পৈত্রিক ভিটা দান করে দিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী পিছিয়ে পড়া নারীদের কল্যাণে
সুনামগঞ্জে পিছিয়ে পড়া নারীদের কল্যাণে পৈতৃক ভিটে দান করে দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। দলিল করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তাঁর পৈতৃক ভিটা সরকারকে দান করে দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবরে দলিলটি হস্তান্তর করেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক) হাসনাত হোসাইন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে হাওরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মমুখী করার স্বপ্ন নিয়ে তিনি এই ভূমি দান করেছেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এখানে মন্ত্রীর মা আজিজুন নেসার নামে আজিজুন্নেসা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পে এটি অনুমোদনও লাভ করেছে।
জানা গেছে, পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ গ্রাম ডুংরিয়ায় ৪১ শতক জমি রয়েছে। সেই জমি সরকারকে দান করতে পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গত বছর পারিবারিক সম্মতি পাওয়ার পর তিনি বাড়িটি দান করার বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতরে আবেদন করেন। দান করা ভূমিতে মন্ত্রীর মা প্রয়াত আজিজুন নেসার নামে হাওরাঞ্চলের নারীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র কিংবা ইনস্টিটিউট করার স্বপ্নের কথাও জানান তিনি। হাওরাঞ্চলের অসহায়, দুস্থ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, দরিদ্র নারীদের কল্যাণে যাতে দান করা সম্পত্তিতে কোনও প্রতিষ্ঠান হয় সেই কথাও মন্ত্রণালয়কে অবগত করেন। তার স্বপ্নের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাতে হাওরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অসহায় নারীরা বিভিন্ন মেয়াদে অবস্থান করে কম্পিউটার, বুটিক, সেলাইসহ বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিতে পারে সে কথাও আবেদনে জানিয়েছিলেন উল্লেখ করেন তিনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদনও দিয়েছিল। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারও পরিদর্শনে আসেন একাধিকবার। তারা এসে এখানে নারীদের কল্যাণে কী কী করা যায় তার একটি সুপারিশও তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এখানে একটি টেক্সটাইল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদনও দিয়েছে।
মন্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর গত ৭ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এলাকায় এসে সচিব বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুকলে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুমরিয়া মৌজার ১৯১ নং জেএলস্থ আরএস জেএলনং ২৭ নং ভূমির ৪১ শতক ‘আজিজুন নেসা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ডুংরিয়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বরাবরে সচিব বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেন। দলিল নং ৯৩২।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ সরকারের পক্ষে দলিলটি গ্রহণ করেন।
ছোটবেলায় বাবা আরফান উল্লাহকে হারান পরিকল্পনামন্ত্রী। মা আজিজুন নেসা মারা মারা যান ২০১০ সালের ১২ মার্চ। এলাকায় বর্তমানে তিনি শান্তিগঞ্জস্থ নতুন একটি টিনশেডের বাড়িতে অবস্থান করেন। তবে বসবাস করেন ঢাকাস্থ মিনিস্টার অ্যাপার্টমেন্টে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় একজন সজ্জন মানুষ। তিনি তার পৈত্রিক ভিটা মায়ের নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার জন্য দান করে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ দলিলটি হস্তান্তর করেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এটি পাঠিয়ে দেবো।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই এমন মহতী কাজে জমি দান করতে পেরে খুশি। আমার মায়ের নামের এই প্রতিষ্ঠানে যাতে হাওরাঞ্চলের অসহায়, দরিদ্র, বিধবা, দুস্থ, স্বামী পরিত্যাক্ত নারীরা আবাসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই স্বপ্ন দেখছি আমি। নারীরা সেখান থেকে কম্পিউটার, বুটিক, সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হবে। নারীরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি স্বাবলম্বী হতে পারে, সেখানেই আমার সার্থকতা। আমি বস্ত্র পাট মন্ত্রণালয়কে জমিটি দান করে দিয়েছি।
দলিল হস্তান্তর কালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রীর ভাতিজা মনিরুজ্জামান সুজন, ভাগ্নে জাভেদ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ইসলাম শিপন, কৃষক লীগ নেতা মইনুল ইসলাম প্রমুখ।