গাইবান্ধায় নদীর বুকে দ্রুত একটি ডুবরি টিম দিয়ে সাজনো বিশেষ পূর্ণাঙ্গ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন প্রয়োজন
গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলা নদ-নদী বেষ্টিত হওয়ায় এসব নদী পারাপারে নৌকা ডুবিদে মাধ্যেই ছোট বড় নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানীর তালিকা বেড়েই চলেছে।
গত ৬ বছর ৪ মাসে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীতে এবং পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়েসের ২৬ জন মানুষ মারা গেছে। আর নিখোঁজ রয়েছে দুইজন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি মানুষ । তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জেলার সংসদীয় জনপ্রতিনিধিদের নিকট গাইবান্ধাবাসীর প্রানের দাবী ফুলছড়ির বালাসীঘাটে একটি নদী ফায়ার স্টেশন দ্রুত নির্মাণের জন্য। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবিধৌত চার উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস।
চরাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিজস্ব স্পিডবোট বা নৌকা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস যেতে পারেনা। একারণে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। আগুনে ক্ষতির পরিমান বেশীই হয়। তাই অত্র এলাকার মানুষের দূর্ভোগের কারণে দ্রুত প্রয়োজন ফায়ার স্টেশনের।
গাইবান্ধা সদরের ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলায় পানিতে ডুবে মানুষ নিখোঁজ হলে গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরী চেয়ে কল আসে ২২ টি। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালে মারা যায় দুইজন, ২০১৪ সালে চারজন, ২০১৫ সালে তিনজন, ২০১৬ সালে একজন, ২০১৭ সালে আটজন, ২০১৮ সালে দুইজন এবং চলতি বছরে মারা গেছে ছয়জন। নদীতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছে দুইজন ও এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এ জেলায় ডুবুরী পদ সৃজনের জন্য তথ্য চেয়ে নেয়া হলেও আজ পর্যন্ত আর কোন অগ্রগতি নেই ডুবুরী পদ সৃজনের। গাইবান্ধাসহ গোটা রংপুর বিভাগের আট জেলার জন্য রংপুর ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরী রয়েছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন ডুবুরী চষে বেড়ান আট জেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৬ মে ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের হরিচন্ডির চরে অগ্নিকাণ্ডে কাজলী বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরে গণ উন্নয়ন একাডেমিতে অগ্নিকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও বইসহ বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ দুটি ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চরাঞ্চলগুলোতে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চরাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌকায় করে যেতে দীর্ঘ সময় লাগায় ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হয় না।
সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের ধুতিচোরা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত ৭ মে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবে আমার ভাগ্নি ও এক প্রতিবেশি নিখোঁজ হলে রংপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদের আসতে সময় বেশি লাগায় তাদেরকে আজ পর্যন্ত আর পাওয়া যায়নি। নিজেরা নৌকা নিয়ে নদীতে খুঁজেও তাদের সন্ধান পাইনি। অথচ গাইবান্ধায় যদি ডুবুরী থাকতো তাহলে তাড়াতাড়ি উদ্ধার অভিযান শুরু করলে দুজনকেই পাওয়া যেত।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, এ জেলায় রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনার মতো খরস্রোতে বড়-বড় নদ-নদী। অথচ নদীতে কেউ ডুবে গেলে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করতে এ জেলায় কোন ডুবুরী নেই। নদীতে ডুবে কেউ নিখোঁজ হলে পরদিন মরদেহটি ভেসে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে হয়। এটা স্বজন হারানো পরিবারের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তাই নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার এবং চরাঞ্চলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য এ জেলায় একটি নদী ফায়ার স্টেশন চালু করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম সরকার জানান, গাইবান্ধায় কোন ডুবুরী নেই। ফুলছড়ির বালাসীঘাটে যমুনা নদীতে নদী ফায়ার স্টেশন চালু করলে চরাঞ্চলসহ জেলার সকলের অনেক উপকার হবে। আর এই স্টেশন চালু হওয়ার সাথে সাথেই ডুবুরী স্থায়ী ভাবে থেকে যাবে। তখন এই ডুবুরী নদ-নদীগুলোতে উদ্ধার অভিযান চালাতে পারবে, ঠিক তেমনি পুকুরসহ মেইনল্যান্ডের অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার করতে পারবে। চরাঞ্চলের অগ্নিকাণ্ডের ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা পরিলক্ষিত না হওয়ার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অগ্নি নির্বাপণের সরঞ্জামাদি নিয়ে নদ-নদীর ঘাট পর্যন্ত যেতে পারি। এরপর ঘটনাস্থল পর্যন্ত যেতে দ্রুত নৌযানের বিশেষ অভাব থাকায় সঠিক সময়ে পৌছাতে পারি না। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়। গাইবান্ধায় নদী ফায়ার স্টেশন চালু দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।