প্রতিবন্ধী ও দারিদ্রতার কাছে হার মানেনি উম্মে হাবিবা
আল-আমীন সিনিয়র স্টাফ রিপোটার
শিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড।শিক্ষাহীন জীবন অচল। এই কথাকে পুজি করে শিক্ষা অর্জন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিববন্ধী উম্মে হাবিবা।প্রতিবন্ধী উম্মে হাবীবা জীবনের কাছে হার মানতে রাজি নন। কলেজের সহপাঠিরা পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। আর উম্মে হাবীবা পায়ে হেঁটে পথ চলার উপায় নেই তার। বাড়ি থেকে কলেজের পথ প্রায় ৫ কিলোমিটার । অদম্য উম্মে হাবীবা রোজ পায়ে হেটে এভাবেই কলেজে যায়। বিকলাঙ্গ পায়ে না হোক শিক্ষা লাভ করে মানুষ হিসেবে সে দাঁড়াতে চায়। দুর্ভাগা শরীরে তাই সে জীবনের জন্য লড়াইটা জিততে চায়।স্কুল থেকে শুরু করে তার পথ চলা কলেজে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চিৎলা গ্রামে জন্মগত শারিরীক প্রতিবন্ধী উম্মে হাবীবা ছোট কাল থেকে স্কুলে লেখা পড়া করে এখন সে গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের বিএসএস এর ৩য় বর্ষের ছাত্রী।তার পিতা একজন এই গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার।কোন মতে তাদের সংসার চলে দিন পাতে।সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি এই পরিবারের সাহায্য করতে।গ্রাম্য ডাক্তার রাজিবুল ইসলাম রজবের তিন ছেলে মেয়ে তাদের দুই জন দিয়ে মোট পাঁচ জনের অভাবের সংসার ।
উপজেলার চিৎলা গ্রামের রাজিবুল ইসলাম রজবের প্রথম কন্যা উম্মে হাবিবা।আয় রোজগারের সদস্য মাত্র একজন। নুন আনতে পানতা ফুরায় ।পরিবারের প্রথম কন্যা যখন প্রতিবন্ধী তখন শিক্ষার কথা ভাবায় যায় না।
প্রতিবন্ধী হাবিবা বলেন,আমাদেও সংসারে অভাব লেগে থাকতো।অভাব আমাদেও নিত্য দিনের সঙ্গী।জন্মের পর ভেবে ছিলাম আর মনে হয় পৃথিবীতে বাঁচা হবে না। এক বেলা খেতে পাই,পাইনা কখনো পানি খেয়ে, কখনো ভাতের মাড়,এই বুঝি জীবন চক্র। সমস্ত কষ্টকে সুখ মনে ভেবে শিক্ষার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রতিবন্ধী উম্মে হাবীবা লেখা পড়া করে মানুষের কষ্ট দুর করতে চাই ।আমি মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই। তবে স্বপ্ন দেখি ছোট বোনটিকে ডাক্তার করবো এবং আমি লেখা পড়া করে সরকারি চাকুরী করবো।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
২০১১সালে এসএসসি ২০১৩সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সুনামের সাথে পাশ করে।গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের বিএসএস এর ৩য় বর্ষের ছাত্রী
তিনি আরও বলেন,বর্তমান সরকারের কাছে আকুতি যোগ্যতা অনুসারে একটা চাকুরী। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবারের সাহায্যে সমাজের বিওবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
উম্মে হাবীবার পিতা রাজিবুল ইসলাম রজব জানান, ছোট থেকে তার লেখা পড়ার প্রতি ছিল আগ্রহ।তার সামনে কোন কাগজ পড়ে থাকলে তুলে পড়তে লাগতো।সেই থেকে বুঝলাম তার লেখা পড়া আগ্রহ ।আমি অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখা পড়া করাছি।মানুষ যে তাঁর স্বপ্নের চেয়েও বড় কথাটিকে সার্থক রূপ দিয়েছে তার প্রমান আমার মেয়ে। শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাঁর সামনে তুলতে পারেনি বাধার দেয়াল। মাঝে মাঝে পথচারী অথবা কোন সহপাঠির দেখা হলে তারা তাকে পথ পেরুতে সহায়তা করে।
লেখা পড়ায় মনোযোগি। আমরা তাকে লেখা পড়া করাতে চাই। তিনি জানান, প্রতিবন্ধী হিসেবে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি ভাতা পাচ্ছিনা
ওয়ার্ডের মেম্বার কামরুল জানান,মাসে পাঁচ শত টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান কিন্তু তা দিয়ে কিছুই হয় না। প্রতিবন্ধী হিসাবে একটা চাকুরি হলে সমস্যা অনেকটা মিটে যায়।
সহপাঠিরা আছমা খাতুন জানান, উম্মে হাবিবার স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে বলেন,আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকা হতে চাই ।দেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চাই । সমাজের গরিব ছেলে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালাতে চাই ।
গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, উম্মে হাবীবা একজন মেধাবী ছাত্রী। তার লেখা পড়ায় আগ্রহ আছে। কলেজ থেকে তার লেখা পড়ায় সহযোগিতা করছে। অদম্যদের শারিরীক প্রতিবন্ধতা কোন বাঁধা নয়। উম্মে হাবীবা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমরা তার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করি।
গাংনী পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলাম জানান, আমি উম্মে হাবিবার কথা শুনেছি তবে প্রতিবন্ধী হয়ে সে লেখা পড়া করছে এটি বিরল।উম্মে হাবিবাকে দেখে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে ।