গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের আরশাব আলী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন॥
এম এ লিংকন,মেহেরপুরঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের এক ব্যাক্তি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, গাড়াডোব গ্রামের মৃত আঃ করিম শেখ এর ছেলে মোঃ আরশাব আলী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তি যুদ্ধ চলাকালিন সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার হারদি গ্রামে বসবাস করতো। সে সময় তিনি পাকিস্তানী হানাদারদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতো বলেও একটি সুত্র জানায়। সে সময় ঐ এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা কে কোথায় অবস্থান করতো সে খবর নিয়ে পাক হানাদারদের কাছে পৌছে দিতো। তাছাড়াও অভিযোগ আছে যুদ্ধকালিন সময় আরশাব আলী এলাকার জনসাধারণের গৃহপালিত পশু পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিতো তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য। তবে আরশাব আলী এসব কথা অস্বীকার করেন। আরশাব আলী দাবি করেন সে রাজাকার নয় বরং মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। যে কারণে তাকে ঐ সময় এলাকার প্রভাবশালী আনিস খাঁ তৎকালিন সময়ের মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার খবর পেয়ে তিনি আরশাব আলীর ঘরবাড়ি লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিলেন তাদের হত্যা করার জন্য। আরশাব আলী আরো জানান, আনিস খাঁ নিজে রাজাকার ছিলেন এবং আমরা মুক্তিযুদ্ধোর পক্ষের লোক ছিলাম বলে আমাদের বিভিন্ন সময় অত্যাচার করতো। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঐ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আরশাব আলী সাংবাদিকদের জানায়, সে সময় আনিস খাঁ আমাদের বাড়ি লক্ষ করে গুলি ছুড়ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মুক্তিকামি মানুষ বিভিন্ন সময় পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত হতো বলে ইতিহাস স্বাক্ষি দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন যুদ্ধ বিরোধী ও পাকবাহিনীরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা কেন তার ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে আরশাব আলী সদুত্তর দিতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন কাগজ পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে আরশাব আলী জানায়, আমি মুর্খ মানুষ আর সে সময় আনিস খাঁ এর লোকজন বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে কাগজ পত্র পুড়ে যেতে পারে। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছর পর নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি করার চেষ্টা কেন জানতে চাওয়া হলে আরশাব আলী জানায় বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সম্মান তাই এখন চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমঝুপি ইউনিয়ন কমান্ডার আঃ জলিল জানান, গাড়াডোব গ্রামের আরশাব আলী তার নাম অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করলে আমরা তাকে গাংনী উপজেলা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করি এর পরও সে আমার কাছে ২ থেকে ৩ মাস ঘুরতে থাকে। পরে তার সম্পর্কে গাড়াডোব এলাকায় খোঁজ নিলে আরশাব আলী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেননা বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা আঃ জলিল জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একজন মুক্তিযোদ্ধা কেন তার বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসবে তাও আবার একজন রাজাকারের ভয়ে এটা আমার বোধগম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধা আঃ জলিল আরো জানান, তিনি যে আলমডাঙ্গা এলাকার হারদি গ্রামের বাসিন্দা এটা আমাদেরকে জানায়নি। যেহেতু আরশাব আলীর দাবির প্রেক্ষিতে জানা যায়, সে আলমডাঙ্গা এলাকায় মুক্তিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে সেহেতু তার নাম চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় হওয়া উচিৎ। আরশাব আলীর নামের তালিকা কেন মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসবে এমন প্রশ্নের জবাব আরশাব আলী দিতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাড়াডোব গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি জানান আরশাব আলী এক সময় হারদি এলাকার রাজাকার ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তার অত্যাচারে সে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে ওঠে। পরে দেশ স্বাধীন হলে সে ও তার বড় ভাই নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আমাদেরর গাড়াডোব গ্রামের পুকুর পাড়ায় বিয়ে করে বসবাস শুরু করে। এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের যে মুল্যায়ন করেছেন এটা দেখে অনেক যুদ্ধাপরাধিও চায় সে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হোক। তবে আমরা ভুয়া কোন ব্যাক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে দেবনা আর এদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।