বহিরাগত মেডিকেল এসিসটেন্ট দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র
টি.আই সানি, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
তানজিলা (২২)এমবিবিএস ডিগ্রিধারী না ,আবার হাসপাতালেরও কেউ না, বেসরকারীভাবে চিকিৎসা সহকারী বিষয়ে পড়াশোনা করে বাবার চাকুরীর সূত্র ধরে সরকারী হাসপাতালের বর্হিবিভাগের চিকিৎসকের চেয়ারে বসে রোগীদের ব্যবস্থা পত্র দিচ্ছেন। যা করছেন গত ১ বৎসর যাবৎ। তাঁর বাবা শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র মেকানিক মো. জাহাঙ্গীর আহমেদ। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বিষয়ের কারণ জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক সংকটের কথা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, পেটে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন কলেজ ছাত্র রায়হান। হাসপাতালের সরকার নির্ধারিত হারে টিকিট কাটার পর তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষে পাঠিয়ে দেন টিকেট প্রদানকারী অফিস সহায়ক আব্দুস সামাদ। সেখানে পূর্বে থাকা অন্যান্য রোগীসহ রায়হানের সাথে কথা বার্তা বলে হাসপাতালের প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন তানজিলা। পরে, খোঁজ নিয়ে জানা গেল তানজিলা হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন চিকিৎসক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীও নয়, তাঁর বাবা হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক জাহাঙ্গীর আহমেদ এই হাসপাতালে চাকুরী করেন, সেই সুবাদে মেডিকেল এসিসটেন্ট(চিকিৎসা সহকারী) বিষয়ে পড়াশোনার পর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এখানে বসে রোগী দেখছেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মইনুল হক খান জানান, তৃণমূলে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও সেবার কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার ২০১৭ সালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০শয্যায় উন্নীত করে। শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুরে এই হাপাতালে প্রতিদিন গড়ে ছয়শত রোগী চিকিৎসা নেন। এ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের পদ ১২জন পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩জন। কনসালটন্টের ৫ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন চারজন। কনসালটেন্টেরা বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় জরুরী বিভাগ ও বর্হিবিভাগ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জনকে বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্হিবিভাগে রোগীদের চাপ সামাল দিতে আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসারকেও সবধরনের রোগী দেখতে হচ্ছে। অস্ত্রোপ্রচার কার্যক্রমের জন্য অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও এনেসথেসিয়া (চেতনাহীন) চিকিৎসকের অভাবে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।
উজিলাব গ্রামের লাইলী বেগম (৩৬) শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য টিকেট কেটে বর্হিবিভাগের ৯ নাম্বার রুমে চিকিৎসা নিয়েছেন। যেখানে প্রতিদিনের মত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার বিলকিস আক্তার। তাকে রোগীর চাপ সামলাতে সকল বিভাগের রোগী দেখতে হয়, বিধায় ব্যবস্থাপত্রে সব ধরনের ঔষধ লিখতে হয়। বাধ্য হয়েই বেশীর ভাগ ঔষধই আয়ুর্বেদিক ছাড়া লিখতে হয়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ারা ফেরদৌসী জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খিতে হচ্ছে তাদের। তবে বর্হিবিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্বপালন করা তানজিলা কিভাবে দায়িত্বপালন করছেন সে বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মইনুল হক খান আরো জানান, তানজিলা মেডিকেল এসিসটেন্ট বিষয়ে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা পাশ করা। তিনি ইতোমধ্যে মেডিকেল অফিসারদের সঙ্গে কাজ করে অনেকটাই অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসক সংকটের কারণে তানজিলাকে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে তিনি এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন স্টাফ নন। তাকে যদি বাদ দেয়া হয় তবে বহির্বিভাগের একটি কক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া তানজিলার বাবা এ হাসপাতালেরই একজন স্টাফ বলে তার মেয়েকে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পেলে তাকে আর প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: সৈয়দ মো. মঞ্জুরুল হক জানান, হাসপাতালে চাকুরী করা স্টাফ ছাড়া বহিরাগতদের রোগী দেখার নিয়ম নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, এ রকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।