত টাকা বিল উত্তোলন করেছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। তাই ঠিকাদারকে পাঁচ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BMDA) বদলগাছীর সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় থাকা নথিপত্র ঘেঁটে প্রকৌশলীর বক্তব্যের সঙ্গে বিল উত্তোলনের গরমিল পাওয়া গিয়েছে।
নথিতে দেখা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে কৃষিপণ্য বাজারজাত করণে গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজে সাগরপুর-সন্ন্যাসতলী পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ও ভেরেন্ডি গন্ধর্বপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পাকা সড়কের শেষ মাথা থেকে নুনুজহাট খোলা পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়কপাকা করণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। এস,এস বিল্ডার্স, ৩৫ হেতেম খাঁ, রাজশাহীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে গত ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার ওপরে বিল উত্তোলন করেছে। কাজের প্রাক্কলিত অর্থ কত তা নথিতে উল্লেখ নেই।
সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাগরপুর-সন্ন্যাসতলী পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৮৫ ও গর্ন্ধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকার মাথা থেকে নুনুজহাটখোলা পর্যন্ত সড়ক পাকাকরণে মোট ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এরমধ্যে সাববেজে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯ টাকা ধরা ছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সাববেজের ভ্যাটসহ ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এরপর ঠিকাদার আর কাজ করতে আসেন নি। একারণে সড়কটি দুই বছর ধরে পড়ে আছে।
এস,এস বির্ন্ডাসের প্যাডে থাকা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একব্যক্তি নিজেকে শিমুল পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি এস,এস বিল্ডার্সের মালিকের ছেলে। আমরা সাগরপুর-সন্ন্যাসতলা পর্যন্ত সড়ক পাকাকরণের কাজটি পেয়েছিলাম। আমরা তাপস নামে রাজশাহীর এক ঠিকাদারের কাছে কাজটি বিক্রি দিয়েছি। আমাদের ঠিকাদারী লাইসেন্সে ঠিকাদার তাপস কাজটি করেছেন। আপনি বদলগাছীর বরেন্দ্র কার্যালয়ে যাওয়ার পর মোবাইল ফোনে আমাদেরকে কাজটি শুরু করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আপনাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেওয়া সেহেতু দায়ভার আপনাদের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা কাজটি করিনি সেটি বরেন্দ্র অফিস জানে। তিনি ঠিকাদার তাপসের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার তাপস বলেন, আমি এস,এস বিল্ডার্সের কাছে কাজটি কিনেছি। প্রথম দফায় সাববেসের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। নুনুজহাটখোলা শূন্য দশমিক ৩০ কিলোমিটার কাজটি করতে গিয়ে সেখানকার জনগনের বাঁধায় কাজটি করা যায়নি। তাহলে বিল উত্তোলন করলেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই কাজটি শুরু কবর। তিনি এ বিষয়ে পত্র পত্রিকা সহ ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের এই খবর প্রকাশ না করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন।