ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরও ডাকসু গঠনতন্ত্রে থাকছে উপাচার্যের একচ্ছত্র ক্ষমতা।
ডাকসু নিয়ে তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তৎপর ছাত্র সংগঠনগুলোও। কিন্তু উঠে আসছে নানা প্রশ্ন। আছে বিভক্ত মতও। যার বেশিরভাগই গঠনতন্ত্রকেন্দ্রিক।
সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে সংশোধন করা হয় গঠনতন্ত্র। যেখানে দেখা যায়, পদাধিকার বলে ডাকসু সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে দেয়া হয়েছে একচ্ছত্র ক্ষমতা। গঠনতন্ত্রের পাঁচ ধারায় বলা হয়েছে, সভাপতি বাতিল করতে পারেন কমিটি, বরখাস্ত করতে পারেন যে কাউকে। যে কোনো বিষয়ে তার ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। ৮ ধারায় বলা হয় নির্বাচন নিয়ে সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এমন আরো বেশ ক'টি জায়গায় উপাচার্যের ক্ষমতা কমিয়ে আনার দাবি করে আসছে বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠন । যদিও ছাত্রলীগের বিশ্বাস, উপাচার্য অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার চর্চা করবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, 'আমরা মনে করি উনি ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন। এক্ষেত্রে একটি বিধান রয়েছে যে ১ হাজার শিক্ষার্থীকে চিঠি দিতে হয়। তাই আমরা মনে করি না উনার একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, 'যে কোন নির্বাচনের ফলাফল উনি নির্ধারণ করবেন এমনটা আছে। এতে তার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেয়া হলো।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনে সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, একক ক্ষমতার বলে উপাচার্য যা খুশি তা করতে পারেন। আমরা মনে করি যে দাবি আমরা করেছি তা নিয়ে আন্দোলন করবো।
গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান, অধ্যাপক মিজানুর রহমানও মনে করেন, 'সভাপতির ক্ষমতা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দৃষ্টিকটু। তবে নির্বাচিত ডাকসুতেই এর সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি।'
ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহবায়ক ড.মিজানুর রহমান বলেন, 'একজন উপাচার্য এবং হল প্রাধাক্ষ্যের ক্ষমতা আসলেই অসীম। উনার একক সিদ্ধান্তে অনেক কিছুই করতে পারেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্গে যা আসলেই দৃষ্টিকটু। তবুও মনে করি ছাত্র সংসদ গঠন হলে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে।'
সংশোধন কমিটির সুপারিশে উপাচার্যের ক্ষমতা কমানোর কোনো কথা বলা হয়নি। ছাত্রত্বের ব্যাপারে বলা হয়েছে, নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হতে পারবেন ভোটার ও প্রার্থী। সান্ধ্যকালীন, ডিপ্লোমা কোর্স, এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নির্বাচনের বাইরে থাকবেন। হলেই থাকবে ভোটকেন্দ্র। ডাকসুতে ২২ টি পদ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ টিতে। যুক্ত হবে মুক্তিযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পাদকসহ কয়েকটি পদ। নাম পরিবর্তন হবে কয়েকটির।
২৮ বছর পর ভাঙতে শুরু করেছে অচলায়তন। স্বপন দেখতে শুরু করেছে ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সবগুলো পক্ষ। তবে এখনো কাটেনি জটিলতা। বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ আছে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে। তাই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।