আজ ১৩ জানুয়ারি হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস ২২ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি নিহত আহত পরিবার
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ নিরেন দাস।
আজ ১৩ জানুয়ারি বাংলার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটেছিল হাকিমপুর উপজেলার বাংলা হিলিতে যা হিলি বাসী প্রতি বছর ১৩ জানুয়ারি নিহতদের শরণে ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস পালন করে থাকে।
১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি এমন তীব্র কনকনে শীতের রাতে সীমান্ত ঘেঁষা বাংলা হিলির রেল স্টেশনে হৃদয় কাঁপানো মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই ভয়াবহ দিনের কথা আজও হিলি বাসী ভুলে নাই বরং হিলি বাসী সেই মর্মান্তিক ট্রেন দূর্ঘটনার দিনটি স্বরভক্তি রুপে আজকের দিনটি দিবস হিসেবে পালন করে। কেননা সেই মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০০ শতজন যাত্রী আহত হয়। আর এলাকাবাসী সূত্রে তথাৎ বেসরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক হলেও সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা মাত্র ২৭ জন নিহত হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার রাত্রী ৯ টা ৩০ মিনিটে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার বাংলা হিলি রেলওয়ে স্টেশনের গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আসা পার্বতীপুর গামী যাত্রীবাহী ৫১১ নং লোকাল ট্রেন টি স্টেশনের ১ নং লাইনে দাঁড়িয়েছিল।
কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টস ম্যানের দায়িত্বহীন তার কারণে ১ নং লাইনে ঢুকে পড়ে সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনা গামী দূত গতির যাত্রীবাহী আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এক মুহূর্তেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংর্ঘষে বিকট শব্দ ও শত শত যাত্রীদের আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে উঠে ভারত হিলি ও বাংলা হিলির আকাশ-বাতাস। দুমড়ে মুচড়ে যায় লোকাল ট্রেন ২ টি ইঞ্জিন সহ ৪টি বগি।
ততকালিন বিডিআর অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের উদ্ধার করতে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পরে। হিলির সাধারণ মানুষ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে উক্ত দুর্ঘটনায় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
পরদিন ১৪ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদ জিয়া ছুটে আসেন বাংলা হিলির রেলষ্টেশনে। তিনি ঘটনাস্থল সহ নিহতদের লাশের সারি পরিদর্শন করে ঘোষণা দেন আহত ও নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন বেগম জিয়া এমননি অবস্থায়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ি পৌরসভার চকচকা গ্রামের মৃত সুনীল চন্দ্রের বড় ছেলে সুকুমার (৩০) সেই দিন ৫১১ নং লোকাল ট্রেন ধরে বাসায় ফিরছিলেন।
দুর্ঘটনার পরঅপদি সুকুমার কে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ করে আজও পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেই সময় হিলি রেল দুর্ঘটনার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সুনীলচন্দ্র উপস্থিত হয়ে তার ছেলের ব্যাপারে দুটি দরখাস্ত পেশ করেন। কিন্তু তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, কোন প্রকার প্রমাণ বা ডেট বডি ছাড়া তারা কিছু করতে পারবে না। অথচ সেই দিন ৫১১ নং লোকাল ট্রেনে সুকুমারের আত্মীয় সুকুমার কে তুলে দিয়েছিল ফুলবাড়ি তে আসার জন্য।
এমন সুকুমারের মত আরও অনেকেই আজও নিখোঁজ ঐ দুর্ঘটনায় বেসরকারি ভাবে নিহতের সংখ্যা শতাধিক হলেও সরকারি ভাবে নিহতের সংখ্যা ঘোষণা করা হয় মাত্র ২৭ জন। আর আহত হয় ৩ শতাধিক যাত্রী। সেই দূর্ঘটনায় আহতদের অনেকে এখনো পঙ্গত্ববরণ করে ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার ২২ বছর কেঁটে যাচ্ছে কিন্তু দুর্ঘটনার নিহত ও আহত পরিবার গুলিকে সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন পরিবারও প্রতিশ্রুতির সহযোগীতার একটি টাকাও পায়নি। এমনকি সেই দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হলেও আজও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সেই তদন্ত রিপোর্ট।
সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মনে হয়না আর কখনো আলোর মুখ দেখবে।
কিন্তু গায়ক গানে গানে তো বলেই গেছেনঃ- (মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য) যাহার প্রমাণ ২২ বছর ধরে হিলিবাসী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে করে যাচ্ছে।
ঠিক সেই মানবতার দিকে তাকিয়ে বাংলা হিলি বাসী আজকের এই দিন প্রতি বছরই স্মরণ করে সীমান্তবর্তী সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কথা শরণ করে হিলি শহরে পালিত হয় হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস।
দিবসটি পালন কালে আজ হিলি বাসী নিহতদের স্মরণে সকলেই কালো ব্যাচ ধারন করবে,তারপর আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া খায়ের সহ বেদনাময় শোকাহত বিভিন্ন আয়োজনে হিলি বাসী আজ এই দিবসটি পালন করবে।