বেনাপোল চেকপোষ্টে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ধরন পাল্টালেও বন্ধ হয়নি পুলিশের পাসপোর্ট দালালী
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি 4TV
ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে কয়েক গুন। ভ্রমন পিপাসু ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের ভিড় লেগেছে উপচে পড়া।
বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোষ্টে কাস্টম এবং স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় শুধু ধরন পাল্টিয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি ইমিগ্রেশন পুলিশের পাসপোর্ট দালালী। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এখানে কর্মরত সিপাহীদের নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেন না।
বেপরোয়া সিপাহীরা ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানীসহ তাদের কাছ থেকে ইমিগ্রেশনের কাজ করে দিবে এমন আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অহরহ। প্যাসেনজার টার্মিনালের সামনেই এসব পুলিশের বিচরন। কোন পাসপোর্ট যাত্রীকে দেখলেই তারা ছুটে যায় তার কাছে বলেন ২‘শ টাকা দিন পাসপোর্টের সকল কাজ করে দিচ্ছি।
এ সব পুলিশ ভারত গামী সাধারন যাত্রীসহ ডাক্তার, উকিল, ব্যারিষ্টার, সাংবাদিকসহ রোগী, শিশু কেও রেহায় পায় না ইমিগ্রেশন পুলিশের হাত থেকে। এ দিকে ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষে ঈদ প্যাকেজে অসংখ্য বাংলাদেশীকে ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ফলে ঈদের ছুটির সোম, মঙ্গল, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২০,২১, ২২,২৩ ও ২৪ আগস্ট) ৫ দিনে প্রায় ২৭ হাজার পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছে।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্ট দালালীর মত ঘৃন কাজে লিপ্ত রয়েছে। ঈদের ৫ম দিন শুক্রবার সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ড ও পাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে শুল্ক কর্মকর্তা ও বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষী, আনছার, পিমা সিক্রুটি গার্ড দের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
লাইন ঠিক রাখতে বিজিবি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। প্রচন্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার নারী শিশু ও পুরুষ। ধীর গতির কারনে দু‘দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট বেনাপোল। আর এখান থেকে কলিকাতার দুরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে কম খরচে বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে যাওয়া যায় কলিকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে।
এ কারনে প্রতিদিন স্থল পথে দুই থেকে আড়াই হাজার পাসপোর্টযাত্রী গমনাগমন করেন এ পথে। তবে ঈদের ছুটিতে পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুন। গত ৫ দিনে শুক্রবার বিকাল ৪টা ২৮ মিঃ পর্যন্ত ২৭ হাজার যাত্রী বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেছেন। দু‘দেশের কর্তৃৃপক্ষল ইমিগ্রেশনে ও বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল বৃদ্ধি না করায় দীর্ঘ সময় লাগছে পারাপারে। যশোরের পাসপোর্ট যাত্রী তানজিম রাফি ও ইকলাছুর রহমান জানান চেকপোষ্টে এসে ৪ ঘন্টা দাড়িয়ে রয়েছি মানুষের ভিড়ে যেতে পারছি না। তাছাড়া এখানে পরিবহনের লোকজন লাইন ভঙ্গ করে বিক্সখলা করছে যার কারনে মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
কক্সবাজার থেকে আসা আয়ুব হোসেন ও তার স্ত্রী মহাময়ী জানান আমাদের পাসপোর্ট আমরা নিজেরা কাজ করবো কিন্তু টার্মিনালের বারান্দায় পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট জোর করে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আমরা দেয়নি। সোনালী ব্যাংকের অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী কাজী শাহিদা বেগম জানান ঈদের ছুটি চলছে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ তাই ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। কয়েকজন আত্মীয় আছে। এ সুযোগে তাদের সঙ্গে দেখাও হবে, বেড়ানোও হবে। কিন্তুু ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি লাইনে। কখন পার হবো বলতে পারছি না।
ঢাকা মীরপুর এলাকার বাসিন্দা স্বপন সরকার জানান, নানা শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছি। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে এতোদিন সময় করে উঠেতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকায় এবার এ সুযোগে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরবেন বলে ঠিক করেছেন।
ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকায় পাসপোর্টের কার্যাদি সম্পন্ন করতে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে তিনি জানান। এ দিকে বেনাপোল বন্দরের প্যাসেনজার টার্মিনালের বারান্দায় এসে সরোজমিনে দেখা যায় ইুিমগ্রেশান পুলিশের সিপাই সজিব, শহিদুল, সেকেন্দার, ইমরুল এবং বাবুল পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট আর টাকা নিচ্ছে ইমিগ্রেশানের কাজ করে দেবার কথা বলে। এ সময় বেনাপোল স্থল বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক ও সিবিএ নেতা মনির হোসেন মজুমদার জানান বন্দরের প্যাসেনজার টার্মিনালে ইমিগ্রেশান পুলিশের সিপাহীরা পাসপোর্ট যাত্রীদের নানা ভাবে নাজেহাল করে থাকেন।
আমরা ওসি সাহেবের কাছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয় না। একই কথা জানালেন টার্মিনালে কর্মরত একজন বিজিবি সদস্যও। তাছাড়া ভারত গামী কয়েকজন সিনিয়র পাসপোর্ট যাত্রী জানান এখানে পাসপোর্ট যাত্রীদের পুলিশী হয়রানী থেকে রেহায় পেতে দরকার পুলিশের স্পেশাল ব্যাঞ্চ। এ ব্যাঞ্চের সদস্যরা এখানে আসলে যাত্রীরা হয়রানী থেকে মুক্তি পাবে নিশ্চিত। বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মোঃ মাসুম কাজী জানান, আমাদের ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা নেই।
পাসপোর্টযাত্রীদের চাপ বাড়লেও তাদের দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে ১৬টি ডেস্কে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে অফিসাররা। এবার ঈদে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভারত ভ্রমণের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এ কারণে ইমিগ্রেশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্যাসেনজার টার্মিনালে ইমিগ্রেশান পুলিশের পাসপোর্ট দালালীর ব্যপারে যাত্রীদের অভিযোগের কথা বললে