মুন্সীগঞ্জে প্রতিদিন শাপলা তুলে লাখ টাকা আয় করে কৃষক শ্রেণীর লোকেরা
রুবেল মাদবর,
মুন্সীগঞ্জ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সহ ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রাম নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে গড়ে উঠা প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যরে অপরূপ স্থল আড়িয়ল বিল। ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর আয়তনের এ বিল শুষ্ক মৌসমে আলু-ধান সহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হলেও বর্ষাকালের শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বিলের পানিতে দিগন্ত জুরে ফুটে উঠে শাপলার সমারহ।
ফুল প্রজাতির হলেও শাপলা সবজি হিসাবে খাবার উপযোগিতা রয়েছে। প্রতিদিন কয়েকশ নৌকা শাপলা বিল থেকে উত্তোলন করেন স্থানীয় কৃষক শ্রেণীর লোকেরা। তাদের কাছ থেকে ক্রয়ের পর পাইকাররা সরাসরি বিক্রির জন্য নিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
শাপলা উত্তোলনকারীদের দেওয়া তথ্যমতে বর্ষা মৌসমে প্রতিদিন কয়েকশত নৌকা শাপলা বিক্রিতে আয় ছাড়িয়ে যায় লক্ষাধিক টাকার বেশি। এদিকে শাপলা উত্তোলন ও বিক্রি করে সংসার চলছে বিলের আশেপাশের শতাধিক কৃষকের সংসার। সরজমিনে আড়িয়ল বিলের আলমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিলের পাশে স্তুপ করা রাখা হয়েছে শাপলা।
আরেকটু এগিয়ে দেখাযায় নৌকা থেকে শাপলা গাড়িতে তোলা হচ্ছে। শুধু আলমপুর নয় বিলের দয়হাটা, শ্যামসিদ্ধি, প্রাণীমÐল, গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, আলমপুর, কেউটখালী, মোহনগঞ্জ ,কামারগাঁও, জগন্নাথপট্টি, কাঁঠালবাড়ি, মহতপাড়া এলাকাও প্রতিদিন শাপলা তোলার কাজ চলে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতিদিন রাত ৪টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিলের থেকে শাপলা উত্তোলন করে তারা। প্রতি নৌকায় লোক থাকে দুজন করে। শাপলায় নৌকা ভর্তি হলে এরপর বিলের পাশে রাস্তা সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করা হয় করা হয় শাপলা।
কোন কোন স্থানে বিলের পাশে নৌকায় রেখে দেওয়া হয়। পরে প্রতিদিন বিকালে পাইকার এসে শাপলা পিক-আপ গাড়িতে করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়। বিক্রেতারা জনায়, লম্বা শাপলা নৌকা প্রতি ১৪শ থেকে ১৫শ ও মাঝাড়ি আকারের শাপলা ৪শ থেকে ৫শ টাকা দামে পাইকারের কাছে বিক্রি করে তারা। আলমপুর এলাকার শাপলা বিক্রয়ে জড়িত মোঃ মাসুদ জানান, গড়ে ১৬নৌকার শাপলা একটি গাড়িতে জায়গা হয়।
একই এলাকার মোঃ আলম মিয়া জানান, বর্ষা কালে জমি পানিতে তলিয়ে যায়, বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি পাশাপাশি শাপলা তুলে বিক্রি করে রোজগার হয। তিনি আরো জানান বর্ষা মৌসমে স্থানীয় প্রতিটি গ্রামের শতশত মানুষ বিলের শাপলা তুলে বিক্রির কাজ করেন। শাপলা বিক্রির সাথে ২০বছরের বেশি সময় ধরে জড়িত পাইকার চানমিয়া শিকদার দৈনিক গণমুক্তিকে জানায়, আড়িয়ল থেকে কিনে শাপলা গাড়ি প্রতি ঢাকায় নিতে খরচ হয় ১৪-১৫হাজার টাকা। এরপর এসব শাপলা ঢাকার বাজারে প্রতি আটি ২৫টাকা ধরে বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি গাড়িতে প্রায় ৭শ থেকে ৮শ আঁটি শাপলা থাকে। এব্যপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সফিকুল ইসলাম দৈনিক গণমুক্তিকে জানায়, প্রতিবছরই জেলার আড়িয়ল বিল সহ বিভিন্ন স্থানে শাপলা ফুটে, কৃষকশ্রেণীর মানুষ এসব শাপল বিক্রি করে । শাপলা প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়ায় এক্ষেত্রে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শের তেমন কিছু নেই, তবে অন্যান্য বিষয়ে কৃষকদের কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলো আমরা করতে পারবো।