জাবি ভিসির আনুগত্যের ‘পুরস্কার’ হিসেবে নিয়োগ পেল বিএনপিপন্থী শিক্ষকের মেয়ে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রভাষক হিসেবে স্নাতকে কম ফলাফলধারী এবং তুলনামূলক কমযোগ্যতাসম্পন্ন এক মেয়ে প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগের শোরগোল শুরু হয়েছে। গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগটি পাশ হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, দল ভারী করতে এবং ভিসিবিরোধী আন্দোলনে ‘আনুগত্য’র পুরস্কার স্বরূপ জাবির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সভাপতি অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিমের মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম যিনি বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। বিএনপিপন্থী বেশ কিছু শিক্ষককে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার পক্ষে আনতে ওই শিক্ষকের মেয়েকে সিলেকশন দেয়া হবে বলে এই মেয়ের চেয়ে যোগ্য একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাতকারেও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার তথ্য মতে, প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া এই মেয়ে শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় সুযোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে একই বিভাগে পোষ্য কোটার সুবিধা নেওয়া আরেক শিক্ষার্থীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেটাও ছিল ভিসি ফারজানা ইসলামের দল ভারী করার হাতিয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম ছিলেন ‘জিয়া পরিষদ’র সভাপতি ও ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’একাংশের সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপিপন্থী প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনও করেছেন। তাছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনশনসহ একাধিক কর্মসূচির আয়োজক হিসেবে তাঁকে দেখা গেছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করেন বিএনপি, বাম ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। এমন অবস্থায় অধ্যাপক সেলিম দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভিসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন ও আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এভাবে ভিসিকে সমর্থন দেয়ার ‘পুরস্কার’ স্বরূপ ভিসি তার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন বলে মনে করছেন আন্দোলনকারী ও বিএনপিপন্থী অনেক শিক্ষক।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্নাতকে ৩.৫৬ পাওয়া অধ্যাপক শামসুল আলমের মেয়ের অবস্থান ছিল চতুর্থ। কিন্তু স্নাতকোত্তরে তিনি ৩.৬৭ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এভাবে চতুর্থ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করা নিয়েও বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
তারা দাবি করেন, বিভাগের কয়েকটি ব্যাচের ফলাফল ছিল অনেকটা অনুমিত ও অধিকাংশই পরিকল্পিত। কে ভালো নম্বর পাবে, প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হবে, কে শিক্ষক পদে আবেদন করার যোগ্য ফলাফল অর্জন করবে তা সম্পূর্ণ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে স্নাতকে ৩.৬৭ পেয়ে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরে ৩.৫০ পাননি।
তারা বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সকল শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ায় “বিভাগে আধিপত্য” ধরে রাখতে এবং তাঁদের পছন্দের বাইরে অন্য কেউ যেন আবেদন না করতে পারে সেজন্য ‘নিয়ন্ত্রিতভাবে’ ফলাফল দিতেন।
ভিসির আনুগত্য নয়, বরং যোগ্যতাবলেই তার মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে বলে দাবি করে অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, “তার ফলাফল ভালো ছিলো বলেই সে নিয়োগ পেয়েছে। কম যোগ্য থাকলে সিনেট সভায় তাকে শিক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হতো না।”
এ ব্যাপারে জানতে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের সভাপতি শেখ আদনান ফাহাদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।