করুণ কাহিনি ২৮ কিলোমিটার রেলপথের
ফেনী শহর থেকে পরশুরামের বিলোনিয়া সীমান্ত পর্যন্ত চলত একটি লোকাল ট্রেন, দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। ১৯২৯ সালে নির্মিত ২৮ কিলোমিটারের এই রেলপথে বন্ধুয়ার দৌলতপুর, আনন্দপুর, মুন্সির হাটের পীরবক্স, নতুন মুন্সির হাট, ফুলগাজী, চিথলিয়া, পরশুরাম ও বিলোনিয়া নামে আটটি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল।
এখন কেবল আছে ট্রেন লাইন। তাও কোথাও কোথাও নেই। পথিমধ্যে বহু জায়গায় ভঙ্গুর হয়ে গেছে রেললাইনের সেতু, চুরি হয়ে গেছে রেলপথ। রেললাইনের ওপরে উঠেছে বাড়ি। কোথাও আগাছায় ভর্তি। কোথাও কোথাও রেললাইনের ওপরেই সংসার পেতেছে মানুষ।
ফেনী স্টেশনের পরের স্টেশনের নাম বন্দুয়া। এটি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। এখন স্টেশন বলতে ভাঙ্গা, লতাপাতায় ঠাসা কয়েকটি ইটের দেয়াল। এরপরের স্টেশন আনন্দপুর। এই স্টেশনের অবস্থাও শেষ প্রায়। একপাশে টিকেট ঘর, ওয়েটিং রুম। স্টেশন মাস্টারের ঘর, সবই আছে। নেই শুধু মানুষের কোলাহল। দীর্ঘদিন অবহেলা আর অযত্নে থেকে সেগুলো আজ পরিত্যক্ত।
এখান থেকে কিছুটা দূর এগোলেই মুন্সিরহাট বাজার। এই স্টেশন পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে। দেখে চেনার উপায় নেই। সরকারি ভবন, জমি জায়গাও দখল হয়ে গেছে। এই স্টেশনের নাম পীরবক্স হলেও লোকে চিনে পুরাতন মুন্সিরহাট নামেই।
এরপর ফুলগাজী স্টেশন। একটা ব্রিজের এপাশ আর ওপাশে ফুলগাজী উপজেলা ও পরশুরাম উপজেলা। বিলোনিয়া স্টেশন তথা বিলোনিয়া স্থলবন্দর এই পরশুরাম উপজেলাতেই। এরপর চিথলিয়া স্টেশন। এরপর খানিক দূরে পরশুরাম স্টেশন। স্টেশনটির অবস্থা খুবই খারাপ। যেন কোনো অস্তিত্বই যেন। স্টেশন ঘর এখন হয়ে গেছে বাঁশের দোকান।
পরশুরাম থেকে বিলোনিয়া স্টেশনের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। এটি একটি স্থলবন্দর। স্টেশন এখন আর নেই, যা আছে ধ্বংসাবশেষ। এভাবে ভারী হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনের কান্না। একটা রেলপথকে কেন্দ্র করে কীভাবে একটা অঞ্চলের শিল্প সাহিত্য জীবন-জীবিকার বিকাশ ঘটে তার প্রমাণ এই রেললাইন। আবার রেলপথ বন্ধ হলে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সভ্যতা ও জীবিকা কীভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় তারও উদাহরণ এই রেলপথ।
সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব রেলস্টেশন ও রেলপথ পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হোক। বুলেট ট্রেন চলুক। তবে হারানো পথগুলোকেও আবার চেনাপথে নিয়ে আসা হোক।