ঘুরে আসুন ‘বাংলাদেশের কাশ্মীর’
ছবি দেখে কাশ্মীর ভেবে ভুল করবেন না, কি অবাক হচ্ছেন? কেউ বলে বাংলার কাশ্মির, আবার কেউ বলে নীলাদ্রি। সৌন্দর্যে ভরা জায়গাটা কাশ্মীর নয় আমাদের দেশেই, বলছি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট মেঘালয় সীমান্তবর্তী শহীদ সিরাজী লেকের কথা। এর অপরূপ সৌন্দর্যে ডুব দিতে নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে আসুন সুনামগঞ্জ থেকে।
আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে আমরা জানতে পারি- এখানে আসা পর্যটকরা এ লেকটিকে বিভিন্ন নাম উপস্থাপন করতে দেখে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন মতামতের ভিত্তিত্বে এই লেকটির নাম করণ করেছেন শহীদ সিরাজী লেক। তবে স্থানীয়রা নীলাদ্রি নামেই চেনে। অসংখ্য ছোট, বড় টিলা নদী, পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক আকর্ষনীয় স্থানের নাম শহীদ সিরাজী লেক। যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্ত নির্জন স্থান পেতে এই লেকের বিকল্প নেই। লেকের রুপ লাবণ্য পর্যটকরা যত দেখবেন ততই মন ও হৃদয়কে আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবেন। অনেকেই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যান। কিন্তুু এর আশেপাশেই অনেক সুন্দর সুন্দর নয়নাভিরাম জায়গা আছে যা যে কোনো পর্যটকের মনকে মুহূর্তেই দোলা দিয়ে যেতে পারে! এমনই একটি জায়গা টেকেরঘাট চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনির লাইমস্টোন লেক।
স্থানীয় লোকজন একে নীলাদ্রি লেক বলেই জানে। এর নামটা যেমন সুন্দর এর রূপটাও তেমনি মোহনীয়। নিজ চোখে না দেখলে হয় বিশ্বাসই করতে পারবেন না পানির রঙ এতটা নীল আর প্রকৃতির এক মায়াবী রূপ। মাঝের টিলা গুলা আর ওপাড়ের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশ এর শেষ সীমানা। বড় উচু পাহাড়টিতেই সীমানা কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। এই লেকটি এক সময় চুনা পাথরের কারখানার কাচামাল চুনা পাথরের সাপ্লাই ভান্ডার ছিল যা এখন বিলীন।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে যে তথ্যগুলো আমরা পেয়েছি।
নামকরনের ইতিহাসঃ নীলাদ্রি লেকের অবস্থান ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৫ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সাব সেক্টর ছিল টেকেরঘাট। মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন এই সাবসেক্টর টেকেরঘাটের কমান্ডার। সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হলে তাঁকে কবর দেওয়া হয় এই টেকেরঘাটে। তাই এককালের চুনাপাথরের খনি যখন লেকে পরিণত হয়, তখন এর নামকরণ করা হয় শহীদ সিরাজ লেক। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য এই কমান্ডারকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করা হয়েছিল। এই লেকের পাড়েই আছে শহীদ সিরাজের সমাধি।
সাবধানতা ও পরামর্শঃ এখান থেকে খুব বেশি পরিমাণে চুনা পাথর উঠানো হতো, যার ফলে লেকটি বেশ গভীর। লেকের পানিতে সাঁতার না জানলে না নামাই ভালো। নামলেও বেশি দূরে যাবেন না। যেহেতু সীমান্ত এলাকা তাই সাবধানে থাকুন। সীমানার খুব কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ তাহিরপুর সীমান্তে দৃষ্টিনন্দন এ পাথর কোয়ারির অবস্থান হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পর্যটকদের কাছে অধরাই ছিল এর সৌন্দর্য। দিন দিন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে শহীদ সিরাজী লেকটি। সুনামগঞ্জ থেকে নতুন ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে টেকেরঘাট পর্যন্ত সরাসরি মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা হতে পারে আর মাঝপথে যাদুকাটা নদী পার হতে জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা আর মোটর সাইকেল এর ভাড়া ২০ টাকা করে নিতে পারে।