রাজশাহীতে কালবৈশাখীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি
রাজশাহীর অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি আম। আমকে ঘিরে এ অঞ্চলে প্রতিবছর কারবার হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার। কিন’ এবার মৌসুমের শুর্বতেই প্রতিটি গাছের বহু আম ঝরে গেল। এতে নিশ্চিতভাবেই ধাক্কা খেল ফলন। কৃষি বিভাগ বলছে, রোববারের কালবৈশাখীতে ৪ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে চাষিরা বলছেন, ৰতির পরিমাণ আরও বহুগুণ বেশি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলছেন, তারা বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নিশ্চিত হয়েছেন গত রোববারের কালবৈশাখীতে গাছের আম ৪ শতাংশ ঝরে গেছে। অনেক গাছের ডাল এমনকি গাছ পর্যন্ত ভেঙে গেছে। এ কারণে আমের উৎপাদনও চার শতাংশ কমবে। তাই আম উৎপাদনের লৰ্যমাত্রা পূরণ হবে, নাকি ঘাটতি থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
রাজশাহীর ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে এবার আম বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লৰ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ। ঝড়ের আগ পর্যন্ত লৰ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে দার্বণ আশাবাদি ছিলেন স’ানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। কিন’ হঠাৎ কালবৈশাখী ঝরিয়ে দিয়েছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের স্বপ্ন।
ঝড়ের পরদিন দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান মোড়ে কাঁচা আম বিক্রি করছিলেন জুলফিকার আলী (৪৫)। জেলার মোহনপুর উপজেলা থেকে আসা এই আমচাষি জানিয়েছেন, ৪০টি গাছ নিয়ে তার একটি আমের বাগান আছে। রোববার সন্ধ্যায় তার বাগানের গাছ থেকে ১৫ মণ আম ঝরে পড়েছে। বাজারে এনে সেগুলো আচারের জন্য ৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটের আমচাষি মহররম (৩৫) আলী বলেন, ‘এতো দীর্ঘ সময় ধরে ঝড় জীবনে দেখিনি। এই ঝড়ে আমার বাগানের অর্ধেক আম ঝরে গেছে। আমার বাগানের মতো সব বাগানেরই একই অবস’া। ঝড়ে আমের বড় ৰতি হয়ে গেল। এতে চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।’
গাছের ৪ শতাংশ ঝরে যাওয়ার কথা কৃষি বিভাগের পৰ থেকে বলা হলেও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি গাছের প্রায় অর্ধেক আম ঝরেছে ঝড়ে। ঝরে পড়া এসব আমের বেশিরভাগই বস্তায় ভরে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। পাইকারী কাঁচা আম ক্রেতাদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি আম চাষিরা পেয়েছেন মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বাঘা উপজেলার মনিগ্রামের আমচাষি মিজানুর রহমান (৫০) বলেন, বাগানে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আম বেচে সেই টাকাই উঠবে কী না তা নিয়ে এখন তার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব চাষিদেরই একই অবস’া। তাই আমচাষিদের তালিকা করে ৰতিপূরণ দেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি দাবি করেন, যে পরিমাণ আম ঝরেছে, সেগুলো এমনিতেও ঝরতো। এখন পরিচর্যা ভালো করলে উৎপাদনে তেমন ঘাটতি থাকবে না। তারপরেও ৰতিগ্রস্ত আমচাষিদের তালিকা করা হচ্ছে। সে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে চাষিরা ৰতিপূরণ পেতেও পারেন।
গত রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তা-ব চালায় কালবৈশাখী। ঝড়ের সময় পাঁচ মিনিট বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। কালবৈশাখী এসেছিল দৰিণ-পশ্চিম কোণ থেকে। ওই পাঁচমিনিটেই বেশিরভাগ আম ঝরে পড়ে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।