উল্লাপাড়ায় বালু মহাল নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দিনভর উত্তেজনা
সাহারুল হক সাচ্চু
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আজ সোমবার আলোকদিয়ার গ্রামের পাশে ফুলঝোড় নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীরা ও বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সেখানে দিনভর চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা এখন নদী পাড়ে তাদের জমিতে দল বেধে অবস্থান করছে।
গত চারদিন ধরে গ্রামবাসীরা তাদের জমি রক্ষায় নদী পাড়ে দল বেধে থাকছে। নারায়নগঞ্জের মোঃ জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাদের জমিতে নদীটির বালু মহালের লিজ নিয়েছেন বলে জানা যায়। বালু উত্তোলনকারী মোঃ জাকির হোসেন তার লোকজন দিয়ে মহালের নির্ধারিত এলাকার বাইরে আলোকদিয়ার গ্রামবাসীর নিজস্ব জমি থেকে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ঘটনার সময় গ্রামের নারী ও পুরুষেরা বালু উত্তোলনকারী লোকজনকে ধাওয়া দিলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। বর্তমানে এই বালু মহালকে ঘিরে লিজ গ্রহিতার লোকজন, শ্রমিকদের এবং আলোকদিয়ার গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে।
আলোকদিয়ার গ্রামের নারী পুরুষ মিলে শেষ বিকেলে দু’শতাধিক লোকজন নদী পাড়ে এসে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে তাদের রাতের খাবার আয়োজন করা হয়েছে। তারা সেখানে রাত কাটাবেন বলে জানিয়েছে। স্থানীয় লোকজন এখানে বড় ধরনের গোলযোগের আশংকা করছেন।
আলোকদিয়ার গ্রামের বাসিন্দা ও নদী চরের জমির মালিক বদিউজ্জামান, তোষর আলী, আবু তাহের, মোঃ নিজাম, ইউনুস আলী, সুলতান আহমেদ ও নয়ান আলী অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে জাকির হোসেন নামের এ ব্যক্তি নদী চরে নির্ধারিত বালু মহাল লিজ নিয়ে আসেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’দিন আগে কথিত বালু মহালের সীমানা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। সেখানে জাকির হোসেনের লোকজন তাদের নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে সোমবার সকাল থেকে গ্রামের লোকজনের জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। খবর পেয়ে গ্রামের নারী পুরুষেরা ছুটে এলে শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এসময় বিপদ বুঝে বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। অভিযোগকারীরা আরো জানান, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় বাসিন্দা জাকের হোসেন, জয়নাল ও আমিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন যুবক লিজ গ্রহিতা জাকির হোসেনের অবৈধ বালু উত্তোলনে সহযোগিতা করে আসছেন।
যে কোন মূল্যে গ্রামবাসী তাদের জমি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন রুখে দেবে বলে উল্লেখ করেন অভিযোগকারীরা। এরা তাদের নিজস্ব জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা গেছে, এদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এরই মধ্যে বদিউজ্জামানের চার শতাধিক গাছের কাঠ বাগানসহ পুরো জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। আরো ক’জনের ফসলী জমি বিলিন হয়েছে। রজব আলীর কাঠ বাগানের দু’শতাধিক বড় ছোট ইউক্যালিপস গাছ নিজেরাই কেটে ফেলে রেখেছে।
এ ব্যাপারে জাকির হোসেন ও তার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সোমবার বিকেলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আরিফুজ্জামান জানান, প্রশাসন থেকে রোববার জাকির হোসেনের নেওয়া বালু মহালের লিজের নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়েছে। লিজ গ্রহিতা এর বাইরে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করলে প্রশাসন থেকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।