টঙ্গীতে ত্রানের দাবিতে অসহায় এরশাদনগরবাসীর মহাসড়ক অবরোধ
শেখ রাজীব হাসান, গাজীপুর প্রতিনিধি
টঙ্গীতে ত্রাণের দাবীতে সড়ক অবরোধ করেছে ক্ষুধার্ত এরশাদনগরবাসী। আজ ১০ই এপ্রিল রবিবার সকাল ১১ ঘটিকার সময় এরশাদনগর বাসষ্টান্ড সংলগ্ন ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এরশাদনগরের গরীব, অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। এসময় তাদের হাতে ত্রাণের দাবী করে বিভিন্ন ¯েøাগান লেখা ফেস্টুন দেখা যায়। এরশাদনগরের অসহায় লোকজন খাবারের দাবিতে প্রায় ২০ মিনিট সড়ক অবরোধ করায় ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে জিএমপি সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহাদাত হোসেন ও থোয়াই ওয়াং প্রো মারমা ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকৃত অসহায় লোকজনদের ত্রানের ব্যাবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা নিজ বাড়িতে চলে যায়।
এসময় মহাসড়কে অবস্থানরত এরশাদনগর এলাকার ৩,৫ ও ৬ নং বøকের প্রায় ৩০টি পরিবারের লোকজন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা লকডাউনের কারণে কোথাও কোন কাজে যেতে পারছিনা। আমরা রিক্সা চালাই, রাজ মিস্ত্রির কাজ করে দিন আনি দিন খাই অথচ কাজ করতে না পাড়ায় কোন রকমে মানুষের হাতে পায়ে ধরে বর্তমানে নিজেরা কোন কোন সময় আটার জাও খেয়ে ও শিশু বাচ্চাদের পানি খাওইয়েও রেখেছি।
এখন ক্ষুদার জ্বালায় টিকতে না পেরে কারো ও কাছ থেকে সহযোগীতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। কাউন্সিলর ফারুকের কাছে বহুবার গিয়েও কোন সহযোগীতা পাইনি। কাউন্সিলর তার আত্মীয় স্বজনদের ও মুখ চিনে পরিচিতদের মেয়র ও মন্ত্রীর পাঠানো ত্রাণ সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা খাবার ও অর্থ দিয়েছেন। যাদের খাওয়া ও চলার মতো অবস্থা আছে যারা আত্মীয় তাদেরকে এ খাবার ও ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু আমারা গেলে শুধু শান্তনা ছাড়া আর কিছু পাইনা।
এরশাদনগর ৬ নং বøকের বাসিন্দা শাহানাজ, ফাতেমা, আলো, হাসান উল্লাহ্, খোকন, আনোয়ার, রহিমা, সুমন,হালিমাসহ বহু অসহায় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে। রিক্সা চালক আবদুল হাকিম কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন, আমি কোন রকম রিক্সা চালিয়ে আমার পরিবারের খাবারের জোগান দিতাম। লকডাউন দেওয়ার কারণে এখন কাজ করতে পারছি না। বেশ কয়েকদিন রিক্সা নিজে রাস্তায় বের হলেও গাড়ির জমার টাকা মহাজনকে দিতে পারি নাই। একারণে এখন মহাজন আমাকে গাড়ি চালাতে দেয় না।
আমার চোখের সামনে বউ, ছেলে, মেয়ে ক্ষুদার জ্বালায় ছটফট করছে অথচ আমি তাদের মুখে খাবার এনে দিতে পারছি না। মানুষের ধ্রে দস্রে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে এখন রাস্তায়। কোথাও থেকে কোন সহযোগিতা না পেলে আমার পরিবারের প্রিয় মানুষগুলো ক্ষুদার যন্ত্রণায় না খেয়ে মারা যাবে। আমি জানি আপনারা এখানে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে হয়তো আমাদের মনের জমানো কষ্টের কথাগুলো আমাদের মন্ত্রী ও মেয়র সাহেবের কাছে পৌছাবে। আমরা আজকে যারা রাস্তায় আছি মহান আল্লাহ্ কে স্বরণ করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। এমন হলে করোনা ভাইরাসে নয় না খেয়ে আমাদের মতো অনেক মানুষ মারা যাবে।
এছাড়া ৪৯ নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন এনজিও থেকে আসা অনুদানের টাকা বন্টনে অনিয়ম ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ত্রান সামগী বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কাউন্সিলরের বাড়িতে গিয়ে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ পর তিনি এসে বলেন, কোথাও কেউ আন্দোলন বা মহাসড়ক অবরোধ করেছে তা আমার জানা নাই। আমি আমার ওয়ার্ডের সকলকে ত্রান দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এ পর্যন্ত মেয়রের দেওয়া ত্রাণ থেকে ১০০০ পরিবার ও মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষ থেকে ১০০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ দিয়েছি। মেয়রের পক্ষ থেকে আরো ১৫০০ পরিবারের জন্য ত্রাণ এসেছে যা পর্যায়ক্রমে সকলের মাঝে বিতরণ করা হবে। আমার ওয়ার্ডে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ রয়েছে। সকলকে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না যদি আরো কোন মাধমে ত্রাণ আসে আমি দিবো।