শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্তানের বাবার দাবীতে শিক্ষকের মামলা : ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ
এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জে সন্তানের বাবার দাবী করে মুকসুদপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এর প্রতিকার চেয়ে মামলাটি দায়ের করার পর গত ৩ জুলাই ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে আদালতের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ গোপালগঞ্জ সদর থানায় পৌছালেও কোন এক রহস্য জনক কারনে তদন্ত কর্মকর্তার নির্লিপ্ততা ও কালক্ষেপন অভিযোগকারি ওই শিক্ষককে নানান সন্দেহের মধ্যে ফেলেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখান এবং সামন্যতেই তিনি চটে যান অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
মামলার এজাহার ও ওই শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ২০১০ সালে তিনি জেলার কাশিয়ানী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির সুবাদে ওই কর্মকর্তার সাথে তার সক্ষ্যতা গড়ে ওঠে।
এক পর্যায় এ সুযোগ নিয়ে তাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে শিক্ষা কর্মকতা মুন্সি রুহুল আসলাম তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিগত ২০১২ সালে মুসলিম শরিয়া অনুযায়ি মৌলভী ডেকে কলেমা পড়ে তাদের বিয়ে হয়। তাকে কাবিন রেজিস্ট্রির কথা বললে প্রথম স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন এবং তাতে তার চাকরির ক্ষতি হবে এসব কথা বলে বিষয়টি বার বার তিনি এড়িয়ে যান। এরপর থেকে তারা উভয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে এক সঙ্গে থাক ছিলেন। দু’বছর পর ওই শিক্ষিকা একটি পুত্র সন্তানের মা হন।
শিক্ষিকার ভাষ্য মতে জানা যায়, এরপর ওই শিক্ষা কর্মকর্তা কাশিয়ানী থেকে বদলী হয়ে প্রথমে ভাঙ্গা তারপর আলফাডাঙ্গা ও পরে মুকসুদপুর উপজেলায় যোগদান করেন। আমিও ওই সময় গোপালগঞ্জ সদরের একটি স্কুলে যোগদান করি। মুকসুদপুরে যোগদানের পর থেকেই রুহুল আসলাম আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং আমাদের বিয়ে ও সন্তান অস্বীকার করেন।
আমি তার সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করি। প্রথম দিকে মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে নীরব থাকলেও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আর বসে থাকতে পারিনি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমার সন্তান দিন দিন বড় হচ্ছে। ওকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে।
সমাজে কি হবে ওর পরিচয় ? কি ভাবে আমি ওকে মানুষ করব। এই কথা ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ি। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেই। সন্তানের কথা চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। পরে আমি আমার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিক্ষা বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন এমনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দ্বারস্থ হই। সবাই সহানুভুতি দেখানোর আশ্বাস প্রদান করলেও কোন এক অদৃশ্য কালো হাতের ইশারায় এ সব কিছুই আর আলোর মুখ দেখেনি। লোক মারফত শুনেছি শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলাম তার অবৈধ টাকা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলছেন। অবশেষে আমি আদালতের শরনাপন্ন হতে বাধ্য হই।
এ জন্য মুন্সি রুহুল আসলাম আমাকে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমাকে ও আমার সন্তানকে বড় ধরনের কোন ক্ষতি করা হতে পারে বলে আমি আশংকা করছি। দিন দিন আমি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমিতো আমার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য লড়ছি এটা কি কোন অপরাধ ? এটা কি কোন অন্যায় ! আমি মুখ না খুললে আমার মতো আরো অনেক অসহায় নারীর সর্বনাশ করবে ওই লম্পট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলাম। তাই সমাজের কাছে ওই সব লম্পটদের চরিত্র উম্মোচন করে দেব আমি। আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। একমাস হতে যাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা এ নিয়ে তালবাহানা করছেন। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার উপর চটে যান।
বিষয়টির কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর আগেও আদালতের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকা সত্বেও অনেক অনুরোধ সত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। শিক্ষা কর্মকর্তা মুুন্সি রুহুল আসলামের হাত অনেক লম্বা ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টও নাকি তিনি পাল্টে দিতে পারেন এমন আশংকাও করেন তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষকের দাবী ডিএনএ পরীক্ষা করা হলেই তার সন্তানের বাবা কে তা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন আমি আদালতের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের নির্দেশ আমি মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কেন বিভিন্ন অজু হাতে কালক্ষেপন করছে এ প্রশ্ন তার। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং মানবতার মাতা। একজন নারী হিসেবে আমি তার কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি। ওই শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মকতা মুন্সি রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে বিচার চাইতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সকলের সু দৃষ্টি কামনা করেছেন ওই শিক্ষিকা।
অপরদিকে শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলাম সম্পর্কে খোজ খবর নিতে গিয়ে তার নারী কেলেংকারীর অসংখ্য কাহিনী বেরিয়ে আসে। চাকরির সুবাদে বিভিন্ন ষ্টেশনে গিয়ে নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়েন ওই কর্মকর্তা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও বর্তমান চাকরিস্থল মুকসুদপুরেও তার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরী স্কুল শিক্ষিকাদের বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে তিনি প্রেমজ সম্পর্ক তৈরী করে থাকেন। অনেক শিক্ষিকাই তার লালসার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
মুকসুদপুর উপজেলার একজন স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, উনি খুব নারী পটাতে পারেন। এজন্য তিনি কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় নাজেহাল হয়েছেন তারপরও তিনি চরিত্র বদলায়নি।
মুকসুদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুন্সী রুহুল আসলামের কাছে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সকল ঘটনা সবই মিথ্যা। ওই শিক্ষকের সাথে তার সম্পর্ক ছিল এটা সঠিক। কিন্তু তিনি তাকে বিয়ে করেননি কখনো। সন্তানও তার নয়। তবে তিনি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থগিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদর থানা উপ পুলিশ পরিদর্শক বকুল হোসেন বলেন, আসামী বর্তমানে উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসামীকে বার বার বলা সত্বেও তিনি তা বিলম্বিত করছেন। মুকসুদপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলামের দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
বর্তমানে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম ও শিক্ষিকা সাবিহা শারমিনের বিষয়টি মুকসুদপুর, কাশিয়ানীসহ প্রতিটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আলোচ্য বিষয় হিসাবে রুপ নিয়েছে। এ নিয়ে সব সময়ই চলে আলোচনা-সমালোচনা। সকলে এখন তাকিয়ে আছে আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষার দিকে। ডিএনএ রিপোর্টের পর এ ঘটনার কি সুরাহা হয় তা জানতে।