ঢাকার অদূরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা রিসোর্টগুলো
শহরে কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, নাকি নিজের কাছে একঘেয়েমি লাগছে। ভাবছেন কি করবেন, কিন্ত ভেবে পাচ্ছেন না। এই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে একটু রেস্ট। কিন্ত এই হিজিবিজির শহরে রেস্ট নিয়ে কি রেহায় আছে?। সমস্ত ক্লান্তির দূরে হয়ে যেতে পারে একটু ভ্রমণে। অফিস, ব্যবসা রেখে কিভাবে সময় করে যাবেন ভ্রমণে। নো চিন্তা, ঢাকা আশপাশে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন পরিবার কিংবা বন্ধুবান্দবীদের নিয়ে। এমন ঘুরে আসার জন্য আমরা আপনাদের এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছি প্রকৃতির আদলে ঘেরে বেশ কিছু রিসোর্টের ঠিকানা। চলনু জেনে নেয়া যাক।
# স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্ট গাজীপুর:
ঢাকার অদুরে গাজীপুরের সালনায় ১২ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্ট’। এ যেনো প্রকৃতির আদলে ঘেরে এক স্বর্গভূমি। একদিনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই রিসোর্টে। যেতে পারেন বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে পিকনিকে। বিয়ের পর হানিমুনে দূরে কোথাও না গিয়ে সময় কাটাতে পারেন এখানেও। এই রিসোর্টটিতে রয়েছে বিশাল এক সুইমিংপুল।
জনপ্রতি ১৫০০ টাকায় উপভোগ করতে পারেন স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্টের সারাদিনের প্যাকেজ। এছাড়াও বিনোদনের জন্যে ভিতরে রয়েছে বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, বিশাল খেলার মাঠ এবং পুকুর। সেই পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছে নৌকা, চাইলে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারেন মাছ ধরেও। একদিনের প্যাকেজে যা থাকছে খাওয়া-দাওয়া, সুইমিংপুল, নৌকা ভ্রমণ সহ আরও অনেক কিছু।
বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: ০১৭৩৪৯৮৫৫৫৪ , ০১৮৭৩-১১১-৯৯৯, ০১৬৮৯-৭৭৭-৪৪৪,
# রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট
গাজীপুরে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে শালবনের ভেতরে প্রায় ৮০ বিঘা জমি ওপর যৌথ ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট। প্রকৃতি আর গাছগাছালি ঘেরে এই রিসোর্টে গেলে মাথা ঘুরে যাবে। কারণ এই রিসোর্টে সম্পূর্ণ বনের মধ্যে নির্মিত। এই রিসোর্টের অন্যতম আকর্ষণ হলো জলাশয়ের ওপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্য-মণ্ডিত ঝুলন্ত সাঁকো আর এর পিলার ও বেলকনিতে খোঁদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ-যা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ভ্রমণ প্যাকেজ: রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে সারাদিন অবস্থান করলে জনপ্রতি একটি রুমের ভাড়া পড়বে তিন হাজার টাকা। এর মধ্যে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাস্তা থাকছে। আর দুইজনের জন্য চার হাজার টাকা। কেউ যদি রাতে অবস্থান করতে চান, তাহলে একজনের জন্য চার হাজার টাকা। সাথে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার। আবার দুইজনের জন্য ছয় হাজার টাকা পড়বে।
যেভাবে যাবেন: গাজীপুর চৌরাস্তা পার হলে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। তার ঠিক বিপরীত দিকের বড় সড়ক থেকে ডানের গলিপথ ধরে গহীন অরণ্যে হারানোর পালা। ভবানীপুর বাজার পেরিয়ে পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে মাত্র ৩.৯ কিলোমিটার দূরে গেলেই দেখা মিলবে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টের।
বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: ০১৯১৯৩১৮০০৯, ০৯৬৮৯১১১৯৯৯
#পদ্মা_রিসোর্ট:
প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের রূপ রহস্যে ঘেরা পদ্মা রিসোর্ট। যেখানে গেলে মনে হবে কোন এক গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্যে আপনি মিশে আছেন! কি ভাবতেই অবাক লাগছে তাই না? এই ভাবছেন যে যান্ত্রিকপূর্ণ এই ঢাকার ভেতর আবার গ্রামের আভাস!
