এবার করোনাকে হারানোর শপথ বাইডেনের
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার পর করোনা ভাইরাস মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম পরিকল্পনা ঘোষণা করে বাইডেনের শিবির জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানো হবে। নাগরিকদের মাস্ক পড়ার আহ্বান জানানো হবে।
সোমবার (০৯ নভেম্বর) বাইডেন করোনা টস্কফোর্সের ১২ সদস্যের দলের নাম ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় স্বীকার করেননি। সম্ভাব্য ফলাফলে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এখনও ভোট গণনা চলছে।
শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। তারপরই জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে বাইডেন শিবির।
মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্পেরনীতি পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারির পরিকল্পনা করছে বাইডেন শিবির। নির্বাহী আদেশ জারির জন্য কংগ্রেসের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে না।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় অংশগ্রণ করবেন বাইডেন। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন তিনি।
শিশুকালে বাবা-মা’র সঙ্গে কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়াদের অভিবাসী মর্যাদা দিয়ে সাবেক ওবামা প্রশাসনের ড্রিমার্স প্রকল্প পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।
শনিবার বিজয়ী ভাষণে বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে সারিয়ে তোলার সময় এখন। বিভক্তি নয়, ঐক্য গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিরোধীদের প্রতি শত্রুতাপন্ন আচরণ বন্ধ করতে হবে।
বাইডেন এবং নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ইতোমধ্যে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন। বলেছেন, অর্থনীতি, বর্ণবিদ্ধেষ মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনরোধকে গুরুত্ব দেবেন তারা।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী ১৯৯০ সালের পর হেরে যাওয়া প্রথম ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের প্রচারণা শিবির বিভিন্ন রাজ্যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন ভোট গণনায় কারচুপি হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে স্বীকৃতি এবং ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখনো পর্যন্ত তাদের কাজ শুরু করেনি।
জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এমিলি মারফি কার্যক্রম শুরু হবে সে বিষয়ে কিছুই জানাননি। মারফিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি ব্যতিত বাইডেনের ট্রানজিশনাল টিম সরকারি ফান্ড ব্যবহার এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাইডেনের জয়ের প্রতিক্রিয়া জানানো নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। নির্বাচনের ফলাফল জনসম্মুখে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককারথি ফক্স নিউজকে জানান, ভোট পুনগণনা এবং ভোট কারচুপির মামলার মীমাংসা হতে হবে। তারপরই আমেরিকা সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে কে বিজয়ী হয়েছে।
সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিজয়ী বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেন, মার্কিনরা আস্থা রাখতে পারেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে ফলাফল গণনা হয়েছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য ট্রাম্পকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই মহামারির ভয়াবহতাকে উপেক্ষা করেছেন। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকে গুরুত্বহীনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের এমন খেয়ালি আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা বাইডেনের।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক কমিশনার ডেভিড কেসলার এবং সাবেক সার্জন বিবেক মুর্তির নেতৃত্বে করোনা টস্কফোর্স গঠন করা হবে। বাইডেন শিবির জানিয়েছে, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মোকাবিলা করা হবে। সব মার্কিননের জন্য বিনামূলে করোনা পরীক্ষা সহলভ্য করারও ঘোষণা দেয় বাইডেন শিবির।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে চান বাইডেন। তিনি বলেন, মাস্ক হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। জনসমাগম স্থলে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক মার্কিন যাতে মাস্ক পড়ে-সে আহ্বান জানানোর পরিকল্পনা করছেন বাইডেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্যের গভর্নরদের মাস্ক পড়ার নীতি বাধ্যতামূলক করারও আহ্বান জানাবেন তিনি।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জনসম্মুখে সবসময় মাস্ক পড়ে বেরিয়েছেন। যেখানে ট্রাম্প মাস্ক পরিধান বেশিরভাগ সময় এড়িয়ে গেছেন।
রোববারও যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। মোট আক্রান্ত ১ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছে ২ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন সংক্রামকব্যাধী প্রধান অ্যান্তোনি ফাউসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই এতটা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েনি আগে। আসন্ন শীত এবং শরতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
করোনার কারণে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। উৎপাদন বাড়ানো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিশু কেয়ার সাশ্রয়ী করা, বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের মধ্যকার আয় বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।