তুলা আমদানিতে ভারত নির্ভরতা কমছে
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হলেও তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এখন পর্যন্ত তুলা আমদানিতে ভারত নির্ভরশীল থাকলেও আগামীতে নতুন গন্তব্যস্থল হতে পারে আফ্রিকা।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আফ্রিকার তুলা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও এশীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব জানিয়েছেন।
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) গ্রুপের সদস্য ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্সিং কর্পোরেশন (আইটিএফসি) তুলা উন্নয়ন ও পার্টনারশিপ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আইডিবি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং আইটিএফসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যানি সালেম সম্বল, পশ্চিম আফ্রিকার তুলা উৎপাদনকারীরা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিশেন এবং বাংলাদেশের স্পিনিং ও টেক্সটাইল মিল মালিকরা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। কিন্তু প্রধান এই রপ্তানিযোগ্য পণ্যটি উৎপাদনের প্রায় পুরো কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। তবে এতদিন ভারত থেকে মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি করা হলেও আগামীতে নতুন আমদানিস্থল হিসেবে আফ্রিকার দিকে ঝুঁকছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান চাহিদার সিংহভাগই আনা হয় ভারত ও চীন থেকে। কিন্তু তারা সঠিক সময়ে মানসম্মত তুলা দিচ্ছে না। ফলে নতুন পথ খুঁজতে হচ্ছে। এতে ভারত নির্ভরতা কমে আসবে।’
বর্তমানে দেশে বস্ত্রশিল্পের চাহিদা মেটাতে উৎপাদনে রয়েছে প্রায় ৫শ’ সুতাকল। যেখানে প্রতিবছর দরকার হয় গড়ে ৫৫ লাখ বেল তুলা।
সভায় তুলা আমদানিকারকরা বলেন, দেশে প্রতিবছর চাহিদা বাড়ছে প্রায় তিন লাখ বেল হারে। যেখানে দেশের উৎপাদন বাড়ছে মাত্র ১৫ হাজার বেল হারে।
(বিসিএ) সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে আফ্রিকা থেকে কিভাবে আরো বেশি পরিমাণে তুলা আমদানি করা যায় সে জন্যই আজকের এই আয়োজন।
তবে উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে তুলার উৎপাদন বাড়ানো দরকার।
সভা শেষে কমিউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আনিস ফারুক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চাহিদার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। আফ্রিকা থেকে আসছে প্রায় ১০ শতাংশ। ভারত সঠিক সময়ে তুলা পাঠায় না। কয়েক বছর আগে তারা তুলায় ট্যারিফ বসিয়েছে। এছাড়া কখনও কখনও হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে সমস্যায় পড়তে হয়।
তবে ভারত থেকে তুলা আসতে ১৫ দিন সময় লাগলেও আফ্রিকা থেকে আসতে লাগে প্রায় ৪২ দিন। কিন্তু ভারতের চেয়ে আফ্রিকার তুলার মান ভাল বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, তুলার এই আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়ানো দরকার।
স্কয়ার ফ্যাশনের কাঁচামাল বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক তাসলিমুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিভিন্ন ঝামেলার কারণে ভারত থেকে আমদানি কমছে। আগে ৬০ শতাংশের বেশি আমদানি হতো বর্তমানে হচ্ছে ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে আফ্রিকা থেকে প্রায় ১০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তা ৩০ শতাংশে পৌঁছাবে। কারণ উদ্যোক্তারা ভারতের বিকল্প খুঁজছেন।
সভায় হ্যানি সালেম সম্বল বলেন, এই সভা ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ ও নেটওয়ার্কিংয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং পরিকল্পনা, ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড ও বাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ উন্মোচিত করবে।
বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) তথ্যমতে, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে তুলার চাহিদা বেড়ে হবে ৭৬ লাখ বেল। বর্তমানে বিপুল চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ তুলার যোগান আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ফলে বাধ্য হয়েই প্রায় শতভাগ আমদানি করতে হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬২ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) আমদানি বাড়তে পৌঁছতে পারে ৬৪ লাখে।