ভ্রমণপিপাসুদের ক্ষেত্রে যারা নদী ও সমুদ্র দেখতে ভালোবাসেন এবং নীলচে পানির সাথে কথা বলতে চান প্রাণ খুলে তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
যেভাবে যাবেন:
নারায়ণগঞ্জ থেকে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পদ্মা রিসোর্ট। নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে দিঘিরপাড় পরিবহন করে মুক্তারপুর ব্রিজে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে সরাসরি আপনি চলে যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্টে। সিএনজিতে ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা নিবে। যেতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা।
ভ্রমণ প্যাকেজ:
এই রিসোর্টে যদি শুধু দিনের বেলা ভাড়া করতে চান, তাহলে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২৩০০ টাকা। আর যদি দিনসহ রাতও কাটাতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ৩৪০০ টাকা। মোট ১৬টি কটেজ। এই কটেজগুলোই মূল আকর্ষণের জায়গা। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা কটেজগুলোতে বেশ আরামদায়ক এবং নিরিবিলি সময় কাটাতে পারবেন।
বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: ০১৭১২১৭০৩৩০, ০১৬৮৯৭৭৭৪৪৪
# নক্ষত্রবাড়ী
গাজীপুরে অবস্থিত বেসরকারি রিসোর্টগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত ‘নক্ষত্রবাড়ী’। নক্ষত্রবাড়ী প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও অতি জনপ্রিয় নাম। প্রকৃতিপ্রেমীদের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঢাকার খুব কাছে একটি রিসোর্ট বানানোর কথা চিন্তা করে অভিনেতা তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত দম্পতি ১৪ বিঘা জমির ওপর ‘নক্ষত্রবাড়ী’ নির্মাণ করেন। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় নক্ষত্রবাড়ীর ।
বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: ০১৮৭৩১১১৯৯৯,০১৯১৯৩১৮০০৯
# নুহাশপল্লী
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ি ও শুটিং স্পট। প্রায় ৯০ বিঘা জায়গা নিয়ে এই নন্দন কাননে আছে একটি ছোট আকারের চিড়িয়াখানা, শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর, দৃষ্টিনন্দন কটেজ, ট্রি হাউস বা গাছ বাড়িসহ আরো অনেক আয়োজন। নুহাশ পল্লীর ভেতরের বিশেষ আকর্ষণ হলো এর ওষুধ গাছের বাগান।
সবমিলিয়ে নুহাশপল্লী একটি ছবির মতো সাজানো-গোছানো এক প্রান্তর, যেখানে গেলে ভালো লাগবে সবার। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিনমাস বনভোজনের অনুমতি মেলে নুহাশপল্লী।
বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ :০১৭১২০৬০৯৭১
# রাঙ্গামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট গাজীপুর
গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত আরেকটি রিসোর্ট ও বনভোজন কেন্দ্র রাঙ্গামাটি। এখানে আছে বনভোজন কেন্দ্র, লেকে মাছ ধরা ও বেড়ানোর ব্যবস্থা এবং কটেজে অবকাশ যাপনের ব্যবস্থা। বিস্তারিত জানতে ফোনঃ০১৮১১৪১৪০৭৪,০১৯১৯৩১৮০০৯ ।
# উৎসব_পিকনিক_স্পট গাজীপুর
ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের হোতাপাড়ার কাছেই এ বনভোজন কেন্দ্রটি। উৎসব পিকনিক স্পটে আছে খোলা চত্বর, কয়েকটি কটেজ ও ট্রি হাউজ। ঢাকার ফুলবাড়িয়া থেকে শ্রাবণ পরিবহনে এসে নামতে হবে হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে। ভাড়া ৩৫ টাকা। সেখান থেকে রিকশায় দশ টাকা ভাড়া উৎসব পিকনিক স্পট পর্যন্ত। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ :০১৭১৩০৪৪৫৯১, ৮৬২৬৩৭৬
