গরু বৃত্তান্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোয় ক্যান্টিন ভাঙচুর ও মালিককে মারধর করা হয়েছে। নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার আগে নাস্তা হিসেবে দেয়া ‘তেহারি’ খেয়ে সন্দেহ ও পরে ক্যান্টিন মালিক জাকির হোসেন গরুর মাংস দেয়ার কথা স্বীকার করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে চারুকলার ক্যান্টিনে কখনো গোমাংস দেওয়া হত না।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফেসবুকে লিখেছেন চ্যানেল আই’য়ের নিউজ এডিটর এবং চ্যানেল আই অনলাইন’এর এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান।
‘গরু বৃত্তান্ত’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন,
“একদিন এক ছোট ভাইকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম। নামে যেহেতু সনাতন ধর্মের মানুষ তাই খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, গরু খাও?
— কী কন জুয়েল ভাই! ইঁদুর পর্যন্ত খাইছি।
সে গরু খায়, কিন্তু সবাই খায় না। আমার সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা চাওয়ার পরও আমার মা তাদের গরুর মাংস খেতে দেননি। তাদের মা-বাবার কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে আসতে বলেছিলেন।
শিক্ষাটা এমনই হওয়া উচিত। কাউকে জোর করে গরুর মাংস খাওয়ানোর প্রশ্নই উঠে না।
কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে– চারুকলার ক্যান্টিনে গরুর মাংস নিষিদ্ধ কেন? সেখানে কি এমন ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে না যারা গরুর মাংস খায়!
নিষিদ্ধ থাকায় সমস্যা হয়েছে, যখন তেহারি সার্ভ করা হয়েছে তখন যে গরুর মাংস খায় না তার মনেও প্রশ্ন জাগেনি। ওই ক্যান্টিনে গরুর মাংস নিষিদ্ধ না থাকলে কিন্তু ছেলেমেয়েরা আগেই জিজ্ঞেস করতো, কিসের তেহারি? তাহলে তারা জেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।
আর, ওই ক্যান্টিন ম্যানেজারেরই কেন মনে হলো যে প্রগতিশীলতা মানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গরুর মাংস খাওয়া!
বিষয়টা ইচ্ছাকৃত হলে যেমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে তেমনি ওই ক্যান্টিনে গরুর মাংসের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা সেটাও তুলে নিতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ যেমন ‘ষড়যন্ত্র’ করতে পারবে না (যদি ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে) তেমনি ভুল বুঝাবুঝির অবকাশও থাকবে না।”