দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২২৯,মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪৫৮
চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় দু'দিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চার গুণ হয়েছে। এক দিনেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২২৯ জন। সিঙ্গাপুরের গির্জা, হোটেলসহ কয়েকটি স্থানে বহু লোক সংক্রমিত হয়েছেন। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও। সংক্রমণ ধরা পড়েছে ইসরায়েল, কানাডা ও লেবাননে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ইরানের আধা ডজন শহরে। নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ইতালি ও জাপানেও।
ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬-এ। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
ইতালিতেও বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও শনিবার সেই সংখ্যা ২ এ পৌঁছায়। এরইমধ্যে দেশটির ১০টি শহরকে কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ইসরায়েল ও লেবাননেও করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুবরণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চীনে এখন পর্যন্ত ২৩৪৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার এ ভাইরাসে প্রদেশটিতে একদিনে মৃত্যু হয়েছে আরও ৯৬ জনের। সবমিলিয়ে হুবেই প্রদেশে করোনায় ২ হাজার ৩৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার আরও ৬৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হুবেই কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে প্রদেশটিতে ৬৪ হাজার ৮৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ৪০ হাজার ১২৭ জন রোগীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৮৪৫ জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। আর ১৫ হাজার ২৯৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এত দিন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। তবে গত কয়েক দিনে চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে যে গতিতে নতুন রোগী বাড়ছে, তাতে কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন দিকে মোড় নেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, উদ্বেগজনক যেসব লক্ষণ আসছে, তাতে মনে হচ্ছে রোগটি ধারণার চেয়ে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পত্রিকাটি বলছে, রোগের তিনটি ধাপ। প্রথমে প্রাদুর্ভাব (আউটব্রেক), তারপর স্থানীয়ভাবে মহামারি (এনডেমিক) এবং সর্বশেষ বৈশ্বিক মহামারি (পেনডেমিক)। পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস তৃতীয় ধাপের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এমনকি এমন অনেক রোগীর সন্ধান মিলছে, চীনের সঙ্গে যাদের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিগগিরই হয়তো ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রোগটিকে এখনও বৈশ্বিক মহামারি বা পেনডেমিক ঘোষণা করেনি।
এই রোগ যাতে অন্যান্য দেশেও মহামারি আকার না নেয়, সে জন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। অবশ্য তিনি এখনও মনে করেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাবে। তবে সুযোগগুলো ক্রমশ কমে আসছে। তাই সুযোগ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপের এশিয়া রিসার্চের প্রধান খুন গো রয়টার্সকে বলছেন, 'এশিয়ার অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করে এই ভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে বেড়েছে, তা আবার উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটা এই রোগ সংক্রমণের নতুন ধাপের দিকে ইঙ্গিত করছে এবং এতে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলবে।'
ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ২৯টি দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চীনের মূল ভূখে র বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা এত দিন ছিল তুলনামূলক কম। অবশ্য চীনের প্রতিটি প্রদেশেই এ রোগের সন্ধান মিলেছে।