শুধু দুর্নীতিই না এবার গাংনীর চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামার কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় সাধারণ কৃষকদের ১০ বিঘা ফসলের জমি পানির নিচে
এম এ লিংকন,মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ কর্তৃপক্ষ উদাসিন নানান অনীয়ম যেখানে নিত্য দিনের স্বাভাবিক ঘটনা।অনীয়ম ছাড়া একটি দিন অতিবাহিত হওয়াকে এখানে অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত করা হয়। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাধীন চিৎলা পাট বীজ খামারে চলে অনীয়মের প্রতিযোগিতা। এখানে যে যত অনীয়ম করবে সে ততই সফল বলে বিবেচিত হয়। ভিতরে অনীয়মতো খুবই স্বাভাবিক এখানকার কর্মকর্তারা বাইরের লোকজনও তাদের অত্যাচারে রেহায় পাচ্ছেন না। এ প্রতিষ্ঠানটির অনীয়মের খবর এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর কিছুদিন ভালো থাকলেও আবারো অনীয়ম কর্মকান্ড চালু করে। চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে তিন জন ডি এ ডি তিনটি ব্লকের দ্বায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনজন ডিএডি হলো দক্ষিন ব্লকের মোঃ ইমদাদ হোসেন, উত্তর ব্লকের আঃ বাতেন ও মধ্য ব্লকে অনিমেষ বাবু। এই তিন ডিএডির মধ্যে অনিমেষ বাবু নতুন যোগদান করেছেন। আর বাকি দুজন প্রায় ১২ বছরের অধিক সময় এখানে অনীয়ম কায়েম করে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়। দক্ষিণ ব্লকের পশ্চিম পাশে খামার সংলগ্ন স্থানীয় কৃষকদের আবাদি জমি রয়েছে। সেখানে কৃষকরা বিভিন্ন প্রকারের ফসল লাগিয়েছেন এবং নতুন ধানের বীজতলা করেছেন। কৃষকদের মতে খুব ভালো অবস্থা ছিলো তাদের ফসল ও বীজ তলার। কিন্ত বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে দক্ষিণ ব্লকের দ্বায়িত্বে থাকা ডিএডি ইমদাদ হোসেন এর উদাসিনতা। তার উদাসিনতার কারণে কৃষকদের প্রায় ১০ বিঘা ফসলি জমি বর্তমানে পানির নিচে। এলাকার গরীব কৃষক মানব সৃষ্ট অর্থাৎ চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের ডিএডি মোঃ এমদাদ হোসেন এর খামখেয়ালি পনায় স্থানীয় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে আজ দিশেহারা। পানির নিচে এলাকার ১০ বিঘা জমিতে ধানের বীজতলা উঠতি ফসল ও নতুন ধান রয়েছে। পানির নিচে চলে যাওয়ায় জমির ঐ ফসল গুলো সব বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে ভুক্তোভুগি কৃষকরা জানান। কৃষকরা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যাক্তিদের জানালেও তারা কৃষকদের কোন কথাতে কান দেননি বলে জানান ভুক্তোভুগি কৃষকরা। ভুক্তোভুগি কৃষকরা তাদের এ ক্ষতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন। এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দক্ষিণ ব্লকে দ্বায়িত্বে থাকা ডি এ ডি এমদাদ হোসেন জানান, পানি সাধারণ চাষিদের জমিতে গেছে এ বিষয়টি আমাদের তারা জানিয়েছে। এটা আমাদের দ্বায়িত্বের অবহেলা নয়। বরং তাদের জমি নিচে হওয়ায় অনেক সময় পানি নিচের দিকে যেতে পারে। তাছাড়া স্থানীয় কৃষকরা নিজেরা আমাদের জমির আইল কেটে পানি নিয়ে থাকে। কৃষকরা তাদের নিজের ক্ষতি কেন করবে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ডি এ ডি এমদাদ হোসেন। চিৎলা পাট বীজ খামারের কর্তৃপক্ষের এখানেই খামখেয়ালি পনার শেষ নয় বলে স্থানীয়রা আরো জানান, দীর্ঘ দিন যাবৎ এখানে ডি এ ডি হিসেবে তারা কর্মরত আছেন। তারা এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পন্য সম্পর্কে সরকারের কাছে সঠিক তথ্য দেয়না। জানা যায়, চলতি মৌসুমে চিৎলা পাট বীজ খামারে পাটের বীজ উৎপাদনে ব্যাপক পুকুরচুরির ঘটনা ঘটছে। পাটের বীজ বা তুষা ছাড়ানোর পর তার কাঠি বা খড়ি গুলো প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রয় করার নিয়ম থাকলেও এখাসে গোপনে নিলাম ডাকা হয় আর কাগজে কলমে নিয়ম রক্ষা করা হয় মাত্র। পাটের খড়ি কখন বা কোথায় কার কাছে নিলাম দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়টি শুধু মাত্র ঐ তিন ডি এ ডি আর এর ক্রেতারাই জানেন। পাটের বীজের বিষয়ে অনীয়মের বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এক্ষেত্রে সু-কৌশলে বড় ধরনের অনীয়ম করা হয়ে থাকে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাট বীজ খামারে নাম মাত্র পাট থেকে তুষা ছাড়ানো হয়। যেখানে নিয়ম আছে অন্তত ৯৮ শতাংশ তুষা বা বীজ ছাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেখা যায় এ নিয়ম রক্ষা না করে বাইরের ক্রেতাকে বিশেষ শর্তে ও কৌশল অবলম্বন করে বীজ বা তুষা সহ তাদের কাছে বিক্রয় করা হয়। এর ফলে সরকার তার উৎপাদিত বীজের সঠিক পরিমান সহ মুল্য থেকে বঞ্চিত হলেও খামারের তিন কর্তব্যাক্তিদের পকেটে ঠিকই লাভের অংশ চলে যাচ্ছে শুধু লোকসানের দ্বায় নিতে হচ্ছে দেশের সরকারকে। এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মধ্য ব্লকে দ্বায়িত্বরত ডি এ ডি অনিমেষ বলেন পাটের তুষা কতটুকু ছাড়াতে হবে তা আমার জানা নেই তবে যতটুকু সম্ভব ততটুকু নিতে হবে। বাইরে পাটের তুষা ছাড়ানোর বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন খামারের পাটের তুষা বা বীজ বাইরে নিয়ে বীজ বের করা অসম্ভব। তবে তুষা বের করে পাটের শুধু খড়ির অংশ টুকু নিয়োগ প্রাপ্ত শ্রমীকরা নিতে পারে তাও নিয়মের ভিতর থেকে। গাংনীর চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অনীয়ম হচ্ছে বলে খামারের পার্শ¦ বর্তি বাসিন্দারা জানান। স্থানীয়রা দেশের এ সম্পদকে সুষ্ঠভাবে তদারকি করে সরকারকে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।