মুন্সীগঞ্জে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দারিদ্রতা দমাতে পারেনি জুলিয়ার পড়াশোনা
স্টাফ রিপোর্টার, মো.রুবেল মাদবর,
শারীরিক প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্রতা থামাতে পারেনি জুলিয়া আক্তারের পড়াশোনা। সকল বাঁধা-বিপত্তিকে পদদলিত করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে জুলিয়া । জুলিয়া সদর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের খা বাড়ির মো. আব্দুল জলিলের কন্যা ।
দরিদ্র দিন মজুর পিতা-মাতার সার্বিক সহযোগীতা আর তার প্রবল ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে লেখাপড়ায় অর্জন করেছে সাফল্য। এই সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ভবিষ্যতে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন ঘিরে ধরেছে জুলিয়াকে। জন্মগত ভাবে জুলিয়া আক্তার (১৭) একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলার সক্ষমতা তার নেই। অন্যের সাহায্য ছাড়া হাটা বা চলাফেরা করা তার জন্য অতিকষ্টকর।
দুই পা মাটিতে খুড়িয়ে তার কলেজ বা বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। হাতের রগও ছোট। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে হাত দিয়ে কোন কিছু করতে পারে না। তার পরেও কোন কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে শিক্ষাক্ষেত্রে সে জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) সাফল্যের সাথে অর্জন করে মাধ্যমিকের গ-ি পেড়িয়ে এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে।
বর্তমানে জুলিয়া মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রী। সে তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড়। দিন মজুর বাবার স্বল্প রোজ গারে চলে তাদের পাচঁ সদস্যের সংসার। মা-বাবার পাশাপাশি নানীর বাড়ির সহযোগিতায় চলছে তার পড়াশোনা। জুলিয়া চলতি বছর স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) তে বানিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় অ- পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এছাড়ও সে সাফল্যের সাথে জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) তে অ গ্রেড পেয়েছে।
যে জন্মগত শারীরি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও সুস্থ্য ও সবল মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে। সেই শারীরিক প্রতিবন্ধী জুলিয়া আক্তার দৈনিক গণমুক্তি কে জানিয়েছেন, তার স্বপ্ন ও লক্ষের কথা। সে বলেছেন, আমারও স্বপ্ন ছিলো।
স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করব। অন্য সব মানুষদের মতো করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে এগিয়ে যাব। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী বানিয়েছে। তার ফলে স্বাভাবিকভাবে জীবন পরিচালনা করতে কষ্ট হচ্ছে। তাতেও আমি হতাশ নই। নিজের সাথে নিজেই প্রতিযোগিতা করে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি নিজের লক্ষে।
দিন মজুর বাবার স্বল্প রোজগার ও নানীর বাড়ির সহযোগিতায় চলছে আমার পড়াশোনা। জানি, আমি একজন প্রতিবন্ধী। তার পরেও সব সময় ইচ্ছে জাগে পড়াশোনা শেষ করে একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো ব্যাংকে চাকরি করে নিজের পরিবারকে সহযোগিতা করব।
সে দুঃখ ভারাক্রান্তে মনে আরো বলেছেন, আমার প্রতিদিন কলেজে গিয়ে সকলে সাথে ক্লাশ করতে ইচ্ছে করে? কিন্তু পায়ের সমস্যা ও ভাড়ার টাকার অভাবের জন্য নিয়মিত কলেজে যেতে পারি না। মহেশপুর থেকে কলেজে আসতে যেতে ৮০ টাকা করে মোট ১শত ৬০ টাকা লাগে। বাবার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না।
তাই সপ্তাহে দু’একদিন কলেজে যেতে হয়। সমাজের সুশিল ও উচ্চ বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি আমাকে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে পড়াশোনা শেষ করে আমি আমার স্বপগুলো সত্যি করতে পারব। এর মধ্যে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। সদর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সুরুজ ভাই আমকে বই কিনে দিবে।
কথা হয় জুলিয়াকে নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হাই তালুকদাদের সাথে। তিনি জুলিয়ার আগ্রহ ও ইচ্ছা শক্তিকে উৎসাহিত করে দৈনিক গণমুক্তি কে বলেন, জুলিয়ার পড়াশোনার ব্যাপারে কলেজ থেকে যত প্রকার সুযোগ সুবিধা আছে সেটা তাকে দেওয়া হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে এ প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।