ভারতের পুশ ইনের বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতের নাগরিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের (পুশ ইন) বিষয়টি সম্পর্কে এখনো সরকারিভাবে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তবে তিনি বিষয়টি পত্রপত্রিকায় দেখেছেন বলেও জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব এশিয়া প্যাসিফিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত এক মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুই শতাধিক লোক বিজিবির হাতে আটক হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। বলা হয়, এনআরসি আতঙ্কে ভারতীয় এ সব নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, পুশ ইনের খবর মিডিয়া থেকে শুনছি, এখনও সরকারিভাবে জানি না। পত্র-পত্রিকায় যা বের হয় এর কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা আর কিছু অতিরঞ্জিত। আমাদের জানতে হবে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষ করে ফেসবুকে অনেক কিছু বের হয়। সরকারিভাবে না জানলে আমার বক্তব্য দেয়া ঠিক হবে বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, আমি ঠিক বুঝি না, (এনআরসির আতঙ্কটা আমাদের হবে কেন? এনআরসির তালিকা করতে প্রায় ৩৪ বছর লেগেছে। এখনও অনেক প্রক্রিয়া বাকি আছে। আর ভারতীয় সরকার বারবার আমাদের ওয়াদা দিয়েছে, ভারতের এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রভাব ফেলবে না। পত্র-পত্রিকায় দেখছি, কিছু লোকজনকে ভারত পুশ করছে অথবা এনআরসির ভয়ে তারা আসছে। আমি জানি না কেন। এটা নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তবে সব দেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ছোটখাটো লেগেই থাকে, দেন-দরবার থাকে। তবে বড় নিউজটা হচ্ছে আমাদের বড় বড় যতগুলো সমস্যা আমরা মোটামুটি আলোচনার মধ্যে শেষ করেছি, শুধু শেষ করেছি তাই না, অত্যন্ত পরিপক্বভাবে শেষ করেছি। আমাদের উভয় দেশের মধ্যে যে ট্রাস্ট, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স, সেটা খুব কম দেশের মধ্যে থাকে। ভারতীয় সরকারকে আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে চাই।
আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যখন পশ্চিমবঙ্গে গেলেন তাকে যথাযথভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘না, এইটা আমার মনে হয় না। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তাকে (প্রধানমন্ত্রী) গ্রহণ করেছে।’
মিয়ানমারের আরও কিছু কর্মকর্তা আবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসতে চান, আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারে আগেই এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় উন্মুক্ত, যদি ওনারা আসতে চান আসতে পারেন। বিষয়টা হল মিয়ানমার এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে, মিয়ানমারকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমস্যা দূর করতে তাদের বাস্তুচ্যুৎ নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত এই কারণে যে, তাদের ট্রাস্ট বিল্ড করতে হবে। মিয়ানমার প্রায়ই আমাদের বলে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করেছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তো বিশ্বাস করে না। তারা যদি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের বিশ্বাস বাড়াতে পারে উই উইল ওয়েলকাম।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিষয়ে মিয়ানমার অপপ্রচার করছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার বলে যে, বাংলাদেশ নাকি রেডি না রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে। বাংলাদেশ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, ওরা যখনই চাইবে তখনই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করবে। তারা বলে, বাংলাদেশের জন্য নাকি প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে, এটা অপপ্রচার না তো কী?
এশিয়া প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক চেহারায় থাকলে ভবিষ্যতে এর যে কোনো কার্যক্রমে বাংলাদেশ যুক্ত থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের আওতায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা পরবর্তী ধাপে উন্নীত হচ্ছে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর উৎপাদন, বিতরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) উদ্যোগের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপকে স্থল ও সমুদ্রপথে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। অবকাঠামো উন্নয়নকে মূল মন্ত্র হিসেবে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে। বিশ্বায়নের এ যুগে এককভাবে কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। পারস্পরিক শক্তি ও সক্ষমতা থেকে লাভবান হতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।