নিয়ামতপুরে ৩ কিলোমিটার সড়কে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ চরমে!
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি 4TV
মাত্র তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়কের (মাকলাহাট-দিঘা মোড়) কারনে উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের মাকলাহাট এলাকার শিক্ষার্থী ও এ এলাকার জনসাধারণের দূর্ভোগ চরমে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপজেলার সাথে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের কাঁচা সড়কের কাদা মাড়িয়ে কষ্ট করে স্কুল বা কলেজে যেতে হয়। জরুরী চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হয় এলাকাবাসী। শুধু তাই নয় কাঁচা সড়কের কারনে এ এলাকার উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্যও পান না কৃষকরা।
অথচ সংশ্লিষ্টদের নিকট দীর্ঘদিন থেকে এ সংযোগ সড়কটি পাকা করণের দাবী জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, এ এলাকার জনবসতি প্রায় পাঁচ হাজার। এখানে রয়েছে প্রাত্যহিক বাজারসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে সমাজকে বদলে দেয়ার চেষ্টায় আলোর দিশারী সংগঠন। আছে মৎস্য চাষের জন্য ছোটবড় অনেক পুকুর।
শুধু যোগাযোগ ব্যস্থার করনেই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে এ এলাকার মানুষ। আরো জানা যায়, এ এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউসুফ আলী কলেজ ও মহিলা কলেজে লেখাপড়া করেন।
তারা প্রতিদিন বাড়ী যাওয়া-আসার পথে এ সড়কে নানান বিড়ম্বনার শিকার হন। সরেজমিনে সোমবার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০-২২ কিলোমিটর দূরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী কাঁচা সড়কের কাদার মধ্য দিয়ে বই বুকে জড়িয়ে পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে জানায়, তারা দিঘা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং দিঘা গ্রামে বাড়ী।
৩য় শ্রেণির মাহবুবা, ফারিয়া ও হাসনা এবং ৪র্থ শ্রেণির ফারজানা জানায়, বিদ্যালয় থেকে তাদের গ্রামের দূরত্ব ১ কিলোমিটার। বৃষ্টি হলেও তাদের এভাবেই এ পথ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। মাঝে মধ্যে কাদায় পা পিছলে আছাড় খেলে আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না তাদের। তাছাড়াও বজ্রপাতের সময় খুব ভয় ভয় লাগে তাদের। তাদের দাবী এ সড়কটি পাকা করনের।
মাকলাহাট গ্রমের কয়েকজন কৃষক আব্দুল মতিন, নজরুল, জামাল, জাহাঙ্গীর ও দাউদ আলী জানান, তাদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব অনেক। তাই পাশর্^বর্তী গোমস্তাপুর ও পোরশা উপজেলা তাদের কাছাকাছি হওয়ায় তাদের উৎপাাদিত ফসল ধান, গম, ডাল তারা মুর্শিদপুর, সোনাইচন্ডী ও রহনপুরের হাটে তুলে থাকেন।
কিন্তু ওই টুকু কাঁচা সড়কে বৃষ্টি হলে কাদার মধ্য দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে সীমাহীন কষ্ট হয় তাদের। মাঝে মধ্যে কষ্টের কথা ভেবে গ্রামেই ফড়িয়াদের নিকট কম দরে বিক্রি করে দেন কষ্টার্জিত ধান। ওই গ্রামের সহকারী শিক্ষিকা রেশমা জানান, ‘ তিনি প্রতিদিন ওই পথ দিয়ে সিরাজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন। শুধু ওই টুকু কাঁচা সড়কে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে নানান বিপত্তি ঘটে তার।
বর্ষার কাদা মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। এছাড়াও ফাঁকা ওই সড়কে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের ভয়তো থাকেই।’ একই রকম কথা বললেন ওই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুসলেমা ও মাহফুজা। পলী চিকিৎসক বিদ্যুৎ এ প্রতিবেদককে বলেন, শুধু কাঁচা সড়কের কারণে এ এলাকার মূমূর্ষ রোগীদের জরুরী চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিতে পারেন না তারা। ফলে সুচিকিৎসার অভাবে অকালে ঝরে পড়ে প্রাণ।
সংশ্লিষ্ট ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, ওই এলাকার জনসাধারণের জন্য সড়কটি পাকা হওয়া এখন সময়ের দাবী। কাঁচা সড়কটি পাকা করণের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ বলেন, ‘কাঁচা সড়কটি পাকা করনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা শেষে তা এখন টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টেন্ডার হলেই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।