আ"লীগ বিএনপিতে দুটি গ্রুপ মনোনয়নের যুদ্ধ নওগাঁ-৩ আসনে
নিরেন দাস,জয়পুরহাট, প্রতিনিধি 4TV
বাণিজ্যিক ও সবজি এলাকাখ্যাত জেলার মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৩ আসন গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৮ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হলেও বর্তমানে তা আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। ১৯৯১ থেকে পরপর চারবার বিএনপি জিতলেও ২০০৮ এর নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ের পতাকা উড়ায় ক্ষমতাসীন দল। তবে ২০১৪ এর নির্বাচনে এ আসনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন। নির্বাচনকে টার্গেট করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন সক্রিয় এবং নিজেকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। একই সঙ্গে হারানো ঘাঁটি পুনরম্নদ্ধারে মরিয়া বিএনপি প্রার্থীরা। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি চেষ্টা করছে মহাজোট থেকে তাদের দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে। বড় এই তিন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, এ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮০ হাজার ৩৮ জন। এর মধ্যে মহাদেবপুর উপজেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ৫১২ জন এবং বদলগাছী উপজেলায় এক লাখ ৫৭ হাজার ৫২৬ জন।
১৯৯১ সাল থেকে মরহুম ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু এ আসন থেকে বিএনপির টিকিটে পরপর চারবার সংসদ সদস্য এবং ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুকে পরাজিত করে বর্তমান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালীন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। এ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকা-ে দুই উপজেলার নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক অসন্ত্মোষ দেখা যায়। নির্বাচনে তিনি জনপ্রতিনিধি হলেও তার সহধর্মিণী মায়া চৌধুরী এ দুই উপজেলার বিভিন্ন কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে দূরে সরে যান। আর এলাকাবাসী মনে করতেন ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নামে এমপি। কিন্তু কাজেকর্মে তার সহধর্মিণী মায়া চৌধুরী এমপি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিকল্প প্রার্থী দেখতে চান। মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেরাগপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম ৩০ হাজার ভোটে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত বছরের ৭ মে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এ দুজনের মধ্যে মনোনয়ন লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটেছে। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এনামুল কবীর ওরফে মঞ্জু। এ অবস্থায় যে যার মতো করে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের প্রচার-প্রচারণা করতে এলাকায় বিভিন্ন শুভেচ্ছা ব্যানার ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন। বিশেষ বিশেষ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করে ভোটারদের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের গণসংযোগের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন জনসভা, সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠান, তাফসির ও জলসায় যোগ দিচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ আসনে আবারও পরিবর্তন চান। শাসকদলীয় সূত্রে জানা যায়, এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, মহাদেবপুর উপজেলা আ'লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহাঙ্গীর আলম আনছারী, বদলগাছী উপজেলা আ'লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর ওরফে মঞ্জু দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় সব নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছেন। মাঠে তার অবস্থানও ভালো। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা-ের অংশ হিসেবে এ দুই উপজেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক কাজ চলমান রয়েছে। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে তার বিরম্নদ্ধে দখলবাজ বা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দেন।
ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে দুই উপজেলার রাস্ত্মাঘাটসহ প্রায় ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য হর্টিকালচার করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিলে কী হয় মানুষ সেটা এখন আঁচ করতে পেরেছে। দলীয়ভাবে তার অবস্থান খুবই ভালো। নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন।