সুনামগঞ্জের ৩টি উপজেলার কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করছে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ফণীর প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ
ভেঙে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা উপজেলার কয়েকটি বাঁধ
ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করছে। হাওর গুলো হল,হালির
হাওর,খরচার হাওর,গোরাডুবা,বোয়ালা,লালু গোয়ালা,গোরমা,মাটিয়ান
হাওর,বেহেলি,শনির হাওরসহ কয়েকটি হাওর।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,গত শনিবার (৪ মে) রাত ১২টায় জামালগঞ্জ উপজেলার
বেহেলী ও রহমতপুর এলাকা দিয়ে শনির হাওরে এবং বদরপুর ও নিতাইপুর এলাকা
দিয়ে হালির হাওরে পানি প্রবেশ করার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিতের আশঙ্কা
করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে,প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয় মেম্বার
মনছার নেতৃত্বে বাঁধটি মজবুত করে তৈরি না করে বাঁধটি বালু দিয়ে তৈরি করা
হয়েছে। যার ফলে বাঁধটি পানির চাপে সহজ ভেঙ্গে গেছে।
রবিবার (৫ মে) সকালে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জামালগঞ্জ উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল। এ সময় তিনি বলেন,বাঁধ নির্মাণে কোন
গাফিলতি হয়েছে প্রমাণ পাওয়া গেলে কোন ছার পাবে না কেউ কঠোর ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।
হালির হাওরের পিআইসি কমিটির সভাপতি মনেছা জানান,আমি সঠিক ভাবে কাজ করেছি।
দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বৌলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে
বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
বিভিন্ন হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের সাথে কথা বলে আরো জানায়,ঘূর্ণিঝড় ফণীর
প্রভাবে সীমান্তের ওপারে ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হয়। এ কারণে মেঘালয়
পাহাড় থেকে পাহাড়ি ঢল যাদুকাটা,সুরমা নদী দিয়ে নেমে এসে
বৌলাই,রক্তি,পাটলাইসহ কয়েকটি নদী দিয়ে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং
উজান থেকে নেমে আসা পানি ভাটির দিকে প্রবল বেগে ধাবিত হতে থাকে। এতেই
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ডিজাইন লেভেল অতিক্রম করে পানি কয়েকটি হাওরে
প্রবেশ করে। আও কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশে করে। খবর পেয়ে আমরা
তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি নদীর পানি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ও
উপচে হাওরে প্রবেশ করছে। এতো বেশি পরিমাণ জায়গা দিয়ে পানি ডুকছে যে,তা
কোনোভাবেই আটকানো সম্ভবন নয়। হাওর তলিয়ে যেতে ৫-৭ দিন সময় লাগবে। হঠাৎ
করে বাঁধ উপচে পানি ঢোকায় কৃষক অনেকটা বিপদে পড়েছেন।
কৃষক মালেক মিয়া বলেন, হাওরে পানি প্রবেশ করায় কাটা ধান খলায় এখনও
রয়েছে। কাটা ধান ও খড় গুলো বৃষ্টি আর এখন পানির কারনে অরক্ষিত হয়ে
পড়েছে।
বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার ও সদস্য খোকন মিয়া বলেন,কয়েকদিনের
বৃষ্টির কারণে মানুষ ধান খড় কোনোটাই শুকাতে পারেন নি। সেগুলো শুকানো ও
মাড়াইয়ের কাজসহ খড় শুকানো নিয়ে চিন্তা করছেন কৃষকগন। এখন পানি হাওরে
প্রবেশ করায় কৃষকরা ধান ও খড় শুকানো নিয়ে বিপদে আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল
মন্নাফ বলেন,তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর, জামাগলঞ্জ
এসব এলাকার হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন হালির হাওর ও শনির হাওরের শতভাগ
জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন কিছু জমি রয়েছে যেগুলো অবস্থান বেশ উচু
এলাকায়। হাওরে পানি প্রবেশ করায় ধানের কোনও ক্ষতি হবে না। দেরিতে রোপন
করায় পাকতে দেরি হচ্ছে বলে কিছু ধান কাটা বাকি রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়,চলতি বোরো মওসুমে জামালগঞ্জ উপজেলায়
২৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর ও তাহিরপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধান
চাষ করা হয়। হালির হাওর ও শনির হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ
করা হয়েছিল। বেশী ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় মোট এক লাখ
৭২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে এক লাখ ৬১হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
আর হাওর ছাড়া মোট ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে কাটা হয়েছে ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া
জানান,হাওরে পানি প্রবেশ করার খবর পেয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন হাওরের বাঁধ
পরিদর্শন করেছি। হাওরের ধান কাটা শেষ প্রযার্য়ে। কিছু জমি এখনো বাকি আছে
সেগুলো কাটছে কৃষকগন। পানি বাড়ার পূর্বই ধান গুলো কাটা শেষ হয়ে যাবে।