গাউছুল আজম (রাঃ) ছিলেন মুসলিম মিল্লাতের পরম হিতাকাঙ্খী ও অভিভাবক -অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ্
গতকাল ২৪ এপ্রিল সোমবার চট্টগ্রাম রাউজান কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইবাদত-বন্দেগী ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রাঃ)’র স্মরণে পবিত্র মেরাজুন্নবী (দঃ) মাহফিল ও সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম (রাঃ) উপলক্ষে ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল। এদিন ফজরের নামাজের পর খতম শরীফ, মোরাকাবা, ঈছালে ছাওয়াব, রওজা জেয়ারত, মিলাদ-কিয়াম ও মোনাজাতের পর খতমে কোরআন ও বুখারী শরীফের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গাউছুল আজম (রাঃ)’র ওরছের কর্মসূচী। কাগতিয়া দরবারের পক্ষ থেকে পূর্ব থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ওরছে কারোর কাছ থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, টাকা, নজর-নেওয়াজ এ ধরণের কোন কিছু নেয়া হবে না, চলবে না শরীয়ত পরিপন্থী কোন কার্যকলাপ, শুধুমাত্র কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণে পালিত হবে যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী গাউছুল আজম (রাঃ)’র সালানা ওরছ। এ লক্ষ্যে দরবারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে একটানা দিন-রাত ব্যাপী নানা কর্মসূচী। আলোক সজ্জিত করা হয় রওজা পাক, মসজিদ সহ পুরো দরবার শরীফ।
ভোর থেকেই টুপি ও তসবিহ হাতে কেউবা পায়ে হেটে, আবার কেউবা গাড়িযোগে দলে দলে কাগতিয়া দরবারে আসতে শুরু করে এ মনীষীর লাখো অনুসারী, ভক্ত, হাজার হাজার আলেম, হাফেজ, যুবক, এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ধর্মপারায়ণ মুসলমান। প্রথমে জেয়ারত করে কোরআন তেলাওয়াত ও তাহলিল আদায় করতে থাকেন হাফেজ ও সাধারণ মুসলমানরা আর আলেমগণ আদায় করতে থাকেন খতমে বুখারী। ছোট শিশুরাও সমবেত হয়ে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করতে থাকে। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। শুধু দেশের নয়, সপ্তাহ জুড়ে বাংলাদেশে আসা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মধ্যপ্রাচ্য, সৌদিআরব, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের শত শত অনুসারী এতে অংশ নেয়। জোহরের পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে এ কার্যক্রম। বিদেশে অবস্থানরত এ মনীষীর অনুসারীরাও বাদ পড়েননি, তারা এদিন স্ব স্ব স্থানে বসে আর মহিলারা নিজেদের ঘরে বসে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন। জোহরের পর রওজা জেয়ারত শেষে শুরু হয় পবিত্র মেরাজুন্নবী (দঃ) ও গাউছুল আজম (রাঃ)’র জীবনী শীর্ষক আলোচনা। এ সময় কাগতিয়া দরবারে তিল ধারণের কোন ঠাই ছিল না। অশ্রুসিক্ত চোখে বক্তারা স্মৃতিচারণ করতে থাকেন আর শ্রোতারা অঝোরধারায় কান্নায় স্মরণ করতে থাকেন এ মনীষীর নানা স্মৃতি, নসিহত। বাদে আছর ফয়েজে কোরআন, জিকিরে গাউছুল আজম মোর্শেদী, বাদে মাগরিব তাওয়াজ্জুহর মাধ্যমে নূরে মুহাম্মাদী বিতরণ, মোরাকাবা ও তবারুক বিতরণের পর বাদে এশা গাউছুল আজম (রাঃ)’র একমাত্র খলিফা মোর্শেদে আজম হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, কালজয়ী মনীষী গাউছুল আজম (রাঃ)’র কথা মানুষ কখনো ভুলবে না। যিনি গত বছর ২৬ রজব মেরাজুন্নবী (দঃ)’র এ দিনে বরকতময় সময়ে সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে প্রিয়নবীর সাথে আল্লাহর দীদারে চলে যান। ইসলামের মহান খেদমতগার, সুন্নাতে মোস্তফার প্রচারক যুগশ্রেষ্ঠ এ মনীষী ছিলেন দেশ, জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের পরম হিতাকাঙ্খী, অতি আপনজন ও অভিভাবক। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ ওলামা পরিষদের সভাপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি, সচিব আল্লামা মুফতি কাজী মুহাম্মদ আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকি, উপাধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ ছিদ্দিকি, মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা মুহাম্মদ এমদাদুল হক মুনিরী, মাওলানা ফরিদ আহমদ ছিদ্দিকী, মাওলানা সেকান্দর আলী প্রমুখ।
মিলাদ, কিয়াম ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম (রাঃ)। এ সময় উপস্থিত সকলের কান্না ও আমিন আমিন ধ্বনিতে চারিদিকে এক শোকের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মোনাজাতে মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্র সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ) ফুয়ুজাত কামনা করেন।