আওয়ামীলীগ নেতার সহযোগিতায় বিএনপি নেতার বালু ব্যবসা
আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট
আওয়ামীলীগ নেতার সহযোগিতায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপি সাধারন সম্পাদক দুলাল মিয়া বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে জমজমাট ব্যবসা করছে। স্থানীয়দের অভিযোগে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই দিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পুনরায় চালু করার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বার আর বন্ধ হবে না বলেও ঘোষনা দিয়েছেন বিএনপি'র ওই নেতা।
স্থানীয়রা জানান, বোমা মিশিনে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপি সাধারন সম্পাদক দুলাল মিয়া। বেশ কিছু দিন ধরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাড়াঁসি অভিযানে বালু উত্তোলন ব্যবসা কিছু দিন বন্ধ ছিলো। এরই মাঝে মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান নব্য আওয়ামীলীগ নেতা মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরীকে ম্যানেজ করে মহিশখোচা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে বালুর উত্তোলন শুরু করেছে ওই বিএনপি নেতা। এরপর তা ট্রাকে ট্রাকে তা বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়দের জানানো হয় বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার করা হবে এসব বালু। তিনটি বোমা মেশিনে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এ বালু পাইপের সাহায্যে মহিষখোচা বাজারের ভিতর দিয়ে ওই বিদ্যালয় মাঠে ফেলানো হচ্ছে। এসব বোমা মেশিন ও পথরোধ করা বালু পরিবহন পাইপ সড়াতে স্থানীয়রা একাধিকবার উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেন জেলা প্রশাসন। এটি বন্ধে দুই দিন অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযান শুরু হলে মেশিন বন্ধ রাখা হয়। কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেই পুনরায় চালু হচ্ছে বোমা মেশিন।
শুক্রবার (১৭ আগষ্ট) ছুটির দিন ভেবে কাকডাকা ভোর থেকে পুনরায় চালু হয়েছে বিএনপি নেতার বোমা মেশিন। ছুটির দিন শেষে আবারও ঈদের বড় ছুটিতে সচল থাকবে তার বোমা মেশিন। ঈদের ছুটির মধ্যেই ৭/৮ লাখ টাকার বালু উত্তোলনের টার্গেট তার।
একই উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের মাঝিটারী গ্রামে রাস্তা নির্মানের কাজের জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ওই রাস্তার পাশে বোমা মেশিনে। ফলে নির্মানের আগেই ঝুঁকিপুর্ন হচ্ছে এসব সড়ক। ভাদাই ইউনিয়নের কদমতলা ব্রীজের পাশে সতি নদীর বাঁধ নির্মানের বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে সেই বাঁধের নিচ থেকে।
শুধু এই বালু ব্যবসায়ী নয়, জেলার সকল বালু ব্যবসায়ীরা আগামী ঈদের ছুটিকে টার্গেট করে রয়েছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে বোমা মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটি শুরু হলে তাদের বোমা মেশিন চালু হবে। বোমা মেশিনের দৌড়াত্ব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নদী, নদীর বাঁধ, রাস্তা ঘাট, রেল লাইন, সড়ক মহাসড়ক, বসতভিটা ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব বন্ধে ভুক্তভোগিরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন জনের সুপারিশে অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানাও আদায় করছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন। ফলে এ অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে ভুমিকম্প ও ফসলহানীর ঝুকি।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বড় বড় নেতা ও সংসদ সদস্যরা নব্য আওয়ামীলীগের কথা শুনে বিএনপি'র অবৈধ ব্যবসার সুপারিশ করে। শুধু তাই নয় এ অবৈধ ব্যবসা গুড়িয়ে না দিতে জেলা প্রশাসনকে ফোন করে অনুরোধ করে। এসব নব্য আওয়ামীলীগ নেতা স্বার্থের লোভে দলে এসে বিএনপি'র পৃষ্টপোষকতা করছেন।
বোমা মেশিন মালিক মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারন সম্পাদক দুলাল মিয়া বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অনুরোধে মেশিন দিয়ে আমি বিদ্যালয়ের মাঠ ও পুকুর ভরাট করতে বালু উত্তোলন করছিলাম। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা এতে দেয় ফলে এখন বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিএনপি নেতা দুলাল মিয়া নয়, স্থানীয় সাহেব আলী নামে একজন বালু উত্তোলন করছেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, গত দুই দিন ওই মেশিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বালু উত্তোলন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।