# পুষ্পদাম পিকনিক স্পট গাজীপুর
ঢাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার বাঘের বাজারে পুষ্পদাম অবস্থিত। এখানে বিশাল পরিসরে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাহারি গাছের সমাহার। প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল দেবদারু গাছের সারি। এ পথ পেরিয়ে একটু ভেতরে ঢুকলেই রয়েছে ফুলে ফুলে ঘেরা কয়েকটি কটেজ। এখানে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, কৃত্রিম লেক, ঝরনা ও সুইমিংপুল। পর্যাপ্ত রান্নাঘর, টয়লেট ছাড়াও এখানে আছে একই সাথে এক হাজার লোকের খাবারের জায়গা। যোগাযোগ :০১৮১৯২১৬১৫৭।
# ফ্যান্টাসি কিংডম আশুলিয়া
আশুলিয়ার জামগড়ায় গড়ে উঠেছে বিশ্বের আধুনিক সব রাইড নিয়ে বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডম। পাশেই হেরিটেজ পার্কে আছে ঐতিহ্যের পরিপূর্ণ ভাণ্ডার। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই চোখে পড়বে এখানে। এগুলো মূল স্থাপনার অবিকল আদলেই তৈরি করা হয়েছে হেরিটেজ পার্কে। এ জায়গা দুটিতে বনভোজন করার জন্য রয়েছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
ফোনঃ ৭৭০১৯৪৪-৪৯।
# মাওয়া রিসোর্ট
ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার মাওয়া ১নং ফেরিঘাট হতে সামান্য দক্ষিণে মাওয়া-ভাগ্যকুল রাস্তার কান্দিপাড়া গ্রামে নির্মিত এ রিসোর্ট সেন্টারটি যেন প্রকৃতির নৈসর্গিক একটি অন্য রকম পর্যটন কেন্দ্র।। দীঘিতে রয়েছে দুটি বাঁধানো পাকা ঘাট। দীঘিতে ঘুরে বেড়াতে রয়েছে আধুনিক বোট। দীঘির পার ধরে বাম দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার ডানে গেলে হাতের বামে পড়বে একটি ক্যাফেটেরিয়া। পর্যটকদের চাহিদা মতো খাবার পাওয়া যায় এ ক্যাফেটেরিয়ায়। পুকুরের পূর্ব প্রান্তে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে সারি সারি বেশ কয়েকটি কটেজ। পর্যটকদের থাকার জন্য মোট ১১টি কটেজ রয়েছে। ৫টি সিঙ্গেল ৪টি ডাবল ও একটি সুইট রয়েছে এখানে। তৈরি করা হলেও এতে ছাদ না দিয়ে গ্রামের স্বাদ দিতে গোলপাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চাল। বাঁশের চটা দিয়ে নানান আলপনা তৈরি করা সিলিং পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে। ভেতরে আধুনিক আসবাবপত্র, বাথরুম আর টাইলসের মেঝে দেখে মনে হয় এ যেন কোন ফাইভ স্টার হোটেল।
# রিভেরী হলিডে রিসোর্ট
রিভেরী হলিডে রিসোর্ট ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের গাজীপুরের সালনাতে খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে মাত্র ১ ঘণ্টা এবং গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে ৬কিমি দূরে। স্পটটি ন্যাশনাল পার্ক, গাজীপুর, ভাওয়াল রাজবাড়ী এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্থানগুলির কাছাকাছি। ৩ একরের এটি কোন পিকনিকের জন্য একটি সুন্দর জায়গা, কর্পোরেট দিন, সম্মেলন, পরিবার / গ্রুপের দিন, কর্মশালা, তাঁবু, বার-বি-কি পার্টি ইত্যাদি।একটি আধুনিক দ্বৈত বেঙ্গল এখানে আপনার আরামদায়ক এবং বড় সাধারণ রুম, ডাইনিং সুবিধা, আরামদায়ক কক্ষ এবং বিস্তৃত পোড়ামাটির সঙ্গে উপভোগ করে তোলে।
# ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা, গাজীপুর
গাজীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামীণ পরিবেশে সবুজের মাঝে অবস্থিত ভাওয়াল রিসোর্ট। রিসোর্টটি গাজীপুর জেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের নলজানি গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ৬৫ একর জায়গার উপর অবস্থিত এই রিসোর্টটিতে রয়েছে ৫ টি জোন ও ৬১ টি কটেজ। এখানে ৩ ধরণের রুম রয়েছে। ওয়ান বেডরুম ভিলা, ওয়ান বেডরুম সুইট, টু বেডরুম সুইট এ প্রতি রাত হিসেবে যথাক্রমে ১২,০০০; ১৬,০০০ এবং ২৪,০০০ টাকা খরচ পড়বে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা নীরব এবং কোলাহল বিহীন ছায়াঘেরা এই রিসোর্টটিতে মিলবে মানুষিক প্রশান্তি। এখানে রাত্রি নেমে এলে ক্রমে ঝি ঝি পোকার ডাকে মোহাচ্ছন্ন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুনসান নিস্তব্ধ চারপাশ উঁচু উঁচু গাছ পালা দিয়ে ঘেরাও। রয়েছে বিশাল এক সুইমিং পুল।