করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকালের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি ৩৭ জন। এর মধ্যে এ ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল শুধু উহান শহরেই মারা গেছে ১৬২ জন। বাকিগুলো চীনের অন্যান্য শহরে।
এছাড়া পুরো চীনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০০০ জনে। উহান শহরে এ সংখ্যা ৪৫৮৬ জন। ক্রমেই এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে চীনের সর্বত্রই।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার এ রোগে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে সারাবিশ্বে আরও ৯১ জনের দেহে এ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘পুরো বিশ্বকে সতর্ক হতে হবে।’
তিনি করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপের বিষয়ে চীনের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ বড় হলেও প্রতিক্রিয়া ব্যাপক হয়েছে।’
ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি অবস্থায়’ রয়েছে কিনা তা নিয়ে চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ড. রায়ান বলেন, এই রোগ কীভাবে সংক্রমিত হয় সে সম্পর্কে আরও জানতে একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল চীন পাঠানো হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও দানা বাঁধতে পারে।
গত ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
২০০৩ সালে একই গোত্রের ভাইরাস সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় চীনে। সেই সময় সার্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবার ছাড়িয়ে গেছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববাজারে বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তারের ঘটনায় দুই বার জরুরি বৈঠকে বসলেও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য করোনাভাইরাসকে হুমকি ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাস জরুরি অবস্থায় রয়েছে চীন।