পা হারানো পঙ্গু শার্শার ইউসুফের জীবন কথা
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি
পা হারানো এক যুবক নাম ইউসুফ। ২০১৩ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যায়। একটি পা হারিয়েও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই সে। অভাবের তাড়নায় মাত্র বার বছর বয়সে তাকে রাস্তায় নামতে হয় জীবিকার সন্ধানে। আর তখনই তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।যে বয়সে তার খেলাধুলো আর হৈ হুল্লোড় বই পড়ার কথা।সেই বয়সে তার বাবা আদরের সন্তানের হাতে নসিমন ধরিয়ে দেয়।শক্ত হাতে নসিমনের হ্যান্ডেল ধরতে হয় ইউছুপকে।রাস্তা হয়ে ওঠে তার সাথী।আর পথচারীরা হয় তার বন্ধু।
পরিবারে অভাব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় তার লেখা পড়া। সব আশা ভরসা জলাঞ্জলি দিয়ে দারিদ্রতার কাছেই তার পরাজয় মেনে নিতে হয়। কিশোর বয়সে কচি হাতে তাকে চালাতে হয় নসিমন। শত কষ্ট আর দারিদ্রতার মাঝে একটু একটু করে চলতে থাকে তার জীবন গাড়ি। হঠাৎ অন্ধকার করে কালো মেঘ ভরকরে তার ওপর। ২০১৩ সালের কথা। তার জীবনে নেমে আসে সেই ঝড়। যা তার জীবনকে তছনছ করে দেয়।
নসিমনে বিজিবি নিয়ে কাশিপুর থেকে যশোরের চৌগাছা যাদবপুর ক্যাম্পে যাবার পথে একটি ঘাতক ট্রাক তার গাড়ীকে সজোরে ধাক্কা দেয়। সেই সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় ইউসুফ। বাম পায়ে চোট লাগে। হাসপাতালে ভর্তিকরা হয় তাকে।ডাক্তাররা হাটুর উপর থেকে তার পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কষ্টের সংসারে এমন একটি ঘটনা তার জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেয়।সেরে উটতে অনেক সময় লাগে।হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই ইউসুপ ভাবতে থাকে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলে চলবেনা।তাই সফত নেয় সুস্থ্য হয়েই নেমে পড়বে জীবনযুদ্ধে।
সাধ্যমত চিকিৎসা খাওয়া সবই ছিল তার জীবনের এক একটি ইতিহাস। যা বলে শেষ করা যাবে না। ইউসুফের পুরো নাম ইউসুফ সর্দার, যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃত জহর সর্দারের ছেলে সে। ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইউসুফ ছোট। আজ ইউসুপের পরিবার বলতে মা, স্ত্রী ও একটি সন্তান নিয়ে তার এগিয়ে চলা। একটি পা নেই তাতে কি হয়েছে জীবন সংসারে প্রয়োজনের তাগিদে আজ সে ইঞ্জিন চালিত ভ্যান চালিয়ে বহু কষ্ট পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে।
এক পা ভ্যানের প্যাটেলের উপর অন্য কাটা পা ছিটের উপর ভাজ করে রাখে। গাড়িতে উঠতে নামতে চলাচল করতে সব সময় নিজের সাথে একটি অটিষ্টিক রাখে। যা তাকে সব সময় সাহায্য করে। জীবন সংসারের কঠিন বাস্তবতায় ইউসুফ আজ পঙ্গু শরীর নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করলেও তার জীবনে কোন দুঃখ নেই। অতি অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে, একটি পা হারিয়ে যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ছিল সেই ছোট্র বয়স থেকেই তার সংগ্রামী জীবনের কোন থেমে থাকা নেই।
দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে তার ভাঙ্গাচোরা জীবনখানি। ইউসুফ বলে জীবনের নিজের কোন আশা ভরসা নেই, যা স্বপ্ন, যা আশা-ভরসা সব তার নিজের পরিবারের জন্য। যার জন্য তার সংগ্রামী জীবনের এগিয়ে চলা।