নামমাত্র সুদে গৃহঋণ পাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা
আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন। এবার তাদের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শিক্ষক-কর্মচারীরাও স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন। এলাকা ও পদ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া যাবে এ ঋণ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক/কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা-২০১৯’ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে।
গৃহঋণের সুদের হার সম্পর্কে পরিপত্রে বলা হয়েছে, গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদ অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। ঋণগ্রহীতা ব্যাংক রেটের সমহারে সুদ পরিশোধ করবে। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। সরকার সময়ে সময়ে ৯ শতাংশ সুদ হার পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। তবে পুনঃনির্ধারিত অনুরূপ সুদের হার কেবলমাত্র নতুন ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ঋণের প্রসেসিং ফির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে ঋণগ্রহীতাকে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির জন্য প্রসেসিং ফি অথবা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না। তবে স্বত্ব রিপোর্টের জন্য সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন হাজার এবং বেসরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা ঋণগ্রহীতা বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দিতে হবে।
ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে অবশ্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মচারী হতে হবে। গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদনের সর্বশেষ বয়সসীমা হবে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার এক বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি অবসরোত্তর ছুটি ভোগের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত প্রাপ্য হবে।
আবেদনের বয়সসীমার দিক থেকে সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় একটু বেশি সুবিধা ভোগ করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এটা তারা ভোগ করবেন চাকরির বয়সসীমার কারণেই। যেমন সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর পর্যন্ত। তারা ঋণ আবেদন করতে পারেন ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর। তাদের সুযোগ দেয়া হবে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত।
ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সিলিং ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথ পদ্ধতির মাধ্যমে নিরূপিত পরিমাণ এর দুয়ের মধ্যে যেটি কম, যে পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করা যাবে। তবে সিলিং নির্ধারনের ক্ষেত্রে জমিসহ তৈরি বাড়ি ক্রয় এবং ফ্ল্যাটের ক্রয় মূল্যের সঙ্গে রেজিষ্ট্রেশন ফি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের জন্য ডেট ইক্যুইটি অনুপাত হবে ৯০ অনুপাত ১০।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সিলিং অনুসারে পঞ্চম গ্রেড তদূর্ধ্ব ঢাকা শহর বা সকল সিটি করপেরেশন বা বিভাগীয় সদর ঋণের সিলিং হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা, জেলা সদর ৬০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকা ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে সর্বনিম্ন ২০ তম গ্রেড হতে ১৮ তম গ্রেড ঢাকা শহর বা সব সিটি করপোরেশন বা বিভাগীয় সদর সিলিং হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা, জেলা সদর ২৫ লাখ টাকা, এবং অন্যান্য এলাকায় ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের মতোই গৃহঋণের সুবিধা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পাবেন। শিক্ষকরা ৫ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধ করবেন। বাকি ভর্তুকি হিসেবে সরকার দেবে। আলাপ আলোচনায় এ বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছে। তার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গৃহঋণ বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলে শিক্ষক সমিতির বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা ২ শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব জানাই। তবে সেটি ৯ শতাংশ হারে অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে গৃহঋণ সুবিধা দেয়ায় আমরা সরকারের কাছে সন্তুষ্ট প্রকাশ করি। সব শিক্ষকদের এ সুবিধার আওতায় আনায় তারাও এ বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমরা এমন সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানাই।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪৫টির মতো। এগুলোতে শিক্ষক রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার, আর কর্মচারী রয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার। এর বাইরে ইউজিসিতেও কর্মচারীও রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী হবে ২০ হাজারের মতো।
অর্থ বিভাগ ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ প্রদান নীতিমালা’ জারি করে গত ৩০ জুলাই। নীতিমালায় এ ঋণ পাওয়ার জন্য ‘সরকারি কর্মচারী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গৃহঋণ তারাই পাবেন, যারা সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে শুধু স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইনের মাধ্যমে তৈরি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত হবে না। সে হিসেবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এ ঋণ সুবিধার বাইরে ছিল।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সারমর্ম পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের গৃহঋণ কোষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সোমবার প্রধানমন্ত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহ ঋণের নীতিমালা সংক্রান্ত সারমর্মে স্বাক্ষর করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই তারা গৃহনির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে আলাদা সